সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
পৃথিবীর আর কোন দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে পাবলিক “হলিডে” পালিত হয়েছে, বলতে পারেন? ‘সাধারণ ছুটি’র নামে প্রায় ৭০ দিন পোশাক শ্রমিক, শপিংমল নিয়ে হাজারো পরীক্ষা চলেছে কোন দেশে?
অথচ সেইইই মার্চেই এয়ারপোর্ট এলাকাগুলো “কমপ্লিট শাটডাউন” আর “রেড এলার্ট” দিয়ে কমান্ডো কন্ট্রোল করলে মশা-মাছিও ঢুকতে বা বের হতে পারতো না। আজ প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে করোনার বসতি।
কোন দেশের আমজনতাকে নিজ খরচে করোনা টেস্ট করাতে হচ্ছে, সিরিয়াল পেতে গভীর রাত থেকে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তায় শুয়ে থাকতে হচ্ছে, দালালদের থেকে সিরিয়াল কিনতে হচ্ছে, টেস্ট করেও রেজাল্ট পাচ্ছে না দিনের পর দিন, বলতে পারেন?
কোন দেশে করোনার সার্টিফিকেট মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে? কেউ চাকুরী বাঁচাতে পজিটিভ হয়েও ‘নেগেটিভ’ সনদ কিনে করোনা ছড়াচ্ছে বা বিদেশে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ‘উজ্জ্বল’ করছে। আবার কেউ ‘পজিটিভ’ সনদ কিনে দিব্যি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আয়েসে কাটাচ্ছে? আর কোন দেশের হাসপাতালে ‘করোনা নেগেটিভ’ সনদ ছাড়া সাধারণ রোগীকেও ভর্তি করছে না? বিশ্বের আর কোন সমাজে চলছে এই সনদ-বাণিজ্য, অমানবিকতা?
অথচ সবগুলো “পজিটিভ/নেগেটিভ” রোগীর তথ্যই সেন্ট্রাল করোনা ডাটাবেইজে NID-সহ থাকার কথা এবং সেই অনুযায়ী সনদ পাওয়ার কথা বা গোপন TAN, PIN বা পাসওয়ার্ড দিয়ে ডাউনলোড/প্রিন্ট করার কথা। ইমিগ্রেশন পুলিশ মুহূর্তেই সার্চ করে দেখতে পারবে যাত্রী করোনা পজিটিভ না নেগেটিভ!! অবশ্য যেদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও অনায়াসে পাসপোর্ট পেয়ে যায়, সেদেশে অসম্ভব বলে কী কিছু আছে?
“আমরা সিস্টেমের মধ্যে ঢুকে সিস্টেম চেঞ্জ করবো, সব ভাঙচুর করে ফেলবো”- এই হুঙ্কারে আমলা হয়ে এখন তারা লাল-হলুদ-সবুজ জোন তৈরিতে গভীর গবেষণারত! তো বিগত ৭০ দিনে এই জিআইএস ম্যাপিং না করে তারা কী রং মেখে সং সেজে বসেছিল? নাকি করোনা বিস্তার লাভ করলে ডাটা ভালো আসবে, মানচিত্র আরও রঙিন হবে, এই আশায় বুক বেঁধে ছিল? অনেক আগে একবার তারা আর্সেনিক-দূষণ রোধে টিউবয়েলগুলোতে লাল-সবুজ রং করেছিল, মনে আছে সেই রং করার পরিণতি?
আর কোন দেশে হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে অসহায় বাবা-মা’র কোলে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করছে ৪ বছরের শিশু? আল্লাহ্র কাছে গিয়ে কি বলবে সেই মাসুম বাচ্চাটি? আর কোথায় করোনা উপসর্গ নিয়েও টেস্টবিহীন মানুষগুলো মারা যাচ্ছে বা মারা যাওয়ার পর মৃতদেহ থেকে স্যাম্পল নেয়া হচ্ছে? লাশ দাফনের ১৫ দিন পর ঐ টেস্ট রেজাল্ট কি আত্মীয়-স্বজনরা দেয়ালে বাঁধাই করে রাখবে?
কোন দেশের মুক্তিযোদ্ধা বাঁচার জন্য একটা আইসিইউ পায় না, অথচ মৃত্যুর পর তাকে “তোপধ্বনি” দিয়ে বিদায় জানানো হয়?? স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের আশায় উনি যুদ্ধ করেছিলেন, নাকি মরার পর তোপধ্বনি শোনার আশায়? আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যারা আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আর যে দুজন মারা গিয়েছে, পারবেন তাদের জীবনের মূল্য দিতে?
অথচ সেই ৭০ দিনে বিমানবাহিনীর জাম্বোজেট গুলো কোরিয়া, চায়নায় উড়ে গিয়ে লাখ লাখ টেস্ট-কিট আর চিকিৎসা সামগ্রী আনতে পারতো। পারতো না? মালদ্বীপে তো ঠিকই ত্রানসামগ্রী পাঠানো হয়েছিল এয়ারফোর্সের প্লেনে!! বাটপারের দলদেরকে তো ঠিকই ভিসা ম্যানেজ করে চার্টার্ড প্লেনে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে!! ত্রাণ চুরির কথা আর না বলি!!!
লকডাউনের নামে ৭০ দিন লুকোচুরি না খেলে, প্রতিদিন কয়েক কোটি ডলার লস না করে মাত্র ২ সপ্তাহের জন্য যুদ্ধকালীন কারফিউ বা ১৪৪ ধারা দিলে সেই টাকায় কতগুলো টেস্ট-কিট কেনা আর পিসিআর ল্যাব বানানো যেত? কোটি টাকায় পর্দা আর ওয়েব-সাইট উন্নয়নে ব্যয় করে এখন কেমন বোধ করছেন? গবেষকরা হিসেব কষে দেখিয়েছেন, কঠোর লকডাউন আরোপ না হলে ইউরোপে ৩১ লাখ মানুষের মৃত্যু হতো!! কি বুঝলেন???!!!
পৃথিবীর আর কোথায় এই মহাদুর্যোগের ‘লড়াকু কমান্ডার’ একজন ডাক্তারকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে? আর কোন দেশে খুন-ধর্ষণের বিচার চেয়ে, এমনকি একটা পিসিআর টেস্ট ল্যাব বা আইসিইউ স্থাপনের জন্যও উত্তাল আন্দোলন করতে হয়? কোভিড মোকাবেলায় আর কোন দেশে ৯টি উচ্চপর্যায়ের কমিটি আছে, কিন্তু কোনো কমিটির প্রধানও নাকি জানে না কে বা কারা ছুটি বাতিল করাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়!! ভাবা যায় এগুলো??
আর কোন দেশে ব্যক্তি-উদ্যোগে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দৌড়াচ্ছে মানুষ? তিন মাসের রণ-প্রস্তুতি নিয়েও গ্রামে-গঞ্জে সিলিন্ডার পাঠানো গেলো না? এখনি যুদ্ধ লাগলে তো সারাদেশে বন্দুক-গুলিও পাঠাতে পারবেন না!! করোনা এসে ১২ বছরের উন্নয়নের লুঙ্গি মাত্র ৩ মাসেই ঢিলা হয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেল? এ কেমন লুঙ্গি??
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’- আসলেই পাবেন না। আমি গুগলে অনেক সার্চ দিয়েও পেলাম না!!
সারাবছর পড়াশুনা না করা ব্যাকবেঞ্চার ছাত্রটি পরীক্ষার আগের রাতে সিলেবাস দেখে মাথা চাপড়িয়ে সকালে “আল্লাহ্ ভরসা” বলে পরীক্ষায় বসে। আর ক্লাসের সবথেকে মনযোগী, পরিশ্রমী ছাত্রটি সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে “আল্লাহ্ ভরসা” বলে পরিক্ষায় হলে যায়।
আমরা সবাই ভালো ছাত্র হতে চেয়েছিলাম, মাননীয় স্পীকার!! Corona didn’t break the system, Corona just exposed a broken system, Your Honor!! সরকার একা কিছুই করতে পারবে না জদি না আমরা সকল শ্রেনির মানুস সঠীক পথে না আসি।এগুলি সব টিক হইত জদি সকল মানুসের ভিতর নিতি আদর্শ, মানবতা থাকত।এগুলি মুলত পারিবারিক শিক্ষা,সুশিক্ষা,সামাজিক মুল্যবোধ এর পরি পন্থি।জাদের ভিতর এগুলি আছে তারা চাইলে, তাদের স্বদইচ্ছায় দেশের সর্বক্ষেত্র টিক হয়ে যেত।আসুন আমরা সবাই মিলে সরকারকে সহযুগিতা করি।
লেখকঃ খাজা রহমান
২০/০৬/২০২০, জার্মানি।