মাকদুম সাত্তার রুবেল:
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের চেকপোস্টে হানা দেয় জঙ্গিদল। ঈদগাহ জামাতের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে টার্গেট করে জঙ্গিদের এই হামলার পরিকল্পনা জীবনবাজি রেখে রুখে দেন লড়াকু পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশের রক্তে নির্বিঘ্ন হয় শোলাকিয়ায় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত। ঈদগাহ ময়দানের জঙ্গি হামলা এড়িয়ে তিন লাখ মুসল্লি শরিক হন এই ঈদুল ফিতরের জামাতে।
জঙ্গিরা হানা দেয়ায় পরের বছর থেকে নিয়মিত শোলাকিয়ার ঈদজামাতকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এর ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদজামাতকে ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) জেলা পুলিশের নিরাপত্তা ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) নিরাপত্তা ব্রিফিংয়ে দেয়া বক্তব্যে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত আয়োজনে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এবার শোলাকিয়ায় ১৯৬তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত শুরু হয় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিহীন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
এদিকে উপমহাদেশের বৃহত্তম এই ঈদজামাত আয়োজনের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে মিনার, অজুখানা। করা হয়েছে আলোকসজ্জা
বিভিন্ন স্থান থেকে ঈদগাহে আসা মুসল্লিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবী ক্যাম্প। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসসহ একাধিক মেডিক্যাল টিম।
প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবারও ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দু’টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। ভৈরব-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব রুটে বিশেষ ট্রেন দু’টি চলাচল করেছে।
বিশেষ ট্রেনের একটি ঈদের দিন সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে এবং সকাল ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছে। জামাত শেষে ট্রেনটি দুপুর ১২টায় পুনরায় ভৈরব উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং বেলা ২টায় ভৈরব পৌঁছে।
অপর ট্রেনটি ঈদের দিন সকাল পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছে। এ ট্রেনটিও জামাত শেষে দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যায় এবং বেলা ৩টায় ময়মনসিংহ পৌঁছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাঠ ও মাঠের আশপাশ এলাকায় ড্রোনে পর্যবেক্ষণ ছাড়াও ঈদগাহ ময়দানের বাইরে, ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঈদগাহ ময়দান, এলাকা এবং অলিগলিসহ চারপাশের দুই কিলোমিটার এলাকা নিয়ে আসা হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় আওতায়।
স্থাপন করা হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শহর এবং আশপাশের এলাকায় বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারেরও বেশি সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে।
রমজানের শুরু থেকেই এই এলাকার দিকে বাড়তি নজরদারি রাখা হয়। সাদা পোশাক এবং পোশাকি পুলিশের সদস্যগণ এলাকায় টহলসহ নানাবিধ তথ্য সংগ্রহ করে । শুধু জায়নামাজ ছাড়া যেকোন ধরণের ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, দাহ্য পদার্থ, ছাতা, ব্যাগ বা অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে ঈদগাহ মাঠে না আসার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।
সর্বোপরি, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে ঐতিহাসিক এই ঈদগাহ মাঠে নামাজের জন্য সকলে আসেন বলে পুলিশ সুপার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
অন্যদিকে পুলিশের নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ঈদগাহ ময়দানকে ঘিরে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিদর্শনে এসে র্যাব-১৪, ময়মনসিংহের কমান্ডিং অফিসার এডিশনাল ডিআইজি মো. মহিবুল ইসলাম খান বলেন, শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পুরোটাই র্যাবের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। কিশোরগঞ্জে র্যাব-১৪, সিপিস।