স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ যাত্রী নিহতের ঘটনায় অবহেলা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মো. মোহসীন বলেন,স্পষ্ট অবহেলা ছিল। এ ধরনের স্থানান্তরের জন্য যে পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল,তা করা হয়নি। তদন্ত চলছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শনিবার (১৩ আগষ্ট) হৃদয়-রিয়া মনির বিয়ে হয়েছে। আজ কাওলায় হৃদয়দের বাড়িতে ছিল বৌভাতের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শেষে শরিয়তপুর সদরের ঢালী বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল (বর্তমান ঠিকানা-কাওলা) নিজেই গাড়ি চালিয়ে তাদের আশুলিয়ার খেজুরবাগানে রিয়া মনিদের বাসায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। এ সময় দুর্ঘটনা ঘটে।দুর্ঘটনায় কবলিত গাড়িতে ছিলেন নবদম্পতি ও তাদের কয়েকজন আত্মীয়স্বজন। নবদম্পতির বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ফিরছিলেন তারা। কিন্তু একসাথে কাটানো আনন্দময় সময় হঠাৎই রূপ নিলো স্বজন হারানোর বিষাদে। স্বজনদের আহাজারিতে এখন ভারী হয়ে আছে উত্তরার জসীমউদ্দিন অ্যাভিনিউ।
সোমবার (১৫ আগষ্ট) বিকেল সোয়া চারটার দিকে চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডারটি পড়ে। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর গাড়িটির ওপর থেকে গার্ডারটি সরান উদ্ধারকর্মীরা। এরপর প্রাইভেট কারের মধ্যে পাঁচজনের লাশ পাওয়া যায়।
লাশগুলো উদ্ধারের পর রাত পৌঁনে আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন,নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন পুরুষ, দুজন নারী ও দুটি শিশু রয়েছে। তাঁদের সবার লাশ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে,প্রাইভেটকারে একই পরিবারের সাত সদস্য ছিলেন। নিহতরা হলেন- রুবেল (৬০), ফাহিমা (৪০), ঝরনা (২৮), ঝর্ণার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। শুধু বেঁচে গেছেন হৃদয় ও রিয়া মনি নামের নবদম্পতি।
আহত হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) হচ্ছেন নবদম্পতি। তারা বসেছিলেন প্রাইভেটকারের পেছনের সিটে। আর নিহতদের মধ্যে জান্নাত ও জাকারিয়ার মা হচ্ছেন ঝর্ণা। আর নিহত রুবেল হচ্ছেন হৃদয়ের বাবা। হৃদয় ও রিয়া মনিকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে,তাদের অবস্থা আশংকাজনক।
ফায়ার সার্ভসের ঢাকা জোন-৩ উপসহকারী পরিচালক সাইফুজ্জামান বলেন,১৫০ টন ওজনের গার্ডার হওয়ায় প্রথমে উদ্ধার কাজ শুরু করা যায়নি। পরে এস্কেভেটর আনা হয়। এস্কেভেটর আনতে দেরি হওয়ায় উদ্ধার কাজ বিলম্ব হয়। এস্কেভেটর দিয়ে গার্ডার একটু উঁচু করে প্রাইভেকারের ভেতর থেকে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঢাকার ব্যস্ততম উত্তরার জসিম উদ্দিন এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সড়কের একপাশে যানবাহন চলাচল করে। উড়াল সড়কের একটি গার্ডার ক্রেনে স্থানান্তর করার সময় চলতে থাকা প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। প্রকাণ্ড এই গার্ডারের চাপে থেতলে যায় ঢাকা মেট্রো গ-১১৬০০৮ নম্বরের প্রাইভেট কারটি। গাড়ির ভেতরে যারা ছিলেন তাদেরকে রক্তাক্ত অবস্থায় টেনে বের করে স্থানীয়রা। এর আগেও এই প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী ও গার্ডার পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
এর আগে গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে এই বিআরটি প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হয়েছিলেন।