সিলেট,কানিজ আমিনাঃ
আসসালামু আলাইকুম।
কাওসার চৌধুরী
ওয়া আলাইকুম সালাম।
কেমন আছেন?
আমি ভালো আছি। তবে এই করোনা মহামারিতে সারা পৃথিবীর মানুষ অবরুদ্ধ। সবার মাঝে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা। আশা করছি, খুব শীঘ্রই করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে। মানুষ নতুন করে নিঃশ্বাস নেবে।
আপনার শৈশব সম্পর্কে কিছু বলুন।
আমার শৈশব, কৈশোরের দূরন্ত সময়গুলো কেটেছে গ্রামে। আমি একজন কৃষকের সন্তান। অনেক অভাব-অনটন আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছি বলে ছোটবেলা থেকেই বাস্তববাদী ছিলাম। পরিশ্রম আর সদিচ্ছার জোরে এ পর্যন্ত এসেছি। গ্রামে বড় হয়েছি বলে অনেক মানুষের সাথে উঠাবসা করেছি। প্রত্যক্ষ করেছি মানুষের জীবন সংগ্রাম। একজন কিশোরের মানসিক বিকাশের জন্য তা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।
লেখালেখির সূচনা কিভাবে হলো?
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই ডায়রি লিখতাম। ছড়া-কবিতার মতো কিছু একটা হবে হয়তো। সেগুলো ছড়া-কবিতা হলো কিনা সে ভাবনা তখন ছিল না। ছোটবেলা থেকেই খুব নিরিবিলি আর ভাবুক ছিলাম; আনমনে কিছু একটা ভাবতে ভালো লাগতো। পরে সেই ভাবনাগুলো ডায়রিতে লিখতাম। অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর গল্প লিখার চেষ্টা করি; তখন গল্প লিখেছি ১০-১২টির মতো। এখন অবশ্য এগুলো পড়লে হাসি পায়। সিরিয়াস লেখালেখি শুরু করি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে। আমার অনেক লেখা তখন পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে ছাপা হয়েছিল। লেখক হবো কিংবা বই বের করবো সেই ভাবনা কখনো মাথায় আসেনি; লিখতে ভালো লাগতো তাই লেখা। পরবর্তীতে ‘সামহোয়্যারইন’ ব্লগে লিখে এবং গুণী লেখকদের লেখা পড়ে লেখালেখি নিয়ে অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ে জানার সুযোগ হয়। ব্লগে আমার লেখাগুলোও পাঠকপ্রিয়তা পায়, এতে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ব্লগে মূলত, প্রবন্ধ আর ফিচারধর্মী পোস্ট বেশি লিখতাম। গল্প লেখা ও অনুবাদ করা শুরু করি আরো পরে।
এ ব্যপারে কে আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন?
লেখালেখির শুরুতে কারো অনুপ্রেরণা পাইনি, তবে পরবর্তী সময়ে অনেকেই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
আপনার লেখা ছোটগল্পের বই ‘বায়স্কোপ’ ও ‘পুতুলনাচ’ সম্পর্কে কিছু বলুন।
বিশ্ব সাহিত্যের সেরা লেখকদের গল্পগুলো পড়েই ছোটগল্প লিখতে আগ্রহী হয়ে উঠি। তবে বই বের করার কোন তাড়া ছিল না। ২০১৮ সালে হুট করেই কয়েকটা গল্পের একটি পান্ডুলিপি ‘উৎস প্রকাশনী’-তে পাঠাই। প্রকাশকের পছন্দ হওয়ায় এর মধ্যে ১১টি গল্প মলাটবন্দী হয়। বায়স্কোপ বইটি ২০১৯ সালের বইমেলায় এই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।এটি পাঠকমহলে আলোচিত হয় এবং পাঠকপ্রিয়তা পায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের বইমেলায় ছোটগল্পের বই ‘পুতুলনাচ’ একই প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।
বায়স্কোপ আর পুতুলনাচ নাম দুটিতে গ্রামীণ মেলার আবহ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?
একটা সময় বায়স্কোপ আমাদের গ্রামীণ জনপদের খুব জনপ্রিয় বিনোদন ছিল। গ্রামীণ মেলা বায়স্কোপ ছাড়া কল্পনা করা যেত না। এখন কালের আবর্তে তা হারিয়ে গেছে। এই বায়স্কোপের সাথে অনেক মানুষের আবেগ আর জীবিকা নির্ভর করতো। এ বিষয়ে একটি গল্প আছে “বায়স্কোপ” বইতে। আর হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দিতে বইটির নাম “বায়স্কোপ” রাখি। আর “পুতুলনাচ” গল্পে বর্তমান সমাজের অসঙ্গতি গুলো উঠে এসেছে। তথ্য-প্রযুক্তির অতি সহজলভ্যতা আর ব্যবহার মানুষের চিন্তা শক্তিকে দূর্বল করে দিচ্ছে। মানুষের স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোতেও অনেক মিথ্যা জায়গা করে নিয়েছে। মানুষ বই বিমুখ হচ্ছে।
আপনার অনুবাদ বই ‘নেকলেস’ নিয়ে কিছু বলুন।
“নেকলেস” বইয়ে মোট আটটি গল্প আছে। এগুলো বিশ্ব সাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম সেরা গল্প। বাংলা সাহিত্যের পাঠকরা যাতে মাতৃভাষায় এসব গল্প পড়ার সুযোগ পান সেই ভাবনা থেকেই গল্পগুলো অনুবাদ করি। বইটি প্রকাশ করেছে “শিখা প্রকাশনী”।
লেখা নিয়ে আপনার আগামী পরিকল্পনা কি?
আসলে লেখা নিয়ে কখনো কোন পরিকল্পনা ছিল না, এখনো নেই। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। তবে, বই বের হওয়ার পর থেকে দায়িত্বটা বেড়ে গেছে। চেষ্টা থাকবে লেখার মানটা আরো ভালো করার। যত বেশি লিখবো ততো অভিজ্ঞতা বাড়বে। লেখার মান আর ভাবনায় আরো পরিপক্কতা আসবে। ভবিষ্যতে গল্প ও অনুবাদের পাশাপাশি প্রবন্ধ আর উপন্যাস নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। আগামী বইমেলায় প্রবন্ধের বই আসার সম্ভাবনা আছে।
বর্তমান সময়ের সাহিত্য নিয়ে কিছু বলুন।
সাহিত্য হচ্ছে চলমান সময়ের প্রতিচ্ছবি। বর্তমান সময়ে ভালো মানের সাহিত্য লিখছেন এমন লেখকের সংখ্যা কম নয়। তবে, জনপ্রিয় লেখক আর ভালো লেখক এক বিষয় নয়। কেউ মোটামুটি মানের লিখেও খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন, আবার অনেকে ভালো লিখেও সেভাবে পরিচিতি পাচ্ছেন না।
তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
আমি নিজেও তরুণ। লেখক হয়ে উঠিনি এখনো। লিখছি মনের খেয়ালে। আরো কয়েক বছর লিখে যদি পাঠকের স্বীকৃতি পাই, লেখার মান ভালো হয় তাহলে হয়তো লেখক হিসাবে একটা অবস্থান হবে। আমি মনে করি, লেখক হবো কিংবা বই বের করবো এসব ভাবনা থেকে লেখা যাবে না। লিখতে হবে মনের আনন্দে। লেখার প্রতি এই ভালোবাসা আর গভীর ভাবনা একটা সময় আপনাকে লেখক হিসাবে পরিচিত করে তুলবে। রাতারাতি পরিচিতি/খ্যাতির চিন্তা করা যাবে না। লেখক হতে সময় লাগে, পরিশ্রম করতে হয়। থাকতে হয় নিজস্ব চিন্তাশক্তি। প্রচার নয়, লেখকরা নিভৃতে লিখবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।