বরিশাল জেলা প্রতিনিধিঃ
বরিশালে শিক্ষার্থী ছাড়াই দীর্ঘ ত্রিশ বছর শিক্ষাকতা করছেন। বরিশাল জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর। বরিশাল জগদীশ সারস্বত বালিকা বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয় নেই। অথচ গত ৩০ বছর ধরে ওই বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন জাহাঙ্গীর হোসেন। ভুয়া কাগজপত্রে শিক্ষকতা শেষে অবসরে গিয়ে ধরা পড়েছেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন। এ নিয়ে শুরু হয়েছে তদন্ত। শিক্ষক থাকাকালে সরকারের ৭০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
স্কুলের প্রশাসনিক দফতর সূত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ১ জুলাই জালিয়াতির মাধ্যমে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে জাহাঙ্গীর হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর তিনি অবসরে যান। ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ৩০ বছর চাকরি করে সরকারি কোষাগার থেকে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে।
জালিয়াতির বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে ২০১১ সালে। ওই সময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন সরকারি বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন। তিনি অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনকে নোটিশ প্রদান করে বেতন বন্ধ করে দেন। ২০১২ সালে যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলামকে এডহক কমিটির আহ্বায়ক করায় অবৈধ শিক্ষক পুনরায় বৈধতা পায়। তিনি (নিজাম) স্কুলের এফডিআর ভেঙে জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্কুলের সব শিক্ষক-কর্মচারীর ১৩ মাসের বেতন পরিশোধ করেন।
চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর হোসেনের বেতন-ভাতা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন আনোয়ার হোসেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘জগদীশ সারস্বত স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় জাহাঙ্গীর হোসেন ১৯৯০ সালের ১ জুলাই অবৈধভাবে যোগদান করে দাপটের সঙ্গে চাকরি করে সরকারের কোষাগার থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। কারণ বিদ্যালয়ে সব ছাত্রীরা গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করে আসছে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে। গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়টি বোর্ড থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত। অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে কোনও অনুমোদন নেই এবং কোনও শিক্ষার্থীও নেই।তাছাড়া তিনি যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পত্রিকা দাখিল করেছেন তাতে তার চাকরি হয় না।’
অবসরজনিতকারণে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হওয়ায় ১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর পত্রিকায় দু’জন শিক্ষক চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ আছে ‘দশম শ্রেণিতে ইংরেজি ও অংক পড়াইতে সক্ষম সরকারি বেতন স্কেলে দু’জন বিএ/বিএসসি/বিএড শিক্ষক/শিক্ষিকা আবশ্যক’। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ইংরেজী বিষয়ে ক্ষিরোদ লাল কর (ইনডেস্ক-১৯১৯২১) এবং গণিত বিষয়ে বিজয় কৃষ্ণ ঘোষকে (ইনডেস্ক-২০৯৯৩৯) নিয়োগ প্রদান করা হয়।একই নিয়োগে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পান জাহাঙ্গীর হোসেন। যা তাকে কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে পরিচিত করে। এতে প্রমাণিত হয় যে জাহাঙ্গীর হোসেনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারি বিধি মোতাবেক হয়নি। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হলেও বেতন ভাতা নিতে পারেন না। ভুলক্রমে বা জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সভাপতি যৌথভাবে সরকারের নিকট দায়ী থাকবেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ নভেম্বর শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনের সরকারি ও অভ্যন্তরীণ বেতন-ভাতা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রধান শিক্ষককে চিঠি প্রেরণ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা (মা-২) স্বাক্ষরিত চিঠিতে বর্ণিত শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত মূল কাগজ পত্রাদি ১০ কার্য দিবসের মধ্যে পরিচালক (মাধ্যমিক) কক্ষে প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধানশিক্ষক শাহ আলম বলেন, ‘মাউশির চিঠি পেয়েছি এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে অতি শিগগিরই চিঠির মাধ্যমে অবহিত করা হবে।
একই অভিযোগ এনে গত ৫ অক্টোবর বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন স্কুলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
অভিযোগ দখিলের পর বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩ নভেম্বর চিঠি পাঠায়। গত ২২ নভেম্বর অভিযোগকারী আনোয়ার হোসেন, অভিযুক্ত শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন এবং প্রধানশিক্ষক শাহ আলমের উপস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এ সময় সেখানে একাডেমিক সুপারভাইজারও উপস্থিত ছিলেন। তারা উভয় পক্ষের কথা মৌখিকভাবে শোনেন এবং কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে প্রত্যেককে লিখিত বক্তব্য প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন