নারীর স্বাধীনতা বাস্তবে কি?
✍️এ্যাডভোকেট উমায়রা ইসলাম✍️
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সত্যজিৎ দাস,বাহুবল(সংবাদ প্রতিনিধি)
নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং সামাজিক সক্ষমতা নারীকে কৃতদাসীর শৃংখল থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর অবশ্যই এজন্য সুশিক্ষা প্রয়োজন।
কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে নারীরা পশুপালন করেছেন, বাগান করেছেন, এগুলোর আয় তার নিজস্ব আয় ছিল। স্বামী, পিতা, ভাই কিংবা সন্তান অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে নারীরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন।
কিছু নারী উচ্চশিক্ষিত হয়েছেন, তাদের অবদান ও সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে কাজে লেগেছে। পরিবার তথা সমাজ শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত কিংবা উচ্চশিক্ষিত সবধরনের নারীকে সম্মান করেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যে সমাজে ঘটেনাই তা নয়, তবে এখনকার মতো ঘটেনাই। নারীর সহযোগীতা করেছে পরিবার পরিজন এবং সমাজ।
শিল্প উন্নত সমাজে, নারীর উপার্জন কারখানা কেন্দ্রীক। সেখানে আয়ের থেকে কখনো কখনো ব্যয় বেশী। আর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠা সততার অভাবে ও প্রাশাসনিক দক্ষতার অভাবে পরিণতি পাচ্ছে না। উচ্চশিক্ষিত নারী যেমন বেড়েছে তেমনি কর্মক্ষম নারীর অভাব রয়েছে সমাজে। শিক্ষা বলতে মুখস্ত বিদ্যা এবং সার্টিফিকেট হওয়ায় এই শিক্ষা ও অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মৌলবাদীরা নারীর উপার্জনকে হারামের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। অথচ নারীর আয় কতটা নিরাপত্তা প্রদান করে একটা পরিবারকে,সেদিকে খেয়াল নেই। ইসলাম নারীর উপার্জন ও নারীকে উপার্জনক্ষম করা উৎসাহিত করেছে। নারী শিক্ষাকে ও অবশ্য করণীয় বলেছে। শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে যেকোন জায়গায় যাওয়া যেতে পারে। মুসলিম নারীরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে।
তবে শিক্ষা অর্জন কিংবা উপার্জন করতে গিয়ে পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। সম্ভ্রমহানি করা যাবে না। সফরকালে পরিবারের পুরুষ সদস্য সাথে থাকা প্রয়োজন নিরাপত্তার খাতিরে। নারীর নিরাপত্তা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকটা এজন্যই শালীন পোশাক ও পর্দার কথা বলা হয়েছে।
সমাজে নারী পুরুষ প্রতিযোগী হলে ধ্বংস অনিবার্য। নারী পুরুষের সহযোগী হবে। আপনি আপনার স্ত্রীর উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেন। সে তখন আপনার উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবেনা। আবার উপার্জনক্ষম করে দেয়ার অর্থ আপনার ভরন পোষণ দেয়া থেকে দায়মুক্তি নয়। এটা আপনার স্ত্রী কে সন্তুষ্ট করবে ও নিরাপত্তা দিবে। আপনার স্ত্রীর বা কন্যার জন্য ক্ষুদ্র বা কুটির শিল্প কারখানা ঘরের ভেতর করে দেন। আপনি মার্কেটিং করেন। নারীদের উপার্জন আত্মসাৎ না করে উপযুক্ত লভ্যাংশ দিতে প্রস্তুত হোন। আপনার পরিবারের অর্থনৈতিক কিংবা সামাজিক বিপদ আসবে না।
উচ্চশিক্ষিত পরিবার নারীকে শুধু শিক্ষা দেয়া যথেষ্ট মনে করলে চলবে না। কর্মক্ষেত্র তৈরি করুন। কর্মক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হোন। চলাচলের নিরাপত্তা, কর্মক্ষেত্রে যেন বিপদে না পড়ে এজন্য উপযুক্ত উপদেশ, ভরসা দিয়ে নারীকে নিশ্চিত করেন, তোমার বিপদে আমরা পরিবারের সবাই এক হয়ে প্রতিরক্ষা করবো। তখন যে কোন প্রতিষ্ঠান নারীকে অপব্যবহার করতে ভয় পাবে।
শিক্ষা প্রদান সার্টিফিকেট নির্ভর নয়, যোগ্যতা নির্ভর। এটা প্রমাণ করতে হবে। আর কর্মমুখী শিক্ষা দিয়ে দ্রুত কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করেন নারীদের, পরিবারের উদ্যোগে। যখন পরিবার নারীর পাশে থাকবে, সমাজ নারীর পাশে থাকবে, নারীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দেয়া সহজ হবে।
আর নারীকে যদি বন্দী করে রাখেন, কিংবা পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে সমাজে একা ছেড়ে দেন, তাকে যে কেউ বিপদে ফেলে দিবে। অসন্তুষ্ট মন বিপদে পতিত হয়, সন্তুষ্ট মন বিপদকে মোকাবেলা করে। নারীকে অসন্তুষ্ট রেখে, কৃতদাসী বানিয়ে কখনোই সমাজ টিকবেনা। আজকের ধ্বংস সমাজ পুরুষের দায়িত্বশীলতার অভাবে সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবে পুরুষ নিজেই ভরসার স্থান হারিয়েছে। আপনার নারীকে আপনি মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলে,কাল আপনি নিজে সমাজে অমানুষ হিসেবে পরিচিত হবেন। আর নারীও পুরুষকে সম্মান করতে হবে,বেঈমানি করলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনবে।