আছাদ আল মাহদীঃ-
অামাদের বড়লেখা।
মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত পাহাড়, হাওর অার সবুজে ঘেরা অপরূপ সুন্দর এক জনপদ বড়লেখা উপজেলা।
বাংলাদেশের অন্য উপজেলার চেয়ে এ উপজেলার অন্যরকম সৌন্দর্য। হৃদয়কাঁড়া এ সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে দেশ বিদেশের পর্যটকরা অাসেন পাহাড় আর হাওরের নিবিড় সান্নিধ্যে। সেই সাথে চলছে কিছু অসাধু লোকের মাটি অাহরন, কর্ত্তন যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।পরিবেশ ধ্বংসের প্রভাব পড়বে ব্স্তুতঃ পরবর্তী প্রজন্মের উপর।আর পরবর্তী প্রজন্মকে ভালো থাকার জন্য সকল ব্যবস্থা আমাদেরই করা উচিত। যেমনটি আমাদের জন্য করে গেছেন অামাদের উত্তরসূরীরা।
অামরা কি কারনে আামাদের পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া এই সুন্দর ধরণীকে অবহেলায়, অনাদরে বিপর্যয়ের মুখে ফেলছি? অবৈধ কাজ করতে গেলে প্রভাবশালীর ছায়া লাগে বা প্রভাবশালী হতে হয়। প্রশাসন প্রায়ই মাটিসহ গাড়ি/ড্রাইভার আটক করছেন, জরিমানা করছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই বলছেন জনগনকে এ ব্যাপারে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।সাধারণ নীরিহ জনগন প্রতিবাদ
করে টিকতে পারলেতো গুটি কয়েক প্রভাবশালী এ অপকর্মগুলো করতে সাহস পাবেনা।
মাটি বহনের জন্য বাহন হিসেবে ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয়।এই ট্রাক্টর ফসলী জমি চাষের জন্য তৈরী হয়। ট্রাক্টরের একেকটা চাকা এমনভাবে তৈরী যে মাটিকে ১০ইঞ্চি পর্যন্ত খুঁড়ে অানে। এই বৃহদাকার বরফিকাটা চাকা যখন রাস্তায় চলে কয়েকশো মনের ভার নিয়ে তখন রাস্তার কি অবস্থা হয় ভেবে দেখুন। অামাদের বড়লেখার উজানে পাহাড়ি অঞ্চলে এক সময় নানান প্রজাতির প্রাণীর বসবাস ছিল। হরিণ,বন্য শুকর, সজারু সহ বিভিন্ন জাতের বনবিড়াল, বনমোরগ, নানান প্রজাতির সাপ এগুলো আমরা অনেকেই স্বচক্ষে দেখেছি। যত্রতত্র লোকালয় গড়ার কারনে পাহাড় বিলুপ্ত হচ্ছে, সেই সাথে মাটি কেটে পরিবেশকে ইমভ্যালেন্স করা হচ্ছে।
পবিত্র কোরআনে অাল্লাহপাক বলেছেন "আমি পাহাড়কে সৃষ্টি করেছি জমিনের উপর পেরেক স্বরুপ"।
আল্লাহর দান সেই ভারসাম্য রক্ষাকারী পেরেক আমরা ধ্বংস করে পরিবেশকে ফেলছি
হুমকির মুখে। একদিকে সরকার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে জীবন বৈচিত্র্য রক্ষায় অন্যদিকে
প্রভাবশালীরা পাহাড় কেঁটে প্রানীকূলকে দেশছাড়া করছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরন পেতে হবে। আরো সচেতন এবং কঠোর হতে হবে রক্ষাকারীদের।
পাহাড়ের মাটি কাঁটা রোধে কিছু প্রস্তাব দিতে চাই। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করে কাজে লাগাতে পারেন।
প্রস্তাবঃ-
১.প্রতিবছর হাকালুকি হাওর ভরাট হচ্ছে বৃষ্টি, বন্যার সাথে অাসা মাটির দ্বারা। সরকার যদি ভরাট হয়ে যাওয়া ওই মাটি নিলাম, ইজারা বা টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করেন তাতে সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হতো অার ইটভাঁটা, বাসাবাড়ির মাটি ভরাটের জন্য মাটিকাটা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।
২.ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো খনন করেও প্রয়োজনীয় মাটি অাহরন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের অন্যসব উপজেলার চেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অার সম্পদে ভরপুর অনিন্দ্য সুন্দর এক জনপদ অামাদের বড়লেখা। অতীতে আরোও সমৃদ্ধ ছিল এ উপজেলা। মহালদার শব্দটা বেশ প্রচলিত ছিলো একসময়।পাহাড়ের বাঁশমহাল ইজারা নিয়ে উপার্জন করতেন অনেকেই।তাঁদের বলা হতো মহালদার।অনেক সম্মান ছিলো তাঁদের।সবই ছিলো প্রকৃতির বদৌলতে।প্রায় দুই যোগ হয় হাওরে ব্যাপক বিদেশী পরিযায়ী পাখির আগমনের। পরিবেশ রক্ষায় পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইদানীং তারাও কেন যেন বিমুখ।
এতো বিপর্যয়ের মুখেও স্বপ্ন দেখছে বড়লেখাবাসী।
সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা, আমার সোনার বাংলার পরিবেশ। প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব এখন আমাদের প্রিয় নেতা পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মাননীয় মন্ত্রী জনাব আলহাজ্ব মোঃ শাহাব উদ্দীনের হাতে। তাঁর হাতেই সোনার বাংলায় গড়ে উঠবে বিশ্বমানের পরিবেশ। সেই স্বপ্নিল অগ্রযাত্রার সোপান হবে তাঁর এবং আমাদের প্রিয়ভুমি বড়লেখা। আমরা স্বপ্ন দেখছি মন্ত্রী মহোদয়ের কঠোর এবং নিরপেক্ষ হস্তক্ষেপে অামাদের পাহাড় রক্ষা পাবে। ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ প্রিয় বড়লেখা ঘোষিত হবে পর্যটন উপজেলায়।
আরো উন্নত হবে আমাদের পর্যটন সুবিধাগুলো। অামাদের সোনালী অতীত ফিরিয়ে নিয়ে অাসবে পরিযায়ী পাখিগুলো। পাহাড়ে নির্ভয়ে চলবে বনের অভিযাত্রীরা। পাথারিয়ার সকালের সূর্য হাকালুকির গোলাপী জলে আমরা ডুবতে দেখবো। অামার প্রানের বড়লেখায় নির্ভয়ে বেড়াতে অাসবে সুকান্ত, জীবনানন্দ, জসীমউদ্দিন। অাসবে ভূপেন, পঙ্কজ, জগজিৎ, বব মার্লি।
আমার প্রিয় পাথারিয়া আর হাকালুকি হারিয়ে দেবে কক্সবাজার, কুয়াকাটাকে।
--------------------------------
জেহিন সিদ্দিকী
কাউন্সিলর
বড়লেখা পৌরসভা।
--------
কো অর্ডিনেটর
ট্রান্স এসিয়ান এনভায়রনমেন্টাল ফোরাম।
৮ জানুয়ারী ২০২১