শিরোনাম
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

” শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজা “।

Satyajit Das / ৩৭৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

রেখা পাঠক(প্রবাসী লেখক):দ্বিতীয় ধাপঃ-

প্রতিমা মূর্তি নয়, প্রতিমূর্তি। কথাটা আর কিছ নয়,ভাষা দ্বারা ধারণা করিবে,না চিত্র দ্বারা করিবে? ছাত্ররা জানে যখন ভাষায় কুলায় না,চিত্র স্পষ্ট করে। এমন নির্বোধও কেহ নাই যে প্রতিকৃতি সত্য মনে করে।” আচার্য যোগেশ চন্দ্র রায়ের লেখা ‘পূজা পার্বণ’বই থেকে উদ্ধৃত।আচার্যের এই বাণী বক্তব্যতে অতি সংক্ষেপে ভারতীয় বৈদিক সনাতনধর্মে বাঙ্ময়ী প্রতিমাকে বস্তুময়ী প্রতিমাতে আরাধনা করার বিধান স্পষ্ট প্রতীয়মান হল।সেই  সূত্রে অতীত,বর্তমান এবং ভবিষ্যতে বিদ্যাদেবী সরস্বতী পূজা ঋষিদের ধ্যান নেত্রের বাঙ্ময়ী মূর্তির জড়ময়ী প্রতিমাতে  মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে  শাস্রীয় বিধি বিধান মেনে শ্রদ্ধভরে অর্ঘ্য  নিবেদন। আচার্য যোগেশচন্দ্র রায় বলেন,” পুরাণকার দেবদেবী সন্মন্ধে নানাবিধ উপাখ্যান বর্ণনা করিতে পারেন। কাহারও প্রাধান্য বা প্রতিষ্ঠা প্রদর্শন করিতে পারেন, কিন্তু প্রতিমা- কল্পনায় গুরু পরম্পরা মানিয়া চলিতেন।আর যিনি কল্পনার গুরু,তিনি ধ্যানমন্ত্রে  প্রতিমার মূলভাব রক্ষা করিয়াছিলেন। ধ্যানমন্র বাঙময়ী প্রতিমা। শিল্পী সে মন্রের চাক্ষুষ রূপ নিমাণ করেন।”ঋষিদের ধ্যানমন্রের বাঙময়ী সরস্বতী  প্রতিমা  হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “পুরস্কার ” কবিতায় কবি মুখে বন্দিত দেবী সরস্বতীর রূপ এবং  গুণ। ঈশ্বর বা দেবতার স্তুতি বন্দনায় নিরাকার সাকার হবেন, কখনো বাণীর মাধ্যমে যেমন রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। কখনো জড়বস্তুর মাধ্যমে। জড় বস্তু বলতে শাস্ত্র সিদ্ধান্তে কী কী জড় বস্তু দ্বারা  প্রতিমা নির্মাণ করা যায়,তা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে,যেমন ” শৈলী দারুময়ী লৌহী লেপ্যা লেখ্যান সৈবতী। মনোময়ী মণিময়ী প্রতিমাষ্টাবিধা স্মৃতা”।শাস্ত্র মতে প্রতিমা নির্মাণে এই আট প্রকার বস্তুর মধ্য একটি উপাদান হল “মনোময়ী”। অর্থাৎ মানস প্রতিমা।রবীন্দ্রনাথ আর্যঋষির ধ্যাননেত্রের বাঙময়ী প্রতিমাকে তাঁর মনোলোকের বাণী দিয়ে নির্মাণ করেছেন সনাতনশাস্রের বিধিমেনেই। রবীন্দ্রনাথ  তাঁর মানস প্রতিমা বাক দেবীকে  নয়ন সন্মুখে  দর্শন  করার জন্য কী ব্যাকুলতা প্রকাশ করেছেন-” তুমি মানসের মাঝখানে আসি /দাঁড়াও মধুর মুরতি বিকাশি/ কুন্দবরণ সুন্দর  হাসি/ বীণা হাতে বীণা পাণি। অথবা “মধুর মধুর ধ্বনি বাজে/হৃদয়  কমলবনমাঝে।।নিভৃতবাসিনী বীণাপাণি/অমৃতমুরতিমতী বাণী/হিরণকিরণ ছবিখানি-/পরানের কোথা সে বিরাজে। মধুঋতু জাগে দিবানিশি/পিককুহরিত দিশিদিশি।মানসমধুপ পদতলে/মুরছি পড়িছে পরিমলে।এসো দেবী,এসো এ আলোকে,/একবার তোরে হেরি চোখে-/গোপনে থেকো না মনোলোকে/ ছায়াময় মায়াময় সাজে।।” গীতবিতান, পৃষ্ঠা ৩১৯।সংগীত নং৯।

সনাতনধর্মের রত্নভান্ডার মথিত করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে সুধাময়ী বাণী দিয়ে এই সুধাময়ী  সংগীতে দেবী সরস্বতীর যে হিরণ কিরণ প্রতিমা নির্মাণ করলেন,তার কোনো ভাষাগত বিশ্লেষণের তো কোনো ক্ষমতা নেই ই,তদুপরি এটা ই বলব যে ভারতবর্ষের অন্য কোনো কবি কী অন্য কোনো ভাষায় এমন বাণী দিয়ে এমন সরস্বতী প্রতিমা নির্মাণ করতে পেরেছেন? হয় নাই,কখনো হবে না। কারণ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই যে সরস্বতী কিম্ভা সরস্বতীর  বরপুত্র। সংস্কৃত ভাষায় সরস্বতীর বরপুত্র ছিলেন  মহা কবি কালিদাস আর আধুনিক কালে বাংলা  ভাষায় বঙ্গ-ভারতের গগন তটে এক রবীন্দ্রনাথ। নিরাকার ব্রহ্মকে নিয়ে কাব্য-সাহিত্য, শিল্প সংস্কৃতির কিছু ই  সৃষ্টি  করা যায় না।রবীন্দ্রনাথ  যখন বলেন ” তোমার চরণ ধুলায় ধুলায় ধুসর হব।” তখন কী নিরাকার ব্রহ্মের চরণের ধুলার কথা বলেন?প্রকৃত পক্ষে যে বা যাদের কোনো ঈশ্বর অনুভূতিই নেই,ঈশ্বরে কোনো আত্মনিবেদন নেই, ঈশ্বর  আরাধনায় কোনো সাত্ত্বিক  আনন্দ  নেই, সে বা তারা কী করে জীবন কাটাবে? এই নিরানন্দময়
মনুষ্য গুলোই ঈশ্বর সাকার না নিরাকার,মূর্ত না অমূর্ত,প্রতিমা কেন মাছি টি তাড়াতে পারেনা এই সব কুতর্কের সাধনায় রত থাকে। নিজেদের  মনে,জীবনে,সমাজে ধর্মে দর্শনে যেমন কোনো ও বিশুদ্ধ  আধ্যাত্মিক আনন্দ  লাভ করতে পারেনা,তেমনি অন্যের বিরোধিতা ছাড়া আর কোনো আনন্দ খুঁজে পায় না।আমাদের সনাতনধর্ম  ও সংস্কৃতি অতি প্রাচীন,অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও সমুন্নত,তা যেমন আমাদের গর্ব,তেমনি মানব জাতির  কাছে ও এক অমূল সম্পদ।

আমাদের  বৈদিক দর্শন,আর্য ঋষি মুনিদের ভাবধারা,আমাদের বেদ- উপনিষদ, গীতা-ভাগবত,অষ্টাদশ পুরাণ-উপপুরাণ এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ মহকাব্য রামায়ণ,মহাভারত গ্রন্থদ্বয় সারা বিশ্বে পঠিত,সমাদৃত এবং অনুশীলিত। এক কথায় সনাতনের রত্নভান্ডার অগাধ,অনন্ত অসীম।
সনাতনের রত্নভান্ডার হতে আহরণ করে বলি,সমস্ত,বিশ্ব যখন পরা-অপরার জ্ঞানের আলো  হতে বঞ্চিত ছিল, তখন ভারতবর্ষ  ছিল  সে আলোয় আলোকিত।

“ঋগ্বেদ হল সনাতনধর্মের প্রথম গ্রন্থ। শুধু ধর্মীয় গ্রন্হ নয়। উহা প্রাচীনতম আর্য ধর্মের ও আর্য সভ্যতার অকৃত্রিম প্রতিচ্ছবি”। ঋগ্বেদ বিশ্বের ও প্রাচীনতম গ্রন্থ এবং সমৃদ্ধ বিজ্ঞান সহ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ গ্রন্থ। সনাতনধর্মের প্রথম ধর্মীয় সাহিত্য গ্রন্থ ঋগ্বেদ একেশ্বরবাদী। সৃষ্টি কর্তা ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ঋগ্বেদ বলছেন,” একং সদ্ বিপ্রা বহুদা বদন্তি”(ঋক্ ১।১৬৪।৪৬।) ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় হলেও ঋগ্বেদে ইন্দ্র,অগ্নি,সূর্য,বরণ প্রভৃতি বৈদিক দেবতা গণের স্বস্তি -স্বস্তিতে পূর্ণ। এই দেবতরা কিন্তু ঈশ্বর বা সৃষ্টি কর্তা নন। তাঁরা ঐঁ এক ঐশী  শক্তির বিভিন্ন প্রকাশ মাত্র। ঋগ্বেদ বলেন, “যিনি আমাদিগের পিতা ও জন্মদাতা,যিনি বিশ্ব ভুবনের সকল স্থান অবগত আছেন, যিনি অনেক দেবগণের নাম ধারণ করেন,কিন্তু তিনি এক ও অদ্বিতীয়। ভুবনের লোক তাঁকে জানতে ইচ্ছা  করে।(‘যো দেবানাং নামধা এক এব’ইত্যাদি, ঋক্ ১০।৮২।৩।)ঋগ্বেদীয় ধর্ম কর্ম ছিল যাগযজ্ঞাদি।বেদই সনাতনধর্মের মূলভিত্তি। এই জন্য সনাতনধর্মকে বলে বৈদিক ধর্ম। বেদ চার খানা  ঋগ্বেদ,সাম বেদ,যজুর্বেদ ও অথর্ব বেদ। বেদকে চার ভাগে বিভক্ত করেন মহর্ষি কৃষ্ণদৈপায়ন বেদব্যাস। বেদ প্রাগৈতিহাসিক গ্রন্থ বলে এর প্রাচীনতা নিয়ে দেশী-বিদেশী পণ্ডিতদের নানা মত রয়েছে। তবে যত মত ই থাকনা কেন,ঋগ্বেদের প্রাচীনতা খ্রিস্টপূর্ব ছয় হাজার বর্ষ হবে বলে অনেক পণ্ডিতের ধারণা।

এই প্রসঙ্গে বৈদিক ধর্মের  ক্রমবিকাশ এবং  সনাতনধর্মের বিভিন্ন অঙ্গ নিয়ে কিঞ্চিৎ  আলোকপাত  করব। বেদের কারণে বৈদিক ধর্ম  যাগযজ্ঞ প্রধান হয়ে ওঠলে ও  বৈদিকধর্ম কেবল  অগ্নিতে ঘৃতাহুতি এবং দেবতার দের নিকট গো-বৎসাদির জন্য প্রার্থনাই নয় বরং খোদ ঋগ্বেদের ঋষি জগৎ-প্রপঞ্চের অতীত অর্থাৎ এই জড় জগতের অতীত অদ্বয় অব্যক্ত তত্ত্বের সন্ধান  লাভ করেছিলেন। সেই তত্ত্বই জগতের সৃষ্টি কর্তা ঈশ্বর  এক ও অদ্বিতীয় এবং দেবতাগণ সেই ঐশী শক্তির বিভিন্ন বিকাশ। বিভিন্ন দেবতার বিভিন্ন  রূপ ও সংস্কৃতি। এই জন্য সনাতন ধর্মে এত বৈচিত্র্যময় নান্দনিক সংস্কৃতির সমাহার। সনাতন ধর্ম কোনো নির্দিষ্ট দিন তারিখে,একক কোনো ব্যক্ত৷ দ্বারা সৃষ্ট  কোনো ধর্ম নয় এবং গতিহীন,সংস্কার হীন বদ্ধ জলের ডোবা ও নয়। সনাতনধর্ম গতিশীল এবং  সংস্কার মূলক ধর্ম।এই প্রসঙ্গে বৃহস্পতি সংহিতার এই উক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণঃ-
“কেবলং শাস্রমাশ্রিত্য ন কর্তব্যো বিনির্ণয়ঃ।
যুক্তিহীন-বিচারেণ ধর্মহানিঃ প্রজায়তে।।”
এর অর্থ হল হাজার হাজার বছর পূর্বে প্রবর্তিত কোনো শাস্ত্রবীধি যদি অবস্থার পরিবর্তনে সমাজ রক্ষার প্রতিকূল বলে মনে হয়,তবে তা অবশ্যই ত্যাজ্য,কেননা যুক্তিহীন,গতানুগতিক ভাবে শাস্র অনুসরণ করলে ধর্মহানি হয়। বশিষ্ঠ সংহিতায় বলা হয়েছে-“অন্যং তৃণমিব ত্যজ্যমপু্যক্তং পদ্মজন্মা”;- এর অর্থ হল,স্বয়ং ব্রহ্মা ও যদি অযৌক্তিক কথা বলেন,তবে ত তৃণবৎ পরিত্যাগ করবে। এই জন্যই সনাতনধর্ম সংস্কৃারবাদী ধর্ম। যুগোপযোগী ধর্ম।

ক্রমে সনাতনধর্মে যাগযজ্ঞাদির প্রাধান্য বৃদ্ধি পেলে বৈদিক ধর্ম সম্পূর্ণ কর্ম প্রধান হয়ে ওঠে। জ্ঞান, ভক্তি নির্থক। কিন্তু আর্য মনীষা কেবলই কর্মবাদে বেশি দিন সন্তুষ্ট থাকতে পারলেন না,তাঁরা অমৃতের সন্ধানে অনুসন্ধিসু হয়ে বেদার্থবিন্তনে নিমগ্ন হয়ে স্হির করলেন যে,নামরূপাত্মক দৃশ্য প্রপঞ্চের অতীত যে নিত্যবস্তু আছেন,তাঁকে জ্ঞান৷ যোগে জানতে হবে। তাই পরতত্ত,তা-ই ব্রহ্ম। এ ভাবে বৈদিক ধর্মের দুই স্বরূপ দেখা দিল। বেদের সংহিতা ও ব্রাহ্মণ ভাগ নিয়ে কর্মকাণ্ড এবং আরণ্যক ও উপনিষদ ভাগ নিয়ে জ্ঞানকাণ্ড। অর্থাৎ ব্রহ্মতত্ত।

উপনিষদ স্থির করলেন যে,দেহ মাঝে অন্তর্যামী রূপে যিনি বিরাজমান তা-ই ব্রহ্মাণ্ডের মূলতত্ত্ব পরব্রহ্ম-যা পিণ্ডে তা-ই ব্রহ্মাণ্ডে। তখন-ই উপদেশ হল ‘আত্ম বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো মন্তব্যো নিদিধ্যাসিতবসঃ’ আত্মাকে দর্শন করবে, শ্রবণ করবে, মনন করবে,ধ্যান করবে। এইরূপ আত্মচিন্তা -দ্বারা ব্রহ্মোপাসনার যে প্রণালী কথিত হল উহাই সমাধিযোগের মূল। এই রূপে উপনিষদের জ্ঞান মার্গ হতেই যোগপ্রণালীর উদ্ভব  হয়েছে। এই প্রণালীই যম,নিয়ম,আসন,প্রাণায়ামাদি বহিরঙ্গ সাধন সংযুক্ত হয়ে ক্রমোন্নতি লাভ করতঃ অষ্টাঙ্গযোগ নামে পরিচিত হয়েছে।যোগমার্গ অতি প্রাচীন।
উপনিষদের পর বৈদিক সনাতনধর্মের ক্রম বিবর্তনে আসে প্রতীকোপাসনা ভক্তিমার্গ। বস্তুতঃ উপনিষদে ব্রহ্মস্বরূপের সগুণ ও নির্গুণ উভয়বিধ বর্ণনাই আছে। বলা হয় যে শাণ্ডিল্য ঋষি সগুণ উপাসনা বা ভক্তিমার্গের প্রবর্তক। স্থূলকথায় ভক্তিমার্গ বেদোপনিষদ হতেই বহির্গত হয়েছে এবং  পরে অবতারবাদ  ও প্রতিমা পূজার  প্রবর্তন হলে উহা নানা শাখা-প্রশাখায়  বিভক্ত হয়ে পূর্ণাবয়ব  প্রাপ্ত হয়েছে।

বৈদিক  সনাতনধর্মের ক্রমবিব্তণের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় দেখা যায় যে সনাতনধর্মে ঈশ্বর নির্গুণ নিরাকার,আবার সগুণ সাকার। ঈশ্বরের সগুণ সাকার উপাসনাই প্রতীক/প্রতিমার মাধ্যমে  উপাসনা।  সনাতনধর্মে হঠাৎ করে , কারো মনগড়া ভাবে প্রতিমার মাধ্যমে  পরব্রহ্মের কিম্ভা ঈশ্বরের  বিভিন্ন  শক্তির  প্রকাশ যে বিভিন্ন  দেব- দেবীর পূজা শুরু হয় নি। সবই ধ্যানমগ্ন ঋষিদের বেদচিন্তনের ক্রমবির্তনের ফল।

প্রেরকঃ সত্যজিৎ দাস(স্টাফ রিপোর্টার)।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন