Categories
অপরাধ

শেরপুর মাছ ব্যবসায়ি হত্যার ৩ আসামি আটক।

 

মৌলভী বাজার বিশেষ প্রতিনিধি :

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সনকাপন গ্রামের খুচরা মাছ ব্যবসায়ী নুরুল হক (৫৩) হত্যার সাথে জড়িত তিন আসামীকে গ্রেফতার করেছে মডেল থানা পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো-
১। সাকিন (২৫), পিতা-মৃত আঃ হালিম, গ্রাম-শেরপুর নতুন বস্তি,
২। জুবেল মিয়া (২৩), পিতা-মৃত আব্দুল মালিক, সাং- ব্রাক্ষণগ্রাম, শেরপুর,
৩। ইকবাল হোসনে (৪৪), পিতা-মৃত শামসুল হুদা,সাং- শেরপুর।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন শেরপুর এলাকায় সারাদিন মাছ বিক্রি শেষে রাত হয়ে গেলে হতভাগ্য মাছ ব্যবসায়ী নুরুল হক রাত ৯ ঘটিকার দিকে তার স্ত্রীকে ফোন করে জানান যে, আজকে আর তিনি বাড়িতে আসবেন না। শেরপুরের পার্শ্বে কুশিয়ারা নদীর ফেরির জেটিতে ছোট একটি কামরার মতো জায়গাতেই রাত কাটিয়ে দেবেন। প্রয়োজন হলে,এরকম আগেও মাঝে মধ্যে তিনি করে থাকতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলে যা হয়। সেদিন রাতে অনুমান ১০.৩০ ঘটিকার দিকে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলো আসামী সাকিন, জুবেল, ইকবাল ও টিপু। এই চারজন মাদক সেবনসহ মাদকদ্রব্যের ভাগ বাটোয়ারা করছিলো সেখানে। এরই এক পর্যায়ে নুরুল হক জেটিতে গিয়ে দেখেন ভিতর থেকে প্রবেশ পথ বন্ধ। তখন ডাকাডাকি করতে শুরু করলে ভিতর থেকে আসামী সাকিন তাকে বলে যে, ভিতরে লোকজন আছে, যাওয়া যাবে না। তারপরেও নুরুল হক পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। এরপর আসামী সাকিন কপাট খুলে দিলে ভিতরে প্রবেশ করেন নুরুল হক। কিন্তু সাদাসিধে নুরুল হক ভিতরে ঢুকেই মাদকের কারবারি দেখে ঘাবড়ে যান এবং প্রতিবাদ করে বলেন তোমরা এগুলো কি শুরু করছো। এখানে এগুলো করতে পারবা না। আমি পুলিশকে এখনই সব বলে দিবো। তখন আসামীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পলটুনের পাশে রাখা কাঠের টুকরা দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। আঘাত প্রাপ্ত হলে নুরুল হক জেটির পলটুনে পড়ে যান। তখন আসামীগণ তার দেহ ধরে নদীতে ফেলে দেয়। বর্ষার রাত, নদীর তীব্র স্রোতের কারণে ভিকটিম নুরুল হকের লাশ ভাসতে ভাসতে চলে যায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের দিকে। ২৫/০৬/২০২০ তারিখ বিকেলে নুরুল হকের স্বজনরা এসে মডেল থানায় নিখোঁজ জিডি করেন। চারদিকে খোঁজাখুজি চলতে থাকে। পুলিশও সন্ধান করতে থাকে। ২৬/০৬/২০২০ তারিখে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে খবর আসে একটা লাশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে। পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে সনাক্ত করতে পারেন যে, এটা তাদের বাবার লাশ। পরবর্তীতে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল সম্পন্ন করে পোস্ট মর্টেমের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন এবং আসামী গ্রেফতারের কাজে নেমে পড়ে। মাননীয় পুলিশ সুপার, ফারুক আহমেদের দিক নির্দেশনায় মোঃ জিয়াউর রহমান, অতিঃ পুলিশ সুপার, সদর সার্কেলের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন, মডেল থানা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) পরিমল চন্দ্র দেব, এসআই/গিয়াস এর সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত টীম ব্যাপক অনুসন্ধানে নামে। ঘটনার ০৬ দিন পর ৩০/০৬/২০২০ ইং তারিখে মডেল থানার পুলিশ আসামী সাকিনকে গ্রেফতার করে এবং তার দেয়া তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে অপর আসামী জুবেল মিয়া, ইকবাল হোসেনকেও পরবর্তীতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীগণের মধ্যে ০২জন বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামী টিপু (৩০) পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান বলেন, হত্যাকারীদের যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেলক্ষ্যে পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করছে। সেই সাথে সামাজিক অবক্ষয় রোধেও জেলা পুলিশ মৌলভীবাজার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনই পুলিশের ব্রত।এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *