রাজা মিয়া বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বঙ্গবন্ধুর খুনি চক্রের হোতা খন্দকার মোস্তাক সিলেটের মাটিতে প্রথমবার আক্রমণ ও প্রতিহতের শিকার হয়েছিল। ওই ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক বহাল তবিয়তে ছিলেন। সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। কথিত ডেমোক্রেট লীগ গঠন করে ওই সংগঠনের সভাপতি হন তিনি। ওই সংগঠনের ব্যানারে মোস্তাক দেশব্যাপী ঘুরে বেরালেও কোথায়ও বাধার সম্মুখিন হননি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খন্দকার মোস্তাক ঘুরে বেড়ানোর কারণে বাধা দেয়ার সাহস পাননি কেউ।
দীর্ঘ ৯ বছর পর ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে খন্দকার মোস্তাক সিলেট নগরীর আলীয়া মাদরাসা মাঠে জনসভার আয়োজন করেন। ডেমোক্রেট লীগের ব্যানের ওই জনসভার ডাক দেয়া হয়। ক্ষমতায় ছিলেন এইচএম এরশাদ।
ওই খবর পাওয়ার পর এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ পরিকল্পনা নেন ওই জনসভা পণ্ড করে দেবেন। প্রয়োজনে রক্তের বিনিময়েও খুনি মোস্তাককে সিলেটে জনসভা করতে দেবেন না। ওই সময় মিসবাহ সিরাজ ছিলেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি।
মিসবাহ সিরাজ জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে খুনি মোস্তাককে প্রতিহত করার বিষয়টি জানিয়ে দেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি একটি ছক আঁকেন। ছক অনুয়ায়ী আগেভাগেই ঘোষণা দেন মোস্তাককে প্রতিহত করার।
জনসভার দিন খন্দকার মোস্তাক আলীয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত মঞ্চে উঠেন। মঞ্চে উঠা মাত্র মিসবাহ সিরাজের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে খন্দকার মোস্তাকের উপর জুতা নিক্ষেপ শুরু করেন। এর পরপরই শুরু হয় হামলা। খন্দকার মোস্তাককে বেদম মারপিট করা হয়। মারপিটে ব্যবহার করা হয় জুতাও। ভাঙচুর করা হয় মঞ্চ। এক পর্যায়ে মঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
দীর্ঘ নয় বছর পর দুসাহসী মিসবাহ সিরাজের নেতৃত্বে খন্দকার মোস্তাককে প্রতিহত করা হয় সিলেটে। এখানেই শেষ নয়। জনসভাস্থল দখল করে ওইস্থানে মিসবাহ সিরাজের নেতৃত্বে সভা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী চক্রের হোতা মোস্তাককে মারপিট করে বীরদর্পে বাসায় ফেরেন মিসবাহ সিরাজ। মানসিক প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু শেষ রাতে পুলিশ ঘেরাও করে ফেলে মিসবাহ সিরাজের বাড়ি। পুলিশ আটক করেন মিসবাহ সিরাজকে। সেখান থেকেই নির্যাতন শুরু হয়। বেদম নির্যাতনের পর কারাগারে বন্দি করা হয়।
মিসবাহ সিরাজ দীর্ঘ ১৭ মাস কারাবন্দি ছিলেন। ছিলেন অন্ধকার কক্ষে। সেখানেও নির্যাতন হয়েছে মিসবাহ সিরাজের উপর। কারাগারে বন্দি রেখে নানান লোভ লালসা দেখানো হয়েছে। কিন্তু মিসবাহ সিরাজ এক চুলও সরে দাঁড়াননি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
মোস্তাককে প্রতিহত করার কথা বলতে গিয়ে মিসবাহ সিরাজ বলেন, সেদিন তিনি মোস্তাককে প্রতিহত করতে গিয়েছিলেন জীবন সপে দিয়ে। জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনা তা ছিল সন্দেহের মধ্যে। মহান সৃষ্টিকর্তা বাঁচিয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন ছাত্রলীগ পরিকল্পনা নেয় মোস্তাককে কোনোভাবে সিলেটের মাটিতে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। সমাবেশের দিন মোস্তাক আলীয়া মাদরাসা মাঠের মঞ্চের উঠতেই হামলা শুরু করি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোস্তাককে বেদম মারপিট শুরু করে। পরে পুলিশ ও বিডিআর উদ্ধার করে মোস্তাককে। জ্বালিয়ে দেয়া হয় মঞ্চ। সেখানে আমার নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।
মোস্তাকের উপর হামলার ঘটনাকে বড় সফলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোথায়ও খুনি মোস্তাক বাঁধার সম্মুখিন হয়নি। কিন্তু সিলেটের মাটি থেকে বিদায় নিয়েছেন।