বিশেষ প্রতিনিধি:
প্রবল বৃষ্টিতে বিহার,ঝাড়খণ্ড থেকে পানি ছাড়ার কারণে চাপ বাড়ছে ফারাক্কা ব্যারেজে। পানি ছাড়তে হচ্ছে এই ব্যারেজেও। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় দৈনন্দিন পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। যদিও বাকি সময়ে আপ স্ট্রিমে পানি যেমন থাকে সেই অনুযায়ী ছাড়া হয় ডাউনস্ট্রিমে। গঙ্গার পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ১১ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধসের বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই তথ্য জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারত।
ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের একটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ বলছে,বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় এবং ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ পানি আসছে, সেই পরিমাণ ছাড়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফারাক্কা ব্যারেজে পানি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই,ফলে ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে তারা। পানি না ছাড়া হলে ফারাক্কা ব্যারেজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পানি ছাড়ার ফলে গঙ্গা থেকে বিভিন্ন গ্রাম ও মাঠে পানি প্রবেশ করছে বলে নিউজ১৮-এর প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়,প্লাবনের আশঙ্কা করছেন মুর্শিদাবাদের মানুষ। বিহার,ঝাড়খণ্ডসহ গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে,যার ফলে হু হু করে বাড়ছে গঙ্গার পানির স্তর।
জানা যায়,ফারাক্কা ব্যারেজের আপ স্ট্রিমে পানি ধারণক্ষমতা ২৬.২৪ মিটার। বিপৎসীমা ২২.২৫ মিটার এবং সর্তকতাসীমা ২১.২৫ মিটার। ইতিমধ্যে আপ স্ট্রিমের ধারণক্ষমতা অতিক্রম করায় শনিবার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ গেট। ইতিমধ্যেই ১১ লাখ কিউসেকের বেশি পানি ছাড়া হচ্ছে ব্যারেজ থেকে। যদিও পদ্মায় পানি বাড়ায় প্লাবণের পরিমাণ আরও বাড়ছে।
ফারাক্কা বাঁধের এসব গেট খুলে দেওয়ায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায়। বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,পাবনা,সিরাজগঞ্জ,কুষ্টিয়া,রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মাঝে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি দরজা খুলে দিয়েছে ভারত। প্রবল বৃষ্টির কারণে দেশটির বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে বন্যা ও পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সোমবার এই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবেশি দুই রাজ্য—বিহার,ঝাড়খণ্ডে বন্যা দেখা দেওয়ায় ফারাক্কা বাঁধে পানির চাপ রয়েছে। তবে নেপালের পাহাড় থেকে এখনও কোনও পানি নেমে না আসায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমা থেকে ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গেট খুলতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফিডার ক্যানেলে পানির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের অবস্থান। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ১৯৬২ সালে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল।
সিলেট নিউজ/এসডি.