মাছুম আহমেদঃ
(১)…….
রবিঠাকুরের দুটো লাইন দিয়েই শুরু করি,তার একটি কবিতায়
বলেছিলেন “সাত কোটি বাঙালির হে মুগ্ধ জননী
বাঙালি করে রেখেছো মানুষ কর নি”
আমি জানি এই বাক্যংশের প্রতি কিছু উগ্রবাদী মহলের চোখ পড়লে রবীন্দ্রনাথ কে গালাগাল করতেও দ্বিধাবোধ করবেন না।ওনার সময়কাল ছিল আটারো-ঊনিশ শতক।ঠিক ঐ সময় তিনি লক্ষ করেছিলেন বাঙালির মূর্খতা, অজ্ঞতা, অবহেলা, অবমূল্যায়ন, অনৈতিক অমার্জিত কর্মকান্ড যা দ্বারা উন্নত সমাজ ব্যবস্থা আশা করা একেবারে বোকামি ছিল।
কালের পরিক্রমায় আমরা উন্নতি লাভ কবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও আমরা উন্নত জাতি হিশেবে পৌঁছাতে পারিনি। আমরা যতই শিক্ষিত হইনা কেন, রাস্তা-ঘাট, হাসপাতাল, বাড়ি-গাড়ি যতই থাকুন না কেন যদি না আমাদের উন্নত মানসিক ও মানবিক চিন্তার মানুষ না হই তা দিয়ে কিন্তু উন্নতির মাপকাঠি যাচাই করা যাবে না। প্রায় দেড়-দুইশত
বছর আগে তিনি দুটো লাইন দিয়ে দেখেছিলেন বাঙালির মূর্খামি।
আজও তা দিয়ে আজকের নামধারী শিক্ষিত, মূর্খ, অর্ধশিক্ষিত লোকের চোখে বৃদ্ধা আঙুলি দেখিয়ে কথা বলা তার জন্য কোনো ব্যাপারই ছিল না। বাঙালির মূর্খতা, অজ্ঞতা, অবহেলা, অবমূল্যায়ন, অনৈতিক কর্মকান্ড সেই প্রাচীন কাল থেকে অব্যহত এর পেছনে যে কয়টি কঠিনতম সত্য লুকিয়ে আছে তা হলো হিংসা, বিদ্বেষ, নিন্দা, জেদ, ও লোভ ইত্যাদি। ওগুলোর বসেই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের পেছনে ছুটতে থাকে জনতা। যত দিন না পর্যন্ত মানবিক ও মানসিক চিন্তার প্রসার না ঘটবে তত দিন পর্যন্ত এই ব্যাধিগুলো বাঙালির জাতিগত
রোগ হিশেবে থেকে যাবে।
__________________________(০২)___________________________
“একটি দেশ,বৈচিত্র্যময় ধর্মের ও বর্ণের মানুষ,
ওখানে শত্রুর আঘাত আসলে সবাই বাঁশের
লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ময়দানে, শুধু তার
দেশর সার্বভৌমত্ব-কে বাঁচাবার জন্য নয়, যার
পেছনে আছে বৈচিত্র্যময় মানুষে মানুষে বন্ধন
আছে ভালবাসা,আছে নাড়ীর টান ও সৌহার্দ্য”
এতক্ষণ যে প্রসংশা গুলো আমি করেছি তা এখন খুঁজতে গেলে শুধু আশ্চর্যবাচক চিহ্ন বসানো ছাড়া আর কোনো উপায় হবে না আমার।আমি কোন রাষ্ট্রের প্রসংশা করেছি তা আপনারা নিশ্চয়ই ধরতে পেরেছেন। মূল প্রসঙ্গে চলে আসি।
কথা ছিল বৈষম্য বিহীন বাংলাদেশ চাই,সে জন্যই ৭১-এ পাকদের সাথে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি বাংলাদেশ। কিন্তু আজ যে বিষয় গুলো পরিলক্ষিত হয় তা কিন্তু বৈষম্য বিহীন বলা যায় না। ধনী-গরিব, ধর-বর্ণ,ভাষা, খাওয়া-দাওয়া, ফ্যাশন-স্টাইল, গ্রাম-শহর এমনকি পড়ালেখার বিলাসিতা সবকিছুর মধ্যে বৈষম্যের চিহ্ন দেখা যায় মানে কোথাও না কোথায় অসম বন্টন দেখা যায়,সুষম বন্টন নেই বললেই চলে, কথা বলতে গেলেও দেখা যায় কেউ কথা বলতে পারবে আর কেউ পারবে না। সব জায়গায় আমরা বৈষম্য তৈরি করে রেখেছি। আর এরি নাম কি স্বাধীনতা!
আমাদের বিদ্রোহি কবির গান হয় তো আমরা ভুলে গেছি না হয় সবাই এই সুরে গাইতাম’গাহি সাম্যের গান,যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাঁধা ব্যবধান’নজরুল তো সবার জন্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাকে মুসলিম কবি হিশেবে দাম দেওয়ার চেয়ে একজন স্পষ্টভাষী ও সাম্যবাদী কবি হিশেবে দাম দেওয়া উৎকৃষ্ট কাজ হবে হলে মনে কবি।
আসুন তার সুরে একিই কণ্ঠে মিলাই,”গাহি সাম্যের গান,যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাঁধা ব্যবধান যেখানে মিসে গেছে, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান”
লেখা: মাছুম আহমেদ