সত্যজিৎ দাস,বাহুবল(সংবাদ প্রতিনিধি)
প্রকৃতি তার প্রাণীজগতের জন্য তৈরি করে রেখেছে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের কর্মমুখরতা। প্রকৃতির আলোতে উজ্জ্বল তার চোখের দ্যুতি। যেদিন পাথরে পাথর ঘষে মানুষ হঠাৎ চমকে গেছে আগুনের ঝলসানিতে,সেদিনই গায়ে লেগেছে উত্তাপ, জেনেছে রাতের অন্ধকারকে অগ্রাহ্য করা যায় আগুনের আলোতে।
নিউরনে কোথাও লেগে রইলো বিবর্তনের পদছাপ,মানুষ জানলো জৈবিকতাকেও পরম আকাঙ্ক্ষায় খোদাই করা যায় ভালোবাসার নামে।
বসন্তে পুরুষ কোকিলের কুহু কুহু আবাহন কিংবা বর্ষায় সঙ্গম প্রত্যাশী ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙকে মানুষ নাম দিতে পারে প্রেমের পদাবলী। তবু মানুষ তো, জীবন অনিত্য জেনেও নিজেকেই নিজে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ছুঁড়ে জীবনের স্বাদ জিহবায় আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে খায় সে উদরপূর্তির পর চাটনির মতো। জৈবিকতাকে সে নান্দনিক করে স্বপ্নে, প্রত্যাশায়,নির্দিষ্ট জনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা প্রকৃতিরই খেলা। মস্তিষ্কের ডোপামিন সিক্রেশন।
যার নিয়ন্ত্রণ তার হাতে নেই। জৈবিক শারীরিক আকর্ষণ। মাঝে বিয়ে নামের সামাজিকীকরণ। আর মায়া-দায়িত্ব-কর্তব্য ইত্যাদি কাল কিংবা সমাজ আপেক্ষিক মূল্যবোধ। কলেজ জীবনে প্রিয় শিক্ষক আবদ আল করিম স্যার বাংলা ক্লাসে বলতেন, বইয়ের পাতায় গোলাপ গুঁজে দেয়া আর কল্পনায় শুক্লা দ্বাদশীর রাতে ফাল্গুনী হাওয়ায় কাঁধে মাথা রেখে “তুমি যে আমার ওগো” সুর ছড়ানো নারীকে গার্হস্থ্য জীবনে কালিঝুলি মাখা বাসন মাজতে দেখে প্রেম কী সত্যি থাকে? সত্যি থাকে?
তাই বুঝি লাবণ্য নিজেকে বাঁধেনা আটপ্রৌরতায় অমিতের সাথে। লিখে যায় শেষের কবিতা,তোমারে যা দিয়েছিনু,সে তোমারই দান…। তবু তো কী জানি একটা বোধ মানুষ কে তাড়িত করে, তাড়িত করে বিপন্ন বিস্ময়,প্রেম সে টের পায় ঈর্ষার আগুনে,ম্যাকবেথের করুণ পরিণতি নিয়তিও হয় কখনো।কী সেই প্রেম,মানুষ যাকে আবাহন করে পুড়বে বলে দুঃসহ উত্তাপে!!
পরিবর্তন জানিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন,হেরে যাচ্ছে “বিয়ে” নামের প্রাতিষ্ঠানিকতা, তবে বুঝি জিত হচ্ছে মানুষের ভালোবাসার? দরজায় আগন্তুকের ঠকঠক,দৌড়ে দরজা খোলার মধ্যবর্তী উৎকণ্ঠিত সময়, আর দরজার বাইরে মানুষের অনস্বীকার্য সীমাবদ্ধতায় সাধারণ আবিষ্কারের হতাশা…।তবু দ্বিতীয়, তৃতীয় ভ্রান্তিপাশের পর ভ্রান্তিপাশে পতন। নইলে বাঁচেনা মানুষ…।