সব্যসাচী চৌধুরী:
'পাগল না পেট খারাপ! আর আসি আমি,একা পেলে হয়তো সত্যিই গলা কুপিয়ে দেবে'
আমার "মা" বলেন দরদাম করাটা একটা শিল্পের পর্যায় পরে,যে শিল্পে আমি একেবারেই সিদ্ধহস্ত নই। কলেজে পড়ার সময়ে ধর্মতলার ফুটপাথে টিশার্ট কিনতে যেতাম, আমায় দেখলেই ওরা দাম বাড়িয়ে দিতো। মা বলতো তুই একা যাস না,নিউমার্কেটে দরাদরি না করতে পারলে ওরা গলাকাটা দাম নেয়।
অনেকদিন পর সেদিন ধর্মতলা গেছিলাম একটা কাজে,তবে একা যাইনি,সাথে বিগবস্ গিয়েছিলেন। মোবাইলের কভার দেখে ভাবলাম একটা কিনি, দাম জিজ্ঞাসা করায় ফক্কর ছোকরা দোকানদার জানালো সাড়ে চারশো টাকা। মিনমিন করে বলতে যাচ্ছিলাম, "চারশোতে হবে?", হঠাৎ বাঁদিকের পাঁজরের নিচে একটা কনুইয়ের গুঁতো খেয়ে ওঁক করে উঠে চুপ করে গেলাম। গম্ভীর গলায় উনি দোকানদারকে জানালেন "পঁচাত্তর দেব।" আমি মুহূর্তের মধ্যে পাঁজরের ব্যাথা ভুলে গেলাম, শুধু পঁচাত্তর শুনলাম নাকি, আগে একটা দুই-তিন বা নিদেনপক্ষে একটা এক অবধি নেই দেখছি। দোকানদার সোজা চাঁদ থেকে আছড়ে পড়লো মাটিতে, দুইবার বগল চুলকে বললো "অ্যাঁ"। মেঘমন্দ্র স্বর ফের জানালো "পঁচাত্তর দেব"। এইবার আমি ভুল শুনিনি। জীবনে নাচিনি আমি, তবু অবিকল মাইকেল জ্যাকসনের মুনওয়াক নকল করে সুরুৎ করে কয়েক পা ডাইনে সরে গেলাম। আমি আর চিনি না ভদ্রমহিলাকে, আমি তখন চৌরুঙ্গী হোটেলের ব্যালকনি দেখছি মন দিয়ে। ওদিকে তখন এক ভয়ঙ্কর তরোয়াল যুদ্ধ চলছে, মিনিট তিনেক ফেন্সিং চলার পর কানে এলো চিমড়ে দোকানদার বলছে, "ঠিক আছে, একশো দেবেন, ফাইনাল।"
কি আশ্চর্য, এমনও হয় নাকি, হাসিহাসি মুখে গুটিগুটি গিয়ে সবে পাশে দাঁড়িয়েছি, হঠাৎ উনি দোকানদারকে জানালেন "দুটো নেবো, দেড়শো দেব।" এবারে আর মুনওয়াক করার সময় পাইনি, স্যাট করে এবাউট টার্ন নিলাম, ছেলেবেলায় পিটি ক্লাসে এমনটা করতাম। আমারই বুকটা কেমন চিনচিন করছে, দোকানদারের না স্ট্রোক হয়ে যায়। মন দিয়ে ইডেনের আলো দেখছি, খেলা আছে বোধহয়। এদিকে পেছনে রাম-রাবণের যুদ্ধ হচ্ছে। কে যে কার গলা কাটছে বোঝা দায়। খানিক পরে, প্রায় মরিয়া হয়ে দোকানদার ডেকে উঠলো, "স্যার, আপনি দুটো নিয়ে যান, ১৮০ দেবেন"। স্যার তখন মূক ও বধির, মন দিয়ে কেসি দাসের লাল সাইনবোর্ড দেখছেন,পেছনে ঘোরার সাহস দেখাননি। আর ঘুরেই বা কি লাভ,ওয়ালেট হারিয়ে ফেলি,তাই সেটাও ওনার ব্যাগেই আছে। স্যার এখন ড্রাইভার মাত্র।
মিনিটখানেক পর,পিঠে টোকা পড়লো,অবশেষে ঘুরলাম। কান অবধি হেসে দুটো মোবাইল কভার নিয়ে উনি দাঁড়িয়ে,স্বগর্বে বললেন "দেড়শো ফাইনাল"। ফুচকাওয়ালা একটা স্টিলের বাটিতে তেঁতুল চটকে মাখে,দেখেছো কখনো,ঠিক ওরকম তেঁতুল চটকানো মুখ করে সিড়িঙ্গে দোকানদার জানালেন "আবার আসবেন স্যার"।