স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের খুলনার নড়াইলে হিন্দুদের মন্দির,বাড়ি ও দোকানে হামলা,ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল সম্প্রতি। এই প্রেক্ষিতে এবার কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রনালয়ে চিঠি লিখলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ‘বাংলাদেশে ক্রমাগত সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার’ ঘটনায় অবিলম্বে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে এই চিঠি লিখেছেন বিজেপি বিধায়ক।
নড়াইলের ঘটনা নিয়ে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী তার ফেসবুক পেইজে ১৮ জুলাই রোজ সোমবার একটি পোস্টে লিখেন,'আবারও বাংলাদেশে হিন্দুরা আক্রান্ত। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় দীঘলিয়া গ্রামের সাহা পাড়ায় ধর্ম অবমাননার অজুহাতে আবারও হিন্দু সনাতনীদের ঘর জ্বালানো হয়,মন্দির ভাঙ্গা হয়,দোকানে লুঠপাট চালানোর পরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক কলেজ ছাত্রের ফেসবুক আইডি থেকে বিতর্কিত মন্তব্য করে একটি পোষ্ট দেয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে পোষ্টটি আসল কিনা,এখনও প্রমাণিত নয়, তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
গত বছর দুর্গা পূজোর সময় এই ভাবেই অভিযোগ ওঠে যে ভগবান হনুমানের শ্রীচরণের পাশে নাকি ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ রাখা হয়েছে। কিছু হিন্দুকে হত্যা করে, হিন্দু মহিলাদের সম্ভ্রম লুঠ করে,ঘর বাড়ি দোকানপাট লুটপাট করে,মন্দির আক্রমণ করে দেব দেবীর মূর্তি ভাঙার পর পুলিশ জানালো যে মূল চক্রান্তকারীর নাম ইকবাল হোসেন। জেনে বুঝেই এই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটানো হয় হিন্দুদের ওপর আঘাত হানার জন্য।
এমন ঘটনা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর দিনের পর দিন ধরে ঘটে চলছে। বারংবার এমন সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটলে,ঐদেশের সরকারের বা স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকার ওপর সন্দেহে সৃষ্টি হয়। আদৌ কি তারা এই বিষয়ে কোনো প্রতিরোধ গড়তে ইচ্ছুক,নাকি এই রকম চলতেই থাকবে। প্রাথমিক ভাবে কিছু ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে দায়িত্ব সারবে প্রশাসন? দাঙ্গাকারীরা সাজা না পাওয়ায় অন্যরাও আশ্বস্ত হবে এবং আবার এই রকম পরিকল্পনা করবে ও রূপায়ণে মেতে উঠবে।
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি এবং ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ড: এস জয়শঙ্করজি কে এই বিষয়ে চিঠি লিখেছি এবং ওনাদের তাৎক্ষনিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছি '।
ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীজি এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ড: এস জয়শঙ্করজি বরাবর বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী লিখেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে আমি এই চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি।’ বাংলাদেশের নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি হিন্দু পাড়া,বাজার ও মন্দিরে হামলা,লুটপাট ও আগুনের ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ। এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলা চালায় একদল ইসলামি কট্টরপন্থীরা। এই ঘটনার পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গিয়েছে,আকাশ সাহা নামে এক কলেজ ছাত্রের কথিত ফেসবুক পোস্টে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে এই হামলা চালানো হয়। হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ জন ইসলামি কট্টরপন্থীকে গ্রেফতার করেছে সেদেশের পুলিশ। যে যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে তাকে খুলনা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পুরুষশূন্য গোটা এলাকা। দিঘলিয়ার সাহা পাড়ায় পথে পথে টহল দিচ্ছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে প্রশাসনের উদ্যোগে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর লাগাতার হামলার তদন্তের দাবি জোরদার হয়েছে '।
উল্লেখ্য যে,নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। গত সোমবার (১৮ জুলাই) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুুল আলমের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিজানুর রহমান সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক শুনানি শেষে তিন দিন করে মঞ্জুর করেন। আসামিরা হলো; উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের রাসেল মৃধা (৪২), চরমাউলি গ্রামের কবির কাজী (৪০), তালবাড়িয়া গ্রামের সাঈদ শেখ (৫৫), বাটিকাবাড়ি গ্রামের রেজাউল শেখ (৪০) ও বয়রা গ্রামের মাসুম বিল্লাহ (৩২)। গত রোববার (১৭ জুলাই) রাতে ২৫০ জনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়েরের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে নড়াইলে ইসলামের নবীকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য সমালোচিত ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার সমর্থনে ফেসবুকে এক কলেজ ছাত্রের পোস্টকে কেন্দ্র করে কলেজটির অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ সেসময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল।