সিলেট নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে গত ২৭ বছরে ১৪ হাজার ৪২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ৬২টি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে চালু থাকা ১৪ হাজার ৩৬৩টি ক্লিনিকের মধ্যে ৫ হাজার ৮০টি ঝুঁকিপূর্ণ,যা মোট চালু ক্লিনিকের প্রায় ৩৫ শতাংশ। এসব ক্লিনিক নতুন করে স্থানান্তর বা পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে।
এই তথ্য জানিয়েছেন কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। গত বুধবার (২০ আগস্ট) ঢাকার মহাখালীর বিএমআরসি সম্মেলন কক্ষে ‘কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।
আখতারুজ্জামান জানান,সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে নতুন করে ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হবে। প্রকল্পে অর্থায়ন করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। শহর এলাকাতেও ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে,যদিও সেখানে জমি পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান,পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য বা আধা ঘণ্টার হাঁটার দূরত্বে একটি ক্লিনিক থাকার কথা। তবে পাহাড়ি অঞ্চল,হাওর ও চর এলাকায় এ ব্যবধান অনেক বেশি-কখনও ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেবাদানকারীদের ওপর চাপ বাড়ছে।
ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ সংকট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইডিসিএল থেকে ১২০ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে,যা এক সপ্তাহের মধ্যে সব ক্লিনিকে পৌঁছে যাবে। আরও ২০০ কোটি টাকার ওষুধ দ্রুত কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে ক্লিনিকে কর্মরত ১৩ হাজার ৯৮৯ জনের বেতন-ভাতা বাবদ ৪২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য সেবা বাবদ ২১৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ৬৭১ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার গত ১৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না,যা দ্রুত সমাধানের আশা করছেন তিনি।
সেমিনারে ট্রাস্টের পরিচালক (মাঠ প্রশাসন) ডা. আসিফ মাহমুদ জানান,বর্তমানে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন রোগী সেবা পান। সারা দেশে দৈনিক প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার মানুষ এই সেবা গ্রহণ করেন। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১৬ কোটি রোগী।
ক্লিনিকগুলোতে ১৬ ধরনের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা সেবা এবং বিনামূল্যে ২২ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। গুরুতর রোগীদের নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আখতারুজ্জামান জানান:
৭২% মানুষ মনে করেন জনস্বাস্থ্যসেবার জন্য আলাদা সুবিধা জরুরি।
৯২% নাগরিক চান স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় সরকার বহন করুক।
৯৭% মানুষ চান স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হোক।
এসব চাহিদা পূরণে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সিলেট নিউজ/এসডি.