দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি:
মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে কাজ করছেন ২৮ বছর ধরে। বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের তিনি সন্তানের মতই মমতা ও ভালবাসা দিয়ে আগলে রাখেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সর্বদা ভাল-মন্দ বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে ভোলেন না শত ব্যস্ততার মাঝে। গ্রামের মানুষের কাছে তিনি গরিবের শিক্ষক হিসাবে পরিচিত।
চলাফেরা ও জীবন যাপন করেন সাদামাটা ভাবে। নিজের আদর্শ ধরে রাখতে চান মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। রঙ্গাচর-হনিরাপাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদের শিক্ষকতা জীবনের গল্প।
সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক আহমেদের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রঙ্গারচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭০সালের ৩০শে জুন। তিনি রঙ্গারচর-হরিপাটি উচ্চা বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন।
১৯৮৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৯০ সনে ডিগ্রি পাশ করেন, পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৯৫ সালে রঙ্গারচর- হরিনাপাটি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন,
রঙ্গারচরসহ পার্শবর্তী গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ছিল দরিদ্র। তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুলে পাঠাতেন না। স্কুলের ক্লাস শেষে নিয়মিত গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে ঘুরে ঘুরেল অভিভাবকদের সাথে কথা বলে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার জন্য বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলতেন। আস্তে আস্তে ছেলে-মেয়েরা স্কুল মুখি হতে শুরু করলো। গ্রামে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো।
শিক্ষার্থীদের ক্লাসের পড়া তিনি ক্লাসে শেষ করান। যারা দুর্বল শিক্ষার্র্থী তাদেরকে বাড়িতে আলাদাভাবে পড়াতেন।তিনি শিক্ষকতাকে আদর্শ ও মহৎ পেশা হিসাবে বুকে ধারণ করেন।
শিক্ষক ফারুক আহমেদ বলেন, অল্প বয়সে স্কুলের মেয়েদের অভিভাবকরা বিয়ে দিতো। আমি বিষয়টি জানা মাত্র বাল্যবিয়ে বন্ধ করতাম। বাল্যবিয়ের ভয়াবহতা কি তা বুঝাতে পারতাম। কয়েক মাস আসে স্কুলের ৯ম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন হচ্ছে শুনে তাদের বাড়িতে যাই। পরিবারের সদস্যদের বুঝাতে সক্ষম হই বিয়ে না দেওয়ার জন্য। বই, খাতা, কলম ও পোশাকের অভাবে অনেকের পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছে শুনে আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে বলেছি, তোমরা স্কুলে আসো আমি সব ব্যবস্থা করবো।
এসএসসি পাশ করার পর অনেকে কলেজ ও কলেজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে না টাকার অভাবে। তাদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন ফারুক আহমেদ। সর্বদা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন। বর্তমানে তার অনেক ছাত্র ভালো অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে বিসিএস ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সুনামের সাথে চাকরি করছেন।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চান তিনি।