ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ছাতকে এক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা নিয়ে দুই পরিবার মুখোমুখি অবস্থানে। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মহিশমারা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের
নামের ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন স্ত্রী রংমালা বেগম।এমতাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের ৫২বছর পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দাবি করছেন জহুর আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন সরকারি-বে সরকারি দপ্তরে এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। জহুর আলীর দাবি শাহ আরেফিন নগর গ্রামের বাসিন্দা রহিম উল্লাহর পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের পুত্র তিনি। যারা আব্দুর রহমান নামের মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সুবিধা ভোগ করে তারা আব্দুস সামাদের স্ত্রী -সন্তান। এ দিকে রংমালা বেগম জানান, আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুস সামাদ তার স্বামী। আগে তাদের বাড়ি ছিলো শাহ আরেফিন নগর গ্রামে বর্তমানে তারা মহিশমারা গ্রামের বাসিন্দা।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের শাহ আরেফিন নগর গ্রামের রহিম উল্লাহর পুত্র আব্দুর রহমান। মৃত রহিম উল্লাহর দুই পুত্র ছিলেন আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুস সামাদ ও বেদন আলী এবং কন্যা ফুলই বিবি। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আব্দুর রহমানের চাচতো বোন বাছা বিবি। তিনি আরো বলেন মুক্তিযুদ্ধের ৪ বছর আগে বেদন আলী মারা গেছেন। যুদ্ধের পর আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুস সামাদ স্ত্রী- সন্তান নিয়ে মহিশমারা গ্রামে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। বেদন আলীর সন্তানরা ওই গ্রামেই থেকে যান। বেদন আলীর ওয়ারিশ ছেলে জহুর আলী ও মেয়ে মোছাঃ জয়ধন মালা রয়েছেন। মহিশমারা গ্রামে আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুস সামাদের ওয়ারিশ স্ত্রী রংমালা বেগম,ছেলে তাজুদ আলী,মাসুক আলী,আশিক আলী ও মেয়ে নুর জাহান,নুরেছা বেগম ও নুর মালা রয়েছেন।
শাহ আরেফিন নগর গ্রামের বাসিন্দা মৃত রহিম উল্লাহর পুত্র আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুস সামাদ মহিশমারা এলাকার ভোটার তালিকায় আব্দুর রহমান নামে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
(ভোটার নং ৯০২১৪৭৫০৫৬৮৫) এভাবে তার জাতীয় পরিচয় পত্র ও স্মার্ট কার্ড, ও অনলাইন মুক্তিযোদ্ধা সনদ সহ বিভিন্ন কাগজ পত্রে মহিশমারা গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের নাম লিপিবদ্ধ আছে।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের পুত্র হিসেবে জহুর আলী (পুরুষ ভোটার নং ৯০২১৪৯৫০৬৪২০), কন্যা মোছাঃ জয়ধন মালা (মহিলা ভোটার নং৯০২১৪৯৫০৬০১১) শাহ আরেফিন নগর এলাকার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। তাদের পিতা আব্দুর রহমান ও মাতার নাম কাচা মালা বেগম উল্লেখ রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সমন্বিত তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান নামে (০১৯০০০০২৫৬৭),বে- সামরিক গেজেট (১১২৩) গ্রামের নাম মহিশমারা উল্লেখ রয়েছে। দেখা গেছে নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ২৮.০৭.২০২০ ইং তারিখে মহিশমারা গ্রামের রহিম উল্লাহর পুত্র আব্দুর রহমান এবং তার ওয়ারিশ রংমালা বেগম, তাজুদ আলী, মাসুক আলী, আশিক আলী, নুর জাহান, নুর মালা ও নুরেছা বেগম বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ২০২০ সালের ১১ জুন মৃত্যুবরণ করেছেন এ ধরনেরও নোয়ারাই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি সার্টিফিকেট রয়েছে।
আব্দুর রহমান ওরফে আব্দুস সামাদের পুত্র তাজুদ আলী জানান,জহুর আলী তার চাচতো ভাই। সে মৃত বেদন আলীর পুত্র। জহুর আলী শাহ আরেফিন নগর গ্রামের বাসিন্দা আর তারা মহিশ মারা গ্রামের বাসিন্দা।
জহুর আলী লোভী প্রকৃতির লোক। সে এখন ভোটার তালিকায় চালাকি করে বেদন আলীর পরিবর্তে পিতার নাম আব্দুর রহমান লেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করছে। এ সব প্রতারণার শামিল। তাজুদ আলী জানায় এ ব্যাপারে জহুর আলীর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেছেন তিনি। এ বিষয়ে পত্র- পত্রিকায়ও একাধিক সাজানো সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি এসব প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ইউনিয়নের শাহ আরেফিন নগরগ্রামের হানিফ আলী আংগারুকা গ্রামের চমক আলী,দেওয়ান আলী,রাজারগাও গ্রামের আমির আলী, মহিশমারা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জমির আলী, বারকাহন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী জানিয়েছেন, মহিশমারা গ্রামের আব্দুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি সামাদ নামে ও পরিচিত। বর্তমানে আব্দুর রহমানের ওয়ারিশ এক স্ত্রী, ৩ পুত্র ও ৩ কন্যা রয়েছেন।