——-কানিজ আমেনাঃ
সাফল্য বা সাকসেস! অত্যন্ত মধুর একটি শব্দ। প্রতিটি মানুষের কাছে চির আকাঙ্খিত প্রত্যাশিত একটি বিষয়। মানুষ জীবনে যে কাজই করে তার পেছনে মূলত উদ্দেশ্য থাকে সেই কাজে সে যেন সফল হতে পারে।
অামরা ছাত্রজীবনে নানারকম সূত্র পড়ে থাকি। যেকোন কাজে সফল হবার জন্যেও সূত্র অাছে। যে পাঁচটি সূত্র পালন করা একান্ত জরুরী সেই সূত্রের উপর আজ আমরা আলোকপাত করব।
১) স্বপ্নঃ
মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে। যে মানুষের মনে কোন স্বপ্ন নেই সে মানুষ জীবিত থেকেও মৃত। আমরা অনেক সময় বড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পাই। এর মূলে রয়েছে শৈশবে পাঠ্যপুস্তক থেকে প্রাপ্ত আমাদের কিছু নেতিবাচক শিক্ষা।যেমন, ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখো না,’ ‘বামুন হয়ে চাঁদে হাত দিও না’ ইত্যাদি। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে যদি লাখ টাকার স্বপ্ন নাই দেখতে পারলেন তাহলে ঐ লাখ টাকা আজীবন আপনার কাছে অধরাই থেকে যাবে আর ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই জীবন কাটাতে হবে। তাই শুধু লাখ টাকা নয় কোটি টাকার স্বপ্ন দেখুন। কারণ স্বপ্ন দেখলে তবেই তা বাস্তবায়নের উপায় ও আইডিয়া মাথায় আসবে।
মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে স্বপ্ন লিখে রাখলে তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়। মোবাইল বা কম্পিউটারে সেইভ করে রাখার চেয়ে খাতা বা ডাইরিতে নোট করে রাখা অধিক কার্যকরী। তাই আজই বসে আপনার ডাইরির পাতায় আগামী পাঁচ বা দশ বছরে আপনি জীবনে কি কি অর্জন করতে চান তা লিখে ফেলুন!
২) বিশ্বাসঃ
স্বপ্ন তো লেখা হলো। এবার? এবার সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিবে তা বিশ্বাস করার পালা। স্বপ্ন দেখার পর আপনি যদি সেই স্বপ্নের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন তাহলে সেই স্বপ্ন আপনার হাতের মুঠোয় কখনো ধরা দিবে না। কথায় আছে, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।’ ইতিবাচক চিন্তা ও ইতিবাচক বিশ্বাস হলো চুম্বকের মতো যা ইতিবাচক স্বপ্নকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে, নিজের কাছে টেনে আনে।
আপনি যে স্বপ্ন দেখলেন সেই স্বপ্ন আপনার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বিশ্বাস করে কিনা সেটা কোন ব্যাপার নয়। আসল কথা হলো আপনি বিশ্বাস করেন কিনা! কারণ ব্যক্তি যে স্বপ্ন দেখে সেই ব্যক্তির বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তাই তো পৃথিবীতে এমন বহু নজীর বিদ্যমান যাতে দেখা যায় সফল ব্যক্তির এমন স্বপ্নও বাস্তব হয়েছে যা সেই ব্যক্তির সমসাময়িক সমাজের দৃষ্টিতে বাস্তবায়ন হওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। তাই মনে বিশ্বাস রাখুন। যেনতেন বিশ্বাস নয়, ইস্পাত কঠিন দৃঢ় অটল বিশ্বাস।
৩) জ্ঞানঃ
যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান সেই বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যত বেশি জ্ঞান অর্জন করবেন কাজ করতেও তত সুবিধা হবে। সেই সাথে স্বপ্ন সফল করতে গেলে কি কি বাধা-বিপত্তি বা প্রতিকূলতা তৈরি হতে পারে, হলে কিভাবে তা মোকাবিলা করবেন এ বিষয়েও জানতে পারবেন। মনে রাখবেন, স্বপ্ন যত বড় বাধাও তত বেশি। কোন স্বপ্নই হুট করে একদিনে বাস্তবে রূপ লাভ করে না। তাই আগে থেকে এ ব্যাপারে জানা থাকলে তা আপনার মনোবল ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আপনি হয়ে ওঠবেন আরো অদম্য।
বইপত্র ও সাময়িকী পড়ে, ইন্টারনেট ঘেঁটে সেই সাথে এ পথে সফল অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে কাউন্সিলিং করেও আপনি প্রচুর নলেজ নিতে পারেন। জ্ঞানার্জনের কাজে মানুষের মনে অনীহা ও আলস্য কাজ করে। কিন্তু আপনি আপনার স্বপ্নের ব্যাপারে আন্তরিক হয়ে থাকলে এই আলস্য অবশ্যই ঝেড়ে ফেলতে হবে এবং যথার্থ জ্ঞান অর্জনের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।
৪) সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনাঃ
স্বপ্নকে কিভাবে ও কতদিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে যদি পরিকল্পনা না করেই কাজে নেমে যান তাহলে কাজে শৃঙ্খলা থাকবে না।
মনে রাখবেন, সুন্দর ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হলো একটি কাজে সফলতার ৫০% মানে অর্ধেক।
তাই আগামী পাঁচ বা দশ বছরে আপনি কি কি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চান এবং কিভাবে করতে চান এ ব্যাপারে লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করে ফেলুন। এ বিষয়টি আপনার মূল্যবান সময়, অর্থ ও শ্রম অধিকাংশই অপচয় হওয়ার হাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
৫) কাজঃ
এবার কাজে নামার পালা। সবকিছু করার পর যদি কাজেই না নামেন তাহলে সাফল্য শেষ পর্যন্ত অধরাই থেকে যাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘মানুষের জীবনে কিছুই নেই পরিশ্রম ছাড়া।’
যে জাতি যত পরিশ্রমী সেই জাতি ততো সফল ও ভাগ্যবান। সেই সাথে জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য একজন পথ প্রদর্শকেরও প্রয়োজন। তা নাহলে ভুল কাজ করে ভুল পথে চলে যাওয়ার এবং উল্টো ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
জীবনে সাফল্য ও ব্যর্থতা একই মুদ্রার দুটি পিঠ। ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুনরায় সাফল্যের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এ জগতে এমন সফল ব্যক্তিদের প্রচুর উদাহরণ আছে যারা জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েও হতাশ হননি, কোন প্রতিবন্ধকতা কোন সমালোচনাই তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। অবশেষে তারা ঠিকই সফল হয়ে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। যেমন- বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা।
স্বপ্ন, বিশ্বাস, জ্ঞানার্জন, লক্ষ্য-পরিকল্পনা ও কাজ- সাফল্যের এই পাঁচটি সূত্র মেনে চলতে পারলে যেকোন মানুষের জীবনে সাফল্য অনিবার্য। সাফল্য সবার পদচুম্বন করুক শুভ কামনা।