সোহেল আহমদ সাজু , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দুই দফা বন্যায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। চরম বিপাকে পড়েছেন হাওর এলাকার গবাদি পশুর মালিকরা। যেখানে নিজেরাই পানির মধ্যে ভাসমান অবস্থায় আছেন, সেখানে গবাদি পশু কিভাবে লালন পালন করবেন এই চিন্তাই তারা ভেঙ্গে পড়েছেন। হাওর এলাকায় এবারের বন্যায় অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ উঁচু স্থানে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে গো-খাদ্যের চরম সংকটে ভুগছেন গবাদি পশুর মালিকরা। দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি এসব গবাদি পশুদের জন্য সরকারি ভাবে এখনও কোন গো-খাদ্য সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বন্যা কবলিত গবাদি পশুর মালিকরা।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, পানিবন্দি প্রতিটি গবাদি পশুর জন্য দিনে দেড় কেজি দানাদার খাদ্য ও ৫ কেজি খড়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু উপজেলার পানিবন্দি কয়েক হাজার গবাদি পশুদের জন্য তা দেয়া হয়নি।
মঙ্গলবার বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাওর এলাকার মানুষজন তাদের গবাদি পশু নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্টান ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেরা খোলা আকাশের নিচে থাকলেও গবাদি পশুদের পলিথিন কাগজ দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। স্থান না থাকায় অনেকে আবার গবাদি পশু খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টির মধ্যে রেখেছেন। দিনরাত পরিশ্রম করে পালন করা এসব গবাদি পশু চুরি কিংবা হারানোর ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মালিকরা। কিন্তু বন্যার পানি থেকে নিজেদের গবাদি পশু রক্ষা করতে পারলেও গো-খাদ্য সংকটের কারণে এসব পশুর জীবন রক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
গোলাবাড়ী গ্রামের খসরুল আলম, মন্দিয়াতা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজব উস্তার জানান, ২০০৪ এর বন্যা থেকেও এবার বেশী পানি হয়েছে। টাঙ্গুয়া হাওরের ঢেউয়ে বাড়ী ঘর তছনছ করে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ ভয়ে বউ-বাচ্চা, গরু- বাছুর নিয়া উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেরা কোনও রকম দুই বেলা খাবার খেলেও গবাদি পশুর খাবার জোগার করতে পারছেন না গ্রামের লোকজন। চারদিকে পানি আর পানি, কোথাও ঘাস নেই। গবাদি পশু নিয়ে খুব কষ্টে আছেন মালিকরা।
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য নুরুল আমীন ও কয়েকজন গবাদি পশুর মালিক জানান, বন্যার এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তারা কোনও গো-খাদ্য সহায়তা পাননি। উপজেলার বাদাঘাট বাজার থেকে বেশী দামে খড় এনে দিনে দুই বার খাবার দিচ্ছেন গবাদি পশুদের। চারদিকে পানি থাকায় গবাদি পশুর জন্য প্রাকৃতিক কোন খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন না তারা।
শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম বলেন, এবারের বন্যায় সারা উপজেলা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় এলাকার বেশিরভাগ পরিবার তাদের গবাদি পশুর খাবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। এখন পর্যন্ত উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে এক প্যাকেট গো-খাদ্যও সরবরাহ করা হয়নি।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. উৎপল সরকার বলেন, এ উপজেলায় বন্যায় গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের বিভাগ থেকে গবাদি পশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। গবাদি পশুর খাদ্য সরবরাহের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের কাছে কিছু খাদ্য সামগ্রী এসেছে। এখনও তা বিতরণ করা হয়নি।
তবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে ইউএনও মহোদয়ের নেতৃত্বে উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে তা বিতরণ করা হবে।