শিরোনাম
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বীরদর্পে ঈশ্বরদীতে চলছে অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটা

Coder Boss / ২৩৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২১

বায়েজিদ বোস্তামী, ঈশ্বরদীঃ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অর্ধশতাধিক অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। এর মধ‍্যে পদ্মা তীরবর্তী লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের বিলকেদা, কামালপুর,দাদাপুর এলাকায় চলছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে পোড়ানো হয় কাঠ। এমনকি বড় বড় গাছ ও কাঠ চিরাই করার জন‍্য অধিকাংশ ভাটায় টিম্বার বা কাঠ চিরাই করার “স” মিল বসানো হয়েছে। অবৈধ এসব ইটভাটা গুলোতে ইট প্রস্তুত করার জন‍্য যেসব মাটি ব‍্যবহার করা হয় সেগুলো পদ্মা নদী ও বিভিন্ন এলাকার ফসলী জমি থেকে কেটে ইটভাটায় বিক্রি করেন অসাধু লোকজন। এছাড়া অনেক জায়গায় ইটভাটার মালিকরা নিজেরাই নদী থেকে মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে যান। এসব ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। মাটি কাটায় বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি।পদ্মা নদী ও আশপাশের বিভিন্ন ফসলী জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ইটভাটায় মাটি ও কাঠের অতিরিক্ত ভাড়ী যানবাহন যাতায়াতের কারনে স্থানীয় সড়কগুলো সংস্কারের অল্প কিছুদিনের মধ‍্যেই ভেঙ্গে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এসব অবৈধ ইটভাটা ও মাটি ব‍্যবসায়ীদের কারনে পাবনাবাসীর আশির্বাদ খ‍্যাত মুজিব বাঁধটিও ব‍্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কার্পেটিং উঠে, বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের একেবারেই অযোগ‍্য হয়ে পড়েছে। বাঁধটি প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে চলেছে।ধূলাবালিতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চরম স্বাস্থ‍্য ঝুঁকিতে রয়েছেন স্থানীয়রা।

অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম কিভাবে চলছে এমন প্রশ্নে ইটভাটা মালিকরা জানান, আমাদের ইটভাটা মালিকদের একটি সমিতি আছে। সমিতির পক্ষ থেকে সবকিছু ঠিক করা হয়। সভাপতি সেক্রেটারির সঙ্গে পরামর্শ করে চলি। তারা সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অন‍্যান‍্য ব‍্যক্তিদের ম‍্যানেজ করে। এ কারনে প্রতিবছর মোটা অংকের অর্থ সমিতিতে দিতে হয়। তবে এসব কথা অস্বীকার করে ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদককে বিব্রত করার চেষ্টা করেন লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়ন ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জয়।

এলজিইডির কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন জানান, ঐ এলাকার রাস্তা ইটভাটা, মাটি এবং বালুর ব‍্যবসায়ীদের কারনে বেশিদিন স্থায়ীত্ব হয় না। সংস্কারের কয়েকদিনের মাথায় সড়কের বিভিন্ন অংশে কার্পেটিং উঠে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। গেল কয়েকদিন আগেও ঐসব এলাকায় কিছু সড়ক সংস্কার করা হয়েছে এবং সেগুলো রক্ষায় ভাড়ী যানবাহন চলাচল বন্ধ করার জন‍্য এলজিইডি অফিসের বিশেষ উদ‍্যোগে বারপোস্ট পুঁতে দেওয়া হয়। এ কারণে অতিরিক্ত বোঝাই গাড়ী চলাচল নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ‍্যেই রাতের আধারে কে বা কারা সেই বারপোস্টগুলো ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন সেসব রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ী গাড়ী চলাচল করছে।

এলাকাবাসীরা জানান, দিন রাত রাস্তা ও বাঁধের ওপর দিয়ে মাটি ও ইটভাটার বিভিন্ন ভাড়ী যানবাহন চলাচলের কারনে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। চরমভাবে মুজিব বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রচন্দ ধূলাবালিতে বাড়িতে বসবাস করার উপায় নেই। খাবারের মধ‍্যে ধূলা কিচকিচ করে। রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানাও একই অবস্থা হয়। টিনের চালাসহ ঘরের আসবাবপত্রে ধূলা জমে সেগুলো নষ্ট হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই এলকার মাটি বেশ উর্বর তাই যেকোনো ফসলের বাম্পার ফলন হয়। বেশিরভাগই বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ করেন তারা। তবে ইটভাটার ছাই উড়ে আসায় ও মাটি বহনের কারনে সবজিসহ অন‍্যান‍্য ফসলের ব‍্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া নদী থেকে মাটি কাটার কারনে ফসলী জমি বিলিন হয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বাধ‍্য হয়েই ভাটা মালিকদের কাছে মাটি কাটার জন‍্য জমি বিক্রি করতে হয় বলেও জানান কৃষকরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, গতবার আমরা লক্ষীকুন্ডায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি ইটভাটা ভেঙ্গে দিয়েছি, সেই সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও করেছি। এবছরও অভিযান পরিচালনা করা হবে। জেলা প্রশাসকের এমন বক্তব্যের কয়েকদিনের মধ‍্যেই পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। মোট ৫টি ইটভাটায় হানা দেয় অভিযানিক দল। এসময় চারটি ইটভাটার কিছু অংশ স্কেভেটর দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। বেশকিছু কাঁচা ইট বুলডেজার চালিয়ে নষ্ট করা হয় এবং ১১ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম‍্যমান আদালত।

অভিযানের সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রতিবছরই এরকমভাবে ইটভাটা ভাংতে দেখি। দুই তিনটা ভেঙ্গে আবার চলে যায়। ইটভাটা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তর ম‍্যানেজ করা আছে। এটা শুধু লোক দেখানো।

এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনকে আরও তৎপর হয়ে দ্রূত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন