সত্যজিৎ দাস(স্টাফ রিপোর্টার):
দিলীপ দাস নিতন। কুমিল্লার শতবর্ষী ও ঐতিহাসিক রাজরাজেশ্বরী কালী বাড়িতে ফুল আর বেলপাতা দিতেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে মন্দিরে ফুল
আর বেল পাতা পৌঁছে দেওয়াই ছিলো তাঁর দৈনন্দিনের কাজ।
গত ১৩ অক্টোবর শারদীয় দুর্গা পুজা'র অষ্টমীর দিন ঠিক দুপুরে যখন একটি মিছিল নিয়ে এসে কালী বাড়িতে হামলা হয়,তখন অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভয় পেয়ে দিশেহারা হয়ে মন্দিরের ভেতরে পাগলের মতো ছুটছিলেন। এদিকে হামলাকারীদের ঠেকাতে,মন্দিরের মূল প্রবেশ পথে যে কয়জন প্রাণপণে গেইট লাগিয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন তার মধ্যে একজন ছিলেন দিলীপ দাস নিতন।
হামলাকারীদের নিক্ষেপ করা একটি অর্ধেক ইট গিয়ে লেগেছিলো নিতন বাবু'র মাথায়। মুহূর্তে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নিতন বাবু'কে নেয়া হয়েছিলো কুমিল্লা মেডিকেলে।অবস্থা গুরুতর দেখে দেবী দুর্গা'কে ফুল দিতে আসা সবাই মিলে তাকে পাঠিয়ে দিলেন ঢাকায়। অপারেশন হলো,কিন্তু নিতেন বাবু আর জাগলেন না।
গত রাত ১২ঃ১৫ মিনিটের সময় বাবু দিলীপ দাস নিতন ঢাকা মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে বীরগতিপ্রাপ্ত হোন।
প্রয়াত দিলীপ বাবু'র ছোট ভাই অর্জুন কুমার দাস সিলেট নিউজ 24'কে বলেছেন,' মন্দির লক্ষ্য করে হামলাকারীরা ইট নিক্ষেপ করলে আমার ভাই আহত হন এবং পরে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসার জন্যে তাঁকে ঢামেকে নেওয়া হয়। তাঁর দুটি অস্ত্রোপাচারও করা হয়েছিলো '।
নিহত দিলীপ দুই সন্তানের বাবা এবং এলাকায় লন্ড্রি ব্যবসা করতেন।মৃত্যুকালে উনার বয়স আনুমানিক ৬০ বছর।
দিলীপ দাস এর মৃত্যুতে রাজরাজেশ্বরী কালীবাড়ি এলাকায় বইছে শোকের ছায়া।কালীবাড়ির পাশে বসবাসরত অনেকেই তাঁর মৃত্যুতে দুঃখ ভারাক্রান্ত। ঐ এলাকার অজিত দাস সিলেট নিউজ24'কে বলেন, ' নিতন দা আর বেলপাতা, ফুল দিতে আসবেন তাঁর মায়ের চরণে। মন্দিরের এক কোণে বসে হয়তো আর কখনো গাইবেন না, 'কালী কালী বল রসনা।'নিতন দাস মন্দিরের ভিতরে থাকা মা তারা'র ভক্তদের বাঁচাতে দুষ্কৃতকারীদের সাথে লড়াই করতে করতে আমাদের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিলেন।
সাম্প্রদায়িকতা, সহিংসতা, হিংসা, ক্ষোভ, ঘৃণা, এই অসুস্থ রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সমাজ, এমনকি প্রকৃতিও আর চাইলে ফেরত দিতে পারবে না নিতন দাস'কে। আমরা উনার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি'।