ভারতের শিমলায় ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা 'অনুপম খের' এর ৬৭তম জন্মদিন আজ। তিনি হলেন একজন ভারতীয় অভিনেতা যিনি প্রায় ৪০০ এর অধিক ছবিতে এবং অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করেছেন। প্রধানত হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুবাদে তিনি ২০০২ সালের গোল্ডেন গ্লোব মনোনীত ছবি বেন্ড ইট লাইক বেকহাম, এনগ লির ২০০৭ সালের গোল্ডেন লাইওন বিজয়ী লাস্ট, কওশন এবং ২০১৩ সালের ডেভিড ও রাসেল-এর অস্কার বিজয়ী সিলভার লাইনিংগস প্লেবুক ছবিতে অভিনয় করে অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
তিনি ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের ও ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা পদে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০০৪ সালে ভারত সরকার ভারতীয় চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য তাকে পদ্মা শ্রী উপাধিতে সম্মানিত করেন। অণুপম খের কমেডি চরিত্রে সেরা কলাকার হিসেবে পাঁচবার ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন। অণুপম খের ৭ই মার্চ ১৯৫৫ সালে শিমলায় একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন কেরানী এবং তিনি ছিলেন নম্র, বিনয়ী ও প্রতিপালনকারী। তিনি শিমলায় ডি এ ভি স্কুলে পড়াশোনা করেন। অভিনয় জীবনের শুরুতে,ছবিতে নাম-যশ ও ভাগ্য প্রাপ্তির পূর্বে তিনি মুম্বাইয়ের রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে ঘুমাতেন।ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার তিনি একজন প্রাক্তন ছাত্র ও সাবেক চেয়ারপার্সন ছিলেন। অভিনয় জীবনের শুরুরদিকে মঞ্চে যা কিছু চরিত্রে অভিনয় করেন তা ছিলো হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে।১৯৮৫ সালে অণুপম খের তার চেয়ে কনিষ্ঠ অভিনেত্রী কিরণ খেরকে বিয়ে করেন। কিরণ খের-এর পুত্র, অণুপম খের-এর সৎ ছেলে হচ্ছেন সিকান্দার খের। অণুপম খের আগ্মন হিন্দি ছবি দিয়ে ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্রে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৮৪ সালের পরে সাঁরস ছবিতে যেখানে ২৮ বছর বয়সী অণুপম খের মধ্যম পরিবারের একজন পুত্র হারা অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ মহারাষ্ট্রীয় মানুষের চরিত্রে আবির্ভূত হন। তিনি সে না সামথিং টু আনুপম আঙ্কেল, শাওয়াল দশ ক্রোড় কা, লিড ইন্ডিয়া এবং সম্প্রতিক সময়ের দ্য আনুপম খের শো-কুছ ভি হো সাক্তা হে-নামক টিভি শো’গুলোর উপস্থাপনা করেন। দ্য আনুপম খের শো-কুছ ভি হো সাক্তা হে-যাতে আমন্ত্রিত অতিথি শাহরুখ খানের বদৌলতে ১ম পর্বেই হিটের মর্যাদা পায়। তিনি এ পর্যন্ত অনেকগুলো কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেন কিন্তু তার মধ্যে ছিল নেগেটিভ চরিত্রও যেমন কার্মা (১৯৮৬ সাল) সন্ত্রাসী ডঃ ড্যাং-এর চরিত্রে অভিনয় করে উচ্চ প্রশংসার ছাপ রাখেন। তিনি ড্যাডি (১৯৮৯ সাল) ছবিতে অবদানের জন্য ফিল্মফেয়ার ক্রিটিক্স পুরস্কার ফর বেস্ট পার্ফর্মেন্স ক্যাটেগরিতে পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি তারকা শাহরুখ খানের সাথে অনেকগুলো হিন্দি ছবি যেমন ডর (১৯৯৩); দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (ডিডিএলজে) (১৯৯৫); চাহাত (১৯৯৬); কুছ কুছ হোতা হ্যায় (১৯৯৮); মোহাব্বতে (২০০০) এবং ভীর জারা (২০০৪) ছবিগুলোতেও অভিনয় করেন। তিনি ওম জাই জাগদিশ (২০০২) পরিচালনা করতে সাহসী পদক্ষেপ নেন এবং একজন নির্মাতাও বনে যান। তিনি ছবি মে গান্ধী কো নেহি মারা (২০০৫) পরিচালনা ও অভিনয় করেন। তাঁর অবদানের জন্য তিনি করাচি ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল (কারা ফিল্ম ফেস্টিভাল)-কর্তৃক সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। তিনি পুলিশ কমিশনার ‘রাঠর’-এর চরিত্রটি সমালোচিত হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত ছবি এ ওয়েডনেসডেছবিটিও অনেক বেশি প্রশংসিত হয়।
অণুপম খের ২০০২ সালে বেন্ড ইট লাইক বেকহাম; ২০০৪ সালে ব্রাইড এন্ড প্রিজুডিস; ২০১১ সালে স্পিডি সিংগস্-এর মাধ্যমেও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেন। তাকে জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ই.আর. টিভি সিরিজ এবং সম্প্রতি দ্য মিস্ট্রেস অব স্পাইসেস (২০০৬) এবং লাস্ট, কওশন (২০০৭)-তেও অণুপম খেরের উপস্থিতি দেখা যায়। ২০১২ সালে একাডেমী অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী সিলভার লাইনিংগস্ প্লেবুক-এও সহ-তারকার চরিত্রেও অভিনয় করতে দেখা যায়।
ফিরোজ আব্বাস খান কর্তৃক পরিচালিত অণুপম খেরের নিজের লিখা এবং অভিনয় করা আত্মজীবনী মূলক অনুষ্ঠান দ্য অণুপম খের শো – কুছ ভি হো সাক্তা হ্যায় করেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডে চেয়ারম্যান পদে তিনি এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি একজন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার তিনি একজন প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন (১৯৭৮ ব্যাচ) এবং পরে ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তা পরিচালনা করেন।
২০০৭ সালে অণুপম খের তার ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার সহপাঠী সতিশ কৌশিকের সাথে ‘কারোল বাগ প্রোডাকশন্স্’ নামের একটি ফিল্ম প্রোডাক্শন কোম্পানি গড়ে তোলেন। তাদের প্রথম ছবি সতিশ কৌশিকের পরিচালনায় ‘তেরে সাঙ্গ’ বের হয়।সুনামের জন্য ২০১০ সালে প্রথম এডুকেশন ফাউন্ডেশন কর্তৃক তাকে এম্বেসেডর নিযুক্ত করা হয়, যা কিনা ভারতে ছোটো বাচ্চাদের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ২০১১ সালে, তিনি মোহনলাল এবং জয়প্রদের সাথে মালায়ালাম ভাষায় রোমান্টিক ধাঁচের নাটক প্রাণায়াম-এ অভিনয় করেন। প্রাণায়াম ছিলো খেরের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৭টি ছবির একটি। তিনি অনেকগুলো মারাঠী ও পাঞ্জাবি ছবিতেও অভিনয় করেন যেমন মারাঠী ছবি – ‘থোডা তুযা..থোডা মাজা’ ; ‘কওশালা উদ্যাচি বাত’ এবং পাঞ্জাবি ছবি যেমন ‘ইয়ারা নাল বাহ্রা’।
জায়গাভেদে তিনি একজন টক শো’র অংশগ্রহকও বটে। ২০০৯ সালে অণুপম খের ডিজনি পিক্সারের থ্রিডি এনিমেশন ছবি আপ (২০০৯ ছবি)র কার্ল ফ্রেডরিকসন চরিত্রে কন্ঠ প্রদান করেন, যা ছিল তাঁর করা জীবনের প্রথম ডাবিং চরিত্র ও প্রথম কণ্ঠদাতা হিসেবে করা চরিত্র। অণুপম খেরকে সম্প্রতি দেখা গিয়েছিলো ‘‘দ্য ডার্টি পলিটিক্স’’ ছবিতে। ছবিটিতে আরো কাজ করেছিলেন ওম পুরি এবং জ্যাকি শ্রফ।
২০১৪ সালে,খের ব্রিটিশ ছবি সংগ্রাম নামে একটি ফিকশনাল রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করেন যা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আলোকে বাস্তব ও ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। দীর্ঘকালের দক্ষ ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অভিনেতা হিসেবে টেক্সাস মার্কিন অঙ্গরাজ্য চলচ্চিত্র ও কলাশিল্পে অবদান রাখার জন্য তাকে সম্মানিত অতিথি পুরস্কারে ভূষিত করেন।
(১) ১৯৮৯ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-বিশেষ জুরি পুরস্কার: "ড্যাডি"।
(২) ২০০৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-বিশেষ জুরি পুরস্কার: মেনে গান্ধী কো নেহি মারা।
এছাড়া ফিল্মফেয়ার পুরস্কারঃ-
(১) ১৯৮৪ সাল: সেরা অভিনেতা,সাঁরস।
(২) ১৯৮৮ সাল: সেরা সহ-অভিনেতা,ভিজেয়।
(৩) ১৯৮৯ সাল: সেরা কমেডিয়ান,রাম লক্ষণ।
(৪) ১৯৯০ সাল: সেরা কলাকার ক্রিটিক্স ক্যাটেগরি পুরস্কার,ড্যাডি।
(৫) ১৯৯১ সাল: সেরা কমেডিয়ান,লামহে।
(৬) ১৯৯২ সাল: সেরা কমেডিয়ান,খেল।
(৭) ১৯৯৩ সাল: সেরা কমেডিয়ান,ডর্।
(৮) ১৯৯৫ সাল : সেরা কমেডিয়ান,দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে।
অনুপম খের'কে ওয়াক অব দ্য স্টারস্ কর্তৃক সম্মাননা প্রদান করা হয়। তার হাতের ছাপ মুম্বাইয়ের বান্দ্রা বাসস্ট্যান্ডে পোষ্টেরিটির জন্য সংরক্ষিত রাখা আছে।
প্রতিবেদন: SD