সত্যজিৎ দাস (স্টাফ রিপোর্টার):
চেরাপুঞ্জিতে ২৭ বছরে সর্বোচ্চ ১০০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটি শহর। খাসি পাহাড়ের দক্ষিণে একটি মালভূমির উপর এটি অবস্থিত। পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের সমতল ভূমি। মালভূমিটি চারিপাশের সমতল থেকে গড়ে ৬০০ মিটার উঁচু। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং বৃক্ষ কর্তনের ফলে মালভূমির মাটি বেশ দূর্বল হওয়ায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়তে হয় বাংলাদেশের সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলার মানুষদের।
সিলেট জেলা ৮৫ শতাংশ ডুবে গেছে,সুনামগঞ্জ ৯০ শতাংশ ডুবে গেছে। সব রেকর্ড ভেঙে ভয়াবহ বন্যা প্লাবিত হয়েছে সিলেটে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন উপকেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে পানি প্রবেশ করেছে,তাই সকল ফ্লাইটও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ও সিলেট রেলওয়ে স্টেশনেও বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় রেল স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্ত হতে যাচ্ছে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ও কোস্ট গার্ডের ক্রুজ। যেহেতু সিলেটে বন্যার পানি বেড়েই চলেছে এবং এখনো অনেক মানুষ পানিতে আটকা পড়ে আছে। তাদের উদ্ধারে এরই মধ্যে উপজেলায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২টি ক্রুজ। একটি মোতায়েন করা হবে সিলেটে এবং অপর একটি মোতায়েন করা হবে সুনামগঞ্জে। কোস্ট গার্ডের এই দুটি ক্রুজ যুক্ত হলে উদ্ধার কাজ আরও গতি পাবে। এছাড়াও বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সহযোগিতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে দুইটি হেলিকপ্টার। কোন মডেলের হেলিকপ্টার ও কোথায় মোতায়েন করা হবে তা স্পষ্ট জানা যায়নি,তবে ধারনা করা হচ্ছে হেলিকপ্টার দুইটি সিলেট ও সুনামগঞ্জে মোতায়েন করা হতে পারে।সেনাবাহিনীর সদস্যরা ‘রেসকিউ বোট’ দিয়ে গ্রামে গ্রামে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার কাজ করে যাচ্ছেন।স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বানভাসি মানুষেরা। নৌকা ও যোগাযোগের অভাবে প্লাবিত এলাকা ছেড়ে আসতেও পারছেন না অনেকেই,রয়েছে খাদ্যসঙ্কটও। এ অবস্থায় গত শুক্রবার(১৭ জুন) থেকে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে নামে সেনাবাহিনী। আর শনিবার(১৮ জুন) সকাল থেকে উদ্ধার কাজে নেমেছে নৌবাহিনী। এছাড়া বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার ও কোস্টগার্ডের দুটি ডুবুরি দলও উদ্ধার কাজে যুক্ত হয়েছে। এদিকে শনিবার(১৮ জুন) সকাল থেকে উদ্ধার কাজে নেমেছে নৌবাহিনী। এছাড়া বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার ও কোস্টগার্ডের দুটি ডুবুরি দলও উদ্ধার কাজে যুক্ত হচ্ছে। নৌ বাহিনীর একটি দল সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে কাজ শুরু করেছে এবং একটি দল কোম্পানিগঞ্জের দিকে রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী সিলেট সদর, কোম্পানিগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাটে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনা সদস্যরা সুনামগঞ্জের দিরাই, জামালগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার এবং সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন।
সিলেট-সুনামগঞ্জ এলাকায় এখনও বহু মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় ঘরে আটকে আছেন। নৌকার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারছেননা তারা এবং দুই জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্যার কবলে পড়া বেশিরভাগই সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী সহ স্বেচ্ছাসেবী কারও সাথে যোগাযোগও করতে পারছেননা।