জাকির হোসেন, বরিশাল প্রতিনিধিঃ
মমতাময়ী মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে দুটি অবুঝ বাচ্চা। কখন মা ফিরে আসবে, কখন তাদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিবে সেই আশায় প্রহর গুনছে মা হারা সন্তানরা।
অজান্তের মনের কোণে ভেসে উঠে,,
“মা মাগো ফিরে এসো। আমাদের ছেড়ে থাকতে তোমার কি একটুও মায়া লাগেনা। আমাদের কথা কি তোমার একটিবারও মনে পরে না। মা দেখে যাও তুমিহীন ছোট ভাইটি এক লোকমা ভাতও খেতে চায় না। ঘরের যে দিকেই তাকাই কেবল তোমাকেই দেখতে পাই, হাহাকার করে আমাদের সুখে ভরা ঘর খানি” । কথা গুলো এমনি ভাবে ঘুচিয়ে বলতে না পারলেও কথা গুলো এমনই ছিলো। মাকে ফিরে আসার আকুতি জানিয়ে অশ্রু ভেজা নয়নে বৃষ্টি (১০) গগনফাটা আর্তনাত করছিলো। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের খেজুরবাড়ি গ্রামে বৃষ্টিদের বাড়ি। পিতা মো. শাহ আলম হাওলাদার বানারীপাড়া পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের মরহুম আব্দুল মতিন মৃধার লিভার ব্রাদার্সের ডিলারশিপে শ্রমিকের কাজ করতেন।
তারা ডিলারশিপ ছেড়ে দেয়ার পরে কিছুদিন কর্মহীন থাকতে হয় শাহ আলমকে। দুটি সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে বড়ই বিপাকে পড়তে হয় তাকে। এরপরে কয়েকদিন রাজ মিস্ত্রীর কাজ করেণ সে। তবে একদিন কাজ হলে পরের দিন হতো না। সন্তানদের লেখাপড়াও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এরই মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ঠিক করেণ তারা ঢাকা যেয়ে দু’জনেই কোন কারখানায় কাজ করবেন। যে কথা সেই কাজ ২০২০ সালের প্রথম দিকে তারা রাজধানীতে যায় কাজের সন্ধানে। প্রথমে স্ত্রী ফাতেমা আক্তার গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। কিছুদিন কাজ করার পরে তার চলন-বলন বদলাতে থাকে। স্বামী ও সন্তানেদের ওপরে তার অনাগ্রহ দেখতে পায় শাহ আলম। দিনের পর দিন আচরণ ও পোষাকের ধরণ উচ্চবিলাসী হতে থাকে।
তখন স্বামী শাহ আলম ঠিক করেণ তিনিও কাজে যোগ দিবেন। তবে তার আর কাজে যোগ দেয়া হলোনা। একদিন স্ত্রী ফাতেমা আক্তার কাজে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি। ওইদিন বিকেল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল স্ত্রীর কোন সন্ধান করতে পারলো না স্বামী শাহ আলম। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হবার পরে ঢাকার বাসা ছেড়ে বড় মেয়ে বৃষ্টি ও একমাত্র ছেলে সিফাত (৭) নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে শাহ আলম হাওলাদার।
যেদিন বৃষ্টি ও সিফাতের মা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন সেই থেকে বর্তমানে প্রায় ১ বছর পেড়িয়ে গেলেও স্বামী ও সন্তানদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি ফাতেমা আক্তার (২৭)। বৃষ্টি ও সিফাতের নানা শাহজাহান ফকিরের বাড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের উত্তরকুল (বাংলাবাজার) গ্রামে। সেখানে দু’ভাই বোন প্রায়ই বেড়াতে যায় মায়ের সন্ধান নানা-নানুর কাছ থেকে পাওয়ার আশায়। তবে তাদের মা (ফাতেমা) তার পিতা-মাতার (নানা-নানুর) সাথে কথা বললেও একটি বারের জন্যও নারীছেড়া সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করেণা বলে জানায় হতভাগী বৃষ্টি। তবুও নানুর কানের সাথে কান লাগিয়ে মায়ের কথা শুনে অশ্রুশিক্ত নয়নে যেন, মনের শান্তনা খুঁজে পায় দুটি ভাই-বোন।
যে বয়সে মায়ের আদর পেয়ে বেড়ে ওঠার কথা সে বয়সে অবুঝ দুটি ভাই-বোন অসহায় দৃষ্টিতে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকে এই বুজি মা এসে ডাক দিলো, বৃষ্টি-সিফাত কোথায় তোরা আয় বুকে আয়। পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে নিয়ে আজও তাদের মা শীতল করলোনা দুটি অবুঝ হৃদয়। সন্তান দুটির মুখপানে তাকালে যেন, মনে হয় পৃথিবীর সব দুঃখ কষ্ট ওদেরকে গ্রাস করে আছে। কি দোষ এই অবুঝ সন্তানদের, কি পাপ করেছিল ভাইবোন। কেন তারা আজ নির্মম পরিনতির স্বিকার। পৃথিবী কি এই দুঃখের অবসান ঘটিয়ে সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব.