ছাতক প্রতিনিধিঃ
বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গিয়েছিলেন আব্দুল লতিফ। চার ঘণ্টা ভেসে থাকার পর আশ্রয় নিয়েছেন ডুবে থাকা গাছের ডালে। তার রাত কেটেছে সেখানেই। দিনের বেলায় আবার সাঁতরে আশ্রয় নিয়েছেন ডুবে থাকা একটি ঘরের টিনের চালায়। ক্ষুধা নিবারণের জন্য খেয়েছেন কাঁচা মাছ, লতাপাতা। এভাবে লড়াইয়ের ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার পেয়েছেন একজন লোকের সহায়তায়।
সুনামগঞ্জে জেলার কর্মসংস্থান ব্যাংক ছাতক শাখার ব্যবস্থাপক আব্দুল লতিফ। গত বৃহস্পতিবার কর্মস্থল থেকে সিলেটের বাসায় ফেরার পথে বন্যার স্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ২৬ ঘণ্টা ধরে নানা সংগ্রাম শেষে একজনের সহায়তায় বেঁচে ফিরেছেন আবদুল লতিফ। এ যেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এক যুবক। তাই তো দুর্বিষহ লড়াইয়ের কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছেন একাধিকবার তিনি। আব্দুল লতিফ জানান, দাপ্তরিক কাজ ছিল, তাই বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ছাতকের কর্মস্থল থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। ততক্ষণে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ছাতক- সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক ডুবে গেছে। তিনি একটি নৌকায় চড়ে গাড়ির খোঁজে ঝাওয়া ব্রিজ বা মাধবপুর এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন। কিছুদূর এসে নৌকাটির গলুই ভেঙে যায়। নেমে এক জায়গায় পানিতে দাঁড়ান। এরপর অপেক্ষা করতে থাকেন আরেক নৌকার জন্য। বিকেল ৫টার দিকে নৌকা পাওয়া যায়। সেটাতে আরো পাঁচজনের সঙ্গে চড়ে বসেন আব্দুল লতিফ ও। ১০ মিনিটের মতো নৌকা চলার পর তীব্র স্রোতে নৌকা ডুবে যায়। নৌকার বাকি চারজন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পারলেও লতিফসহ আরেকজন ভেসে যান। ২/ ৩ দিন পর শুনেছেন ওই লোকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দূর্ঘটনাটি ঘটেছে ছাতকের মাধবপুর এলাকায়।
যেভাবে বে্ঁচে ফিরে আসলেন আবদুল লতিফ। ভাংগা নৌকা ছেড়ে দ্বিতীয় নৌকায় উঠেন তিনি। এখানে যাত্রী ছয়জন ছিলেন।১০ মিনিটের মতো এগোতেই আকস্মিক নৌকা উল্টে গেল। পানিতে পড়ে প্রবল স্রোতের প্রথম ধাক্কায়ই জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এত প্রবল স্রোত। এর বিপরীতে সাঁতারের চেষ্টা করে দ্রুত শরীর নিস্তেজ হয়ে আসতে থাকে তার । হাল ছেড়ে দিয়ে স্রোতে ভেসে যান অজানা গন্তব্যে। পকেটে থাকা আইফোন, জরুরি কাগজপত্র, স্মার্ট ওয়াচ সব একে একে পানিতে তলিয়ে যায়।’প্রথমদিকে বুঝতে পারছিলেন না—এ মুহূর্তে কী করা দরকার। মাথার ওপরে বিরামহীন বৃষ্টি আর নিচে ঠাণ্ডা পানির তীব্র স্রোত। কখনো ডুবছেন কখনো ভাসছেন। চারদিকে অন্ধকার নেমেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা গাঢ় হচ্ছে। আশপাশে পানির স্রোতের শব্দ ছাড়া কিছু নেই। অন্ধকার ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। এভাবে প্রায় চার ঘন্টা পর হঠাৎ ধাক্কা খেলেন কিছুর সঙ্গে। দেখা না গেলেও বুঝে ফেললেন বড় গাছ হতে পারে।সঙ্গে সঙ্গে প্রাণপণে গাছের শিকড় আঁকড়ে ধরলেন। কিছুক্ষণ এভাবে তীব্র স্রোতের মধ্যে শিকড় ধরে থাকার পর আস্তে আস্তে ডালে উঠতে সক্ষম হলেন। গাছের ডালে ঝুলে থেকে অবর্ণনীয় কষ্ট আর উৎকণ্ঠায় রাত পার করছেন। সাপের ভয়সহ নানা ভয়ে রাত কাটল। দিনে একটি ঘরের টিনের চালায় আশ্রয় নিলেন। দোয়ারাবাজার অঞ্চলের এ ঘর থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।