শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

করোনাকালীন গর্ভ ও জন্মদানে করণীয় : অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া ।

Coder Boss / ৬৮১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০

করোনাকালীন গর্ভ ও জন্মদানে করণীয় 

মানুষসহ সকল সন্তান প্রসবকারী স্তন্যপায়ী (স্তনগ্রন্থী বিদ্যমান) প্রাণী প্রাকৃতিক নিয়মে স্বাভাবিক ভাবেই তাদের সন্তান জন্ম দেয়। এটা সৃষ্টি কর্তার অন্যতম সৃষ্টি রহস্য। মূলত জ্ঞ্যান বিজ্ঞানের সকল কার্যাবলী মানব স্বার্থে, প্রকৃতি বিরোধী। যাই হউক সন্তান জন্মদান তথা প্রসব প্রতিটি মায়ের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক কিন্তু অত্যন্ত খুশী ও আনন্দের, যদি কোনোরুপ অঘটন না ঘটে।

যত কষ্টে অর্জন তত বেশী মায়া আর সন্তান প্রসবের চেয়ে কঠিন কষ্ট পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। তাইতো সন্তানের প্রতি মায়ের টানও সবচেয়ে বেশী। নাড়িছেঁড়া ধন যে। স্বাভাবিকভাবে সন্তান মায়ের গর্ভে ৩৬ থেকে ৪১ সপ্তাহ অবস্থান করে। সাধারণত মেয়ে সন্তান মায়ের গর্ভে ছেলে সন্তানের চেয়ে কিছুটা সময় বেশী থাকে। প্রথমবার জন্মদানে মায়ের ভয় কিছুটা বেশী থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিক জন্মদানের অনুভূতি মাকে মহান আত্মবিশ্বাস এবং কৃতিত্ব দেয়। এর মতো অনুভূতি দ্বিতীয়টি আর হয় না।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সন্তান জন্মদান জটিল কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অবস্থা বিবেচনায় উল্লেখযোগ্য জন্মদান পদ্দতিগুলো হলঃ (১) স্বাভাবিক বার্থ  ক্যানেল পদ্দতি – প্রকৃতির পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি জননতন্ত্রের মাধ্যমে ঘটে এবং জন্ম নেয়া শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী থাকে। (২) সিজারিয়ান পদ্দতি- স্বাভাবিক জন্মদানে সময় জটিলতা তৈরি হলে অনেক সময় মায়ের তলপেট এবং জরায়ুর পর্দা কেটে সন্তান বের করে আনা হয়৷ (৩) ভেক্যুয়াম এক্সট্রাকশন পদ্দতি – বার্থ ক্যানেল পদ্দতিতে জন্মদানের সময় কোনো কারণে নবজাতক বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে ভেক্যুয়াম পাম্পের মাধ্যমে তাকে বের করে আনা হয়৷ এই পদ্ধিততে একটি নরম, অনমনীয় কাপ শিশুর মাথায় আটকে দেয়া হয়৷ এরপর ভেক্যুয়ামের মাধ্যমে সেটি টেনে বের করে আনা হয় যা আমরা ৩ ইডিয়ট সিনেমায় দেখেছি। (৪) ফোরক্যাপস  পদ্দতি – স্বাভাবিক জন্মদানে সাধারণত গর্ভধারিণী  মা পর্যাপ্ত  চাপ দিতে না পারলে শিশুর মাথা কনো কারনে বার্থ ক্যানেলে আটকে গেলে বার্থ ক্যানেলে আটকে থাকা শিশুর মাথা বের করে আনতে ফোরক্যাপ্স (বড় দু’টো চামচের মতো দেখতে) ব্যবহার করা হয়।

স্বাভাবিক জন্মদান  

এটি প্রকৃতির ডিজাইন করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা পৃথিবীতে মানবজাতির আগমন থেকে হয়ে আসছে। শাররীকভাবে শক্তিশালী মায়ের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া তলনামুলক সহজ এবং সহজতর করার জন্য একটি সুন্দর নকশা সৃষ্টিকর্তা মা-বোনদের দান করেছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্পর্শে স্বাভাবিক প্রসব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও সুবিধাজনক যা শুধুমাত্র মা ও সন্তানের জন্য নয় বরং বাবা ও পরিবারের জন্য নিরাপদ মাতৃত্বের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা । সাধারণত সন্তান মায়ের গর্ভে ৪১ সপ্তাহ পর্যন্ত অবস্থান করে। শেষ পিরিয়ডের প্রথম দিনটিকে গর্ভধারনের প্রথম দিন ধরে জন্মদানের তারিখ নির্ধারন করা হয়ে থাকে৷ সম্ভাব্য তারিখের ২ সপ্তাহ আগে বা পরে যে কোনও তারিখে সাধারণত প্রসব হয়ে থাকে৷ স্বাভাবিক জন্মদান শুরু হওয়ার ৪টি লক্ষণ রয়েছে, যথা- প্রসব ব্যাথা ও সঙ্গে জরায়ুর সংকোচন, বার্থ ক্যানেলে রক্ত মিশ্রিত তরল পদার্থ বের  হওয়া, জরায়ুর মুখ খুলে যাওয়া এবং পরে পানিপূর্ণ  থলি (যার মধ্যে সন্তানের অবস্থান ছিল) থেকে পানি বের হয়ে আসা। পরবর্তীতে ঐ পথ ধরে সন্তানের আগমন ঘটে।

 

একজন গর্ভবতী মায়ের প্রসব ব্যাথা ছাড়াও অন্যান্য অনেক কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে৷ প্রসব ব্যথা হলে ব্যথার সঙ্গে জরায়ুও সংকুচিত হয়, তখন পেটে হাত দিলে জরায়ু শক্ত অনুভুত হয়। এই ব্যথা একবার বাড়ে আবার কমে৷ এরকম বারবার হতে থাকে ৷ সময়ে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকে এবং দুই ব্যথার মাঝখানে বিরতির সময়ও কমে আসতে থাকে ৷ প্রসব ব্যথা পিঠের দিকে শুরু হয়ে তা ধীরে ধীরে সামনের (নিচের) দিকে এগিয়ে আসে৷ প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে প্রসবকালীন সময় ৮-১২ ঘন্টা এবং পরবরতী সন্তানের ক্ষেত্রে ৬-১০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর সাধারণত ৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে গর্ভফুল (প্লাসেন্টা বা অমরা) বের হয়ে আসে। সৃষ্টি কর্তার কি রহস্য? আমরা তার কোন কোন নিয়ামত কে অস্বীকার করব? তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ প্রথম গর্ভবর্তী মায়ের জন্য সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা এবং পরবর্তী গর্ভবর্তী মায়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ  ১২ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে জন্মদান সম্পন্ন না হলে গর্ভবতীকে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে ৷ আমাদের দেশে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু, মৃত প্রসব ও শিশু মৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ দীর্ঘস্থায়ী প্রসব৷ এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তবে ইদানিং ব্যথামুক্ত এপিডুরাল পদ্দতিতে স্বাভাবিক জন্মদান করা যায়, এক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহযোগীতা প্রয়োজন। তবে মায়ের মধ্যে ইঞ্জেকশনের প্রভাব থেকে যায়।

স্বাভাবিক জন্মদানের সুবিধা 

স্বাভাবিক জন্মদান মা এবং শিশুর জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর যা সিজারজনিত জটিলতা এবং সিজারের জন্য দেয়া অবশকারী ইনজেকশন এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মা মুক্ত থাকে। তাছাড়া ভ্যাক্যুয়াম, ফোরক্যাপস ইত্যাদি ব্যবহার করলে অনেক সময় সন্তানের শাররীক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে, যা স্বাভাবিক জন্মদানে হয় না। স্বাভাবিক জন্মের ক্ষেত্রে, শিশুটিকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের কোলে দেওয়া হয়,ফলে মা ও সন্তানের মধ্যে অবিলম্বে সুন্দর ও স্থায়ী বন্ধন তৈরি হয়। মা এবং সন্তানের মধ্যে অতিবাহিত প্রথম কয়েক মিনিট হল শিশুটির বাইরের বিশ্বের সাথে প্রথম বন্ধন। গর্ভের নিরাপত্তার বাইরে এসে বিশ্বের সাথে বাচ্চাটির আতঙ্কজনক অভিজ্ঞতার পরে, মায়ের কোল ও কণ্ঠস্বর তাকে আশ্বস্ত করে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর বাচ্চার কান্না আমাদের আনন্দ দেয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর নিকট পৃথিবীর নতুন পরিবেশই (অত্যন্ত ঠাণ্ডা অনুভুতি) শিশুর কান্নার কারণ।  স্বাভাবিক জন্মদান শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্বাভাবিক জন্মদানে দুধ উৎপাদনকারী হরমোন ক্ষরিত হয়ে মায়ের দুগ্ধ নিঃসরণ অব্যহত রাখে। কোনরূপ অস্ত্রপাচার না হওয়ায় মায়ের দেহ দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং মায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সর্বোপরি অতিরিক্ত খরচ ক্ষমায়।

 

অস্বাভাবিকতা সিজারে জন্মদান 

প্রকৃতির নিয়মের চেয়ে মানুষের তৈরি নিয়ম কখনোই ভালো হতে পারে না। তবে যখন স্বাভাবিক জন্মদান সম্ভব নয় বা স্বাভাবিক জন্মদানে মা বা বাচ্চার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবের বিকল্প সিজার বা অন্য কোন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কেবলমাত্র চরম ক্ষেত্রেই যেমন গর্ভস্থ শিশুর বৃহৎ মাথা, গর্ভবতী মায়ের প্রসবের রাস্তায় টিউমার থাকা, গর্ভবতী মা স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল হলে, শিশু গর্ভে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করলে, শিশুর মাথা জরায়ু মুখে না থেকে উপরে থাকলে, প্রসব পথে নাড়ি বেড়িয়ে আসলে, প্রসবের আগে রক্তক্ষরণ হলে, নির্ধারিত সময়ে স্বাভাবিক প্রসব না হলে, আগে থেকে পানি ভেঙে গেলে, শিশুর ওজন বেশী হলে, গর্ভকালীন শিশুর শ্বাসকষ্ট হলে, গর্ভফুল জরায়ু মুখ ঢেকে রাখলে, গর্ভে জমজ সন্তান থাকলে, মায়ের মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিকস থাকলে এবং মায়ের খিচুনি হলে সিজার করা জরুরী। বর্তমানে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে ও দেরিতে সন্তান নেয়ার ইচ্ছাও স্বাভাবিক জন্মদানে সমস্য সৃষ্টি করে, ১ম সন্তান মায়ের বয়স ৩০ এর মধ্যে হলে ভাল। শিক্ষিত চাকুরী জীবিদের ক্ষেত্রে সিজারের মনোভাব বেশী। অতিমাত্রায় প্রয়োজন ছাড়া সিজারে জন্মদান না করাই ভালো। সিজারিয়ান শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, মানসিক সমস্যা, দুর্বলতা, ডায়বেটিস, ক্যানসার, অ্যাজমা ও বিভিন্ন অ্যালার্জি হওয়ার ঝুঁকিও বেশি৷  তবে কিছু পরিস্থিতি চলে আসে যখন মা স্বাভাবিক জন্মদানে এর প্রেশার টা নিতে পারে না তখন সিজারে যেতেই হয়। যদিও অনেকে প্রসব ব্যাথা এড়াতে এবং বার্থ ক্যানেল এর প্রসারতা ঠেকাতে স্বেচ্ছায় সিজারিয়ান পদ্দতি বেছে নেন৷ মনে রাখবেন ১টি সিজার মানে মাকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া। কারন মায়ের  তলপেট এবং জরায়ুর পর্দা আড়াআড়িভাবে ৩-৫ ইঞ্চি পর্যন্ত কাটতে হয় যা মায়ের দেহকে ২ ভাগে ভাগ করার মত। অনেক সময় ইনফেকশন হয়ে থাকে। তাছাড়া সিজারের আগে যে অবসকারী ইঞ্জেকশন দেয়া হয় তার প্রভাব মায়ের নানারকম শাররীক জটিলতার সৃষ্টি করে, ফলে মায়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম ও স্বাভাবিক জীবন যাপনে স্বাভাবিক থাকতে কষ্ট হয়। তাই সিজারিয়ান মায়ের বিশেষ যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

সিজারিয়ান জন্মদান আসলে কতটা জরুরি? স্বাভাবিক জন্মদানের জটিলতার জন্য যে সিজার করা হয় তা সাধারণত প্রায় ৮-১০%। আমাদের দেশে সিজারিয়ান জন্মদানের হার প্রায় ৩০% যার বিশাল অংশ শহর কেন্দ্রিক। বাংলাদেশে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সম্পাদিত প্রসবের ৮৩% আর সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৩৫% সিজারে হয় এবং এখনো ৫০% এর বেশি প্রসব বাড়িতে হয়। আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা একবার সিজারে সন্তান হলে পরবর্তী প্রতিটি প্রেগনেনসিতে সিজার লাগবে, কিন্তু দেখা গেছে ১ম সিজারের পরও ৯০% মায়েরা পরবর্তী প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক প্রসবের জন্য উপযুক্ত, যাদের ৬০-৮০% মায়ের কোন সমস্যা ছাড়াই সিজারের পর স্বাভাবিক প্রসব হয়। তবে এক্ষেত্রে প্রসবের পূর্বে কিছু বিষয় যেমন পূর্বে সিজারের কারণ ও সংখ্যা, পূর্বের সিজার স্থানের দৃঢ়তা,  ২ প্রসবের মধ্যে ব্যবধান, পূর্বের সিজারে ইনফেকশন ইত্যাদি লক্ষ্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ জনবল,  মা ও বাচ্চার মনিটরিং এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এবং বার্থ ক্যানেল জন্মদানে মায়েদের ভয় ও অনিচ্ছা জন্য আমাদের দেশে সিজারের পর স্বাভাবিক জন্মদান সাধারণত প্র্যাকটিস করা হয় না। বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালের অর্থলিপ্সা, সরকারী অব্যবস্থাপনা, ডাক্তারদের অনৈতিকতা এবং গর্ভবর্তী মা ও তার পরিবারের অজ্ঞতা ও অনিহায় বাংলাদেশে সিজারে জন্মদান বাড়ছে। অসাধু প্রতারক চক্রে ‘’প্রথম বারের ফাঁদে মা’’-ভয় দেখিয়ে প্রথম প্রসব সিজারে করালেই পরবর্তী জন্মদানে অনেকটা বাধ্য হয়েই সিজারে যেতে হয়। দেখা গেছে, বাড়িতে প্রসবে গড়ে খরচ প্রায় ১৫শ টাকা, সরকারি ইনস্টিটিউশনে প্রায় ৭  হাজার টাকা আর সিজারে প্রায় ২১ হাজার টাকা লাগে। আশ্চর্যের বিষয়, দেখুন এই করোনা সময়ে সিজারে জন্মদান সংখ্যা খুবই কম।

 

গর্ভকালীন করণীয়

গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা আমাদের পরিচর্যায় থাকুক। একজন মা গর্ভবর্তী হওয়ার পর থেকেই তাকে সতর্কতার সাথে কিছু রুটিন মেনে চলতে হয় যা সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর সন্তান ও স্বাভাবিক জন্মদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মানসিক সাহসিকতা ও প্রস্তুতি। স্নায়ুকে শান্ত রেখে আরামে থাকার চেস্টা করতে হবে। আপনি যে ভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেভাবে থাকুন। যার মাধ্যমে আপনার মন ভাল থাকে সেভাবেই থাকুন। স্বাভাবিক কাজকর্ম, ধীরস্থিরে হাঁটা চলাফেরা করা ও নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা উত্তম। নিয়মিত গোসল ও ডায়েট চার্ট মেনে পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করা জরুরী। চ্যাপ্টা আরামদায়ক জুতো পরুন, বাথ রুমে সাবধানে যাতায়াত করুন। নির্দিষ্ট সময়ে পরিমাণমতো খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি (৩-৪ লিটার) গ্রহণ করা প্রয়োজন। দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় ভালো মতো ঘুম ও বিশ্রাম বিশেষ প্রয়োজন। ধূমপান ও মদ্যপান থেকে থাকতে হবে। কোন খাবারে এলার্জি থাকলে তা পরিহার করা উচিৎ। মনে রাখবেন, একজন সুস্থ মা-ই একজন সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই গর্ভপাত না হয়। আমাদের দেশের রাস্তাঘাট, রিক্সা, সিএনজি গর্ভপাতের অন্যতম কারণ। ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত চেকাআপ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একাধিক ডাক্তার ও ভিন্ন জায়গায় একাধিক চেকআপ করা ভাল।

 

প্রসব কালীন প্রস্তুত

কোল আলো করে নিষ্পাপ, ফুটফুটে মিষ্টি সন্তানের কুট্টুস মুখের কথা চিন্তা করে প্রসব যন্ত্রনা সহজ করতে আপনার মানসিক প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সব মাকেই মনে রাখতে হবে যে, স্বাভাবিক প্রসব কষ্টসাধ্য হলেও এটি মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই অত্যন্ত উপকারী। আরেকটা কথা, মা হতে চাইবেন আর মা হওয়ার ব্যথা সহ্য করবেন না, তা কি করে হয়? তবে মায়ের  প্রসব ব্যথা সহ্য করার মানসিক প্রস্তুতিতে পরিবারের উৎসাহ ও সহযোগীতা অতি জরুরী। প্রসব সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা বৈজ্ঞানিকভাবে হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, প্রসব ব্যথা উঠানোর জন্য কোন ঔষধ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষার পর ব্যথা না উঠলে দুশ্চিন্তা না করে ডাক্তারের তত্তাবধায়নে ইন্ডাকশনের মাধ্যমে ব্যথা উঠানো সম্ভব। বাসা বাড়িতে প্রসবের ক্ষেত্রে একটা সুন্দর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থান ঠিক রাখুন। মাটিতে নয়, খাটে। প্রসবের সময় সেখানে পৌঁছান। প্রসব কাজে অভিজ্ঞ নার্স বা মহিলাকে উপস্থিত রাখুন। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন জীবাণুমুক্ত সুতা, ব্লেড, কাপড়, খেতা, জীবাণুনাশক, ব্লাডগ্রপ জেনে রক্তের ব্যবস্থা (প্রয়োজনে) ইত্যাদি আগ থেকে ঠিক করে রাখুন। নিজেকে শান্ত রাখতে শ্বাসের ব্যায়াম করুন। একই ভাবে না থেকে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করুন। অন্য কেউ পিঠে মালিশ করে দিলে ব্যথার প্রভাব কমে। নিয়মিতভাবে শ্বাস নিতে থাকুন। ব্যথার কথা না ভেবে আপনার সন্তানের সুন্দর মুখটি চিন্তা করুন এবং শিশুকে ঠেলে বের করার চেষ্টা ছাড়বেন না, আপনার সাহায্যেই শিশুর পৃথিবীতে আগমন হবে। প্রসব সহজ করতে অনেক সময় বড় গামলা কসুম গরম পানি দিয়ে পূর্ণ করে সেখানে গর্ভবর্তী মা অবস্থান করতে পারেন ও সন্তান জন্ম দিতে পারেন।

 

প্রসব পরবর্তী সন্তান ও মায়ের যত্ন

প্রসব পরবর্তী প্রথম কাজ হল মা আর সন্তানের সংযোগকারী নাড়ী কেটে সন্তান কে আলাদা করা। শিশুকে ভালো করে পরিস্কার করে টাওয়েল দিয়ে প্যাচিয়ে মায়ের বুকে দেয়া ও  মায়ের শরীরে উৎপাদিত ঘন, ফ্যাকাশে হলুদ দুধ (শাল দুধ/কোলস্ট্রাম) শিশুকে খাওয়ানো। শালদুধ খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরী কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি থাকে এবং এটি শিশুর প্রথম প্রতিরক্ষাক। মায়ের দুধের বিকল্প নেই যা শিশুর প্রাথমিক বিকাশের জন্য বাধ্যতামূলক যা রোগ প্রতিরোধকারী। একান্তই কোন কারনে মায়ের  দুধ দিতে না পারলে শিশুকে বাচানোর জন্য টিনজাত দুধ দিতে হয়। প্রসবের পরে মায়ের শারীরিক যা যা ক্ষতি হয়, সেগুলো পূরণের জন্য এবং সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর সার্বিক পুষ্টির জন্য মায়ের সঠিক পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ঘুম বিশেষ প্রয়োজন। মনে রাখবেন, একজন সুস্থ মা-ই কিন্তু একজন শিশুকে সুস্থভাবে বড় করে তুলতে পারে। তাই আপনার স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা শিশুর মতোই মূল্যবান। পারিবারিক সহযোগীতার বিকল্প নাই।

 

সর্বক্ষেত্রে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে যোগাযোগ রাখা ভাল। ডিজিটাল সময়ে সব কিছু হাতের মোটয় (ইন্টারনেট)। সুস্থ সন্তান পৃথিবীতে আলো হয়ে আসুক সৃষ্টি কর্তার কাছে এই হউক প্রার্থনা। আমদের নবাগত শিশুদের মাঝে স্বাগতম।

 

 

LOVE YOU MOM

 

আপনি যখন আপনার মায়ের গর্ভে ছিলেন তখন আপনার মায়ের হাড়, মাংস, শিরা-উপশিরা কেমন ছিল তা চিত্রটি দেখে মায়ের কষ্ট অনুভব করুন। আপনার মা আপনাকে তার গর্ভে ১০ মাস ধারন করেছেন। তিনি মাসের পর মাস অসুস্থতায় কাটিয়েছেন। তার পা ফুলে গিয়েছিল। ত্বক ফেটে গিয়েছিল। কস্টে তার চোখে কান্না আসত।  সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে তার কষ্ট হত। কষ্টে তার ঘুম আসত না, তিনি অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। তিনি অসহ্য প্রসব ব্যথা সহ্য করে আপনাকে পৃথিবীতে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি আপনার সেবিকা,রাঁধুনি,গৃহকর্মী, তত্ত্বাবধায়ক,চিকিৎসক, শিক্ষক,বড় শুভাকাঙ্ক্ষী,খুব ভাল বন্ধু এবং আপনার সবচেয়ে বড় বিশ্বাস স্থল। তিনি আপনার জন্য জীবন সংগ্রামের সবচেয়ে সাহসী সৈনিক। আপনার লালন পালনকারী যিনি সব সময় আপনাকে সবচেয়ে ভালটাই দিয়েছেন। আপনার জন্য সর্বদা প্রার্থনা করেছেন। মা-ই একমাত্র সন্তানের জন্য জীবনের আশীর্বাদ,ইহকাল ও পরকালের জান্নাত/স্বর্গ। একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করে দেখুন ত আপনি আপনার বাবা মায়ের জন্য কি করেছেন? আর এখন করোনাকালে আমরা দেখি সন্তান তার অসুস্থ বাবা মাকে রাস্থায় জঙ্গলে ফেলে চলে যায়, মরলে দাফন করতেও আসেনা। জয় হউক মানবতার। আসুন না সবাই মা বাবাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলি আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন