প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ও সম্পদে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের একটি অনন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সিলেট সরকারি কলেজ’। মেধা-মনন, চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুশীলনের এক বিকাশমান বিদ্যাপীঠ। জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সমভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সৃষ্টি করে চলছে। জন্ম দিয়েছে অনেক বরেণ্য ব্যক্তির। সৃজনশীল-মননশীল ও প্রজ্ঞাবান অধ্যাপকবৃন্দের ব্যক্তিত্বর প্রভায় শিক্ষার্থীদের অন্তর-আত্মা আলোকিত হয়ে উঠেছে। আর তারা শিক্ষা, সাহিত্য- সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানের আলোকে আধুনিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে।বিশালত্ব স্হান জুড়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।৩টি পুরাতন বিশাল ভবনসহ রয়েছে গ্রন্থাগার,প্রশাসনিক ভবন ও ছাত্র কমন রুম।শিক্ষার উন্নতমানের জন্য রয়েছে ছাত্রাবাস ও ছাত্রী হল।এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্যে লালিত শোভা।রয়েছে সবুজ ক্যাম্পাসে বাঙালির ঐতিহ্য ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন নিদর্শন স্মৃতিসৌধ।এবং ভাষা শহীদদের স্মরণে চমকপ্রদ নির্মিত শহীদ মিনার।শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে সবুজ ক্যাম্পাসে রয়েছে বিশাল একটি শরীর চর্চার জন্য খেলার মাঠ।এছাড়াও রয়েছে কলেজ অধীনস্থ ক্যাম্পাসে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ।
১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটির নামকরণ করা হয়েছিল মুরারি চাঁদ উচ্চমাধ্যমিক মহাবিদ্যালয়, সিলেট। ১৯৬৬ সালের জুলাই থেকে মানবিক ও বাণিজ্য শাখা নিয়ে কলেজের যাত্রা শুরু এবং পরবর্তীকালে বিজ্ঞান শাখা চালু হয়। কলেজটি জন্ম লগ্ন থেকে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কলেজটিতে কো এডুকেশন চালু থাকায় নারী শিক্ষা প্রসারে কলেজটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
১৯৮৮ সাল থেকে স্নাতক পর্যায়ে বি.এ, বি.এস.এস ও বি.বি.এস কোর্স চালু করা হয়। বিগত ৩১.১২.১৯৮৮ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এক আদেশ বলে মুরারি চাঁদ উচ্চমাধ্যমিক মহাবিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘সিলেট সরকারি কলেজ’।১৯৬৪ সালে জন্মলগ্ন থেকে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক,ডিগ্রি ও স্নাতক (সম্মান) কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৫৫০জন।তাঁরই বিপরীতার্থে রয়েছেন শিক্ষক বাংলা-২জন,ইংলিশ-২জন,ম্যাথ-২জন,ফিজিক্স-৩জন,কেমিস্ট্রি-৩জন,বোটানিক-১জন,প্রাণিবিদ্যা-১জন,অর্থনীতি-২জন,সাংস্কৃতি-১জন,শারীরিক শিক্ষা-১জন,রাষ্ট্রবিজ্ঞান-২জন,ফিন্যান্স-১জন,হিসাব বিজ্ঞান-২জন,যুক্তিবিদ্যা-১জন,ইসলাম শিক্ষা-২জন ও ভূগোল-২জন শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত।
গেলো বছরে কৃতিত্ব ও সাফল্যের সাথে রিটায়ার্ড হন প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রাক্তন অধ্যক্ষ জনাব আতাউর রহমান স্যার।বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন জনাবা নাসিমা হক খাঁন। সিলেট সরকারি কলেজের ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রেখে এবং পরিধি আরও বিস্তৃত করণের লক্ষ্যে বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা একটি মাস্টার পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে।এরই ধারাবাহিকতায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পূণ্যভূমি সিলেটের কৃতী সন্তান-শিক্ষা পরিবারের সর্বোচ্চ অভিভাবক জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ এম.পি মহোদয় তিনবার কলেজ পরিদর্শনে এসে একনেকের অনুমোদনে ১০তলা একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, ছাত্রাবাস, ছাত্রীহল, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন এবং কলেজ অডিটোরিয়াম আধুনিকায়নের জন্যে ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বরাদ্দ দিয়েছেন। যা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন আছে।
২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে ০৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। বিষয়গুলো হল বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা এবং হিসাববিজ্ঞান। আরও ০৪টি নতুন বিষয়ের অনার্স কোর্স চালুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিষয়গুলো হল ইংরেজি, ভূগোল, দর্শন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। বিএসসি (পাস) কোর্স চালুর প্রক্রিয়াধীন আছে। উপাধ্যক্ষ পদসহ নতুন ২৫টি পদ সৃজনের বিষয়টিও মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। কলেজের প্রশাসনিক এবং পরীক্ষার কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে সু-সম্পাদনের জন্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে কলেজের জন্যে প্রায় ৪৩,০০০০০/- টাকা ব্যয়ে একটি হাইয়েস গাড়ী ক্রয় করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সিলেট সরকারি কলেজে ডায়নামিক ওয়েবসাইট চালুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিলেট সরকারি কলেজের সামগ্রীক উন্নয়নে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা এবং বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে সিলেট সরকারি কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীবৃন্দ শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের নিকট চিরকৃতজ্ঞ। সিলেট সরকারি কলেজ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও সাহিত্যাঙ্গনে সগৌরবে সাফল্যের যাত্রা অব্যাহত রেখে চলেছে।
কলেজের সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও সাফল্যের লক্ষ্যে স্চ্ছোসেবী হিসেবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে আদর্শবাদী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ইসলামী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ আঞ্জুমানে তালামীযে ইসলামিয়া।
প্রিয় প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও সাফল্য কামনা করছি ।এবং সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি ।
জয় হোক শিক্ষার
জয় হোক শিক্ষার আলো পাওয়া মানুষের।
লেখক
মোঃজাহিদ হাসান তালুকদার
সিলেট সরকারি কলেজ
৩য় বর্ষ বাংলা অনার্স।