শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উপ-স্ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) মিঠুনের দাপট কোথায়?

সিলেট নিউজ ডেস্ক / ৬৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি ঃ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) পদে চাকরি করছেন মিঠুন সরকার। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে নিজ চেম্বারে বসেন নিয়মিত। সেখানে তিনি নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দেন! এমনকি তার দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ রোগীরা। অভিযোগ রয়েছে- সরকারি ওষুধ বিক্রি, বিভিন্ন অপারেশন এবং গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারির নামে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার। দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়ে ফেসবুকে ঝড় তুলছেন ভুক্তভোগী রোগীসহ স্থানীয়রা।

মিঠুন সরকার প্রায় দুই বছর ধরে শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্বে আছেন। এখানে কাগজে কলমে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার পদে থেকে বেতন ভাতা নিলেও এখানে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল অফিসার না থাকায় সেকমো চিকিৎসক নিজেকে বড় ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ রোগীদের সঙ্গে প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করছেন বলে চাউর রয়েছে। কয়েকদিন পর পর রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের দায়ে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন ইতোমধ্যে তিনি।

জানা যায়, সম্প্রতি স্থানীয় নয়াবন্ধ মেরাজুল ইসলাম তার অসুস্থ্য শিশুকে নিয়ে সেকমো চিকিৎসকের কাছে যান। গিয়ে দেখেন তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। প্রায় ৪০ মিনিট পর তাকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার কথা বল্লে তিনি রেগে যান এবং তাকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে নিরুপায় হয়ে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে মাটিয়ান হাওর পাড়ি দিয়ে তিনি শিশুকে তাহিরপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান। গত কয়েকদিন আগে তরং গ্রামের মুক্তার হোসেন আখঞ্জি চিকিৎসা নিতে গেলে তার সঙ্গেও একই আচরণ করেন। মদনপুর গ্রামের ইতিরানি পাল তার শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে তিনি একই আচরণ করে হাসপাতাল থেকে ধমক দিয়ে বের করে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১০ই জুন বরগুনা জেলার আমতৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অসৎ আচরণের দায়ে বদলি হয়ে শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগদান করেন তিনি। এখানে যোগদানের পর থেকেই একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিভিন্ন টিউমার অপারেশনের কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অফিস টাইমে চিকিৎসা না দিয়ে শ্রীপুর বাজারে তার ব্যক্তিগত চেম্বারে ফি নিয়ে রোগী দেখেন তিনি। নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে তাহিরপুর (খলাহাটি) গ্রামের সবুল বর্মনের মেয়ে স্মৃতি বর্মণকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।

তরং গ্রামের মুক্তার হোসেন আখঞ্জি বলেন, তার খারাপ আচরণে এখানকার রোগীসহ এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। সে এলাকার মানুষকে মানুষ মনে করেনা। সে বলে এখানকার ৯০ ভাগ মানুষ মুর্খ, মাদক সেবী এবং জুয়া খোর। রোগিদের সঙ্গে খারাপ আচরণের দায়ে ইতিমধ্যে কয়েকবার লাঞ্ছিত ও চড় থাপ্পড় খেয়েছে সে। স্মৃতি বর্মন নামে নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে আবার সে বিয়ে করেছে তাহিরপুরে।

তার প্রাপ্তন স্ত্রী সেকমো চিকিৎসক চন্দ্রিমা দি মোবাইল ফোনে জানান, মিঠুন সরকার একজন বদমেজাজি ও লোভী। তার বদমেজাজের কারনে আমতলৈ উপজেলা সদর হাসপাতাল থেকে তাকে বদলি করা হয়েছে। তার বাবা একজন চা বিক্রেতা, কিন্তু সে আমাকে বলতো তার বাবা বরিশালের একজন বড় ব্যবসায়ী। সে আমাকে নির্যাতন করে কৌশলে সোনালী ব্যাংক থেকে আমার নামে মোটা অংকের লোন নিয়ে তার বোনকে বিবাহ দিয়েছে। ব্যাংকের ঋন শোধ না হওয়া পর্যন্ত আমি এখন সরকারি মাসিক বেতন তুলতে পারছিনা। সে সহ তার মা বাবা আমার ২২ মাসের একটি শিশু সন্তানকে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মেরে ফেলেছে। পরে নাটক সাজিয়েছে পানিতে পড়ে সে মারা গেছে। আইনগত ব্যবস্থা নেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছেলেকে যখন জীবিত পাবোনা তখন মামলা করে কি হবে!। তিনি আরো বলেন, আমাকে বরগুনা রেখে আমার ২২ মাসের দুধের শিশুকে সে তার মা বাবার কাছে বরিশাল নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আমার ছেলের চোখে মারাত্মক আঘাত করে। পরে ছেলেটার মৃত্যু হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য বার বার বলেছি, কিন্তু সে উন্নত চিকিৎসা করাইনি। পরে আমার জমানো ডিপিএস ভেঙ্গে টাকা ম্যানেজ করে পাসপোর্ট করি ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার প্রতারণার জন্য যেতে পারিনি। চিকিৎসার কথা বলে আমার জমানো ডিপিএসের টাকা নিয়ে সুনামগঞ্জ গিয়ে আমার নামে তালাক নামা পাটিয়ে দেয়।

শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলী হায়দার জানান, এই সেকমো চিকিৎসকের ব্যবহার খুবই খারাপ। এখানে আগেও বিভিন্ন সেকমো চিকিৎসক এসেছেন। তাদের ব্যবহার মানুষ এখনও মনে করে আক্ষেপ করে। তার বিষয়ে আমি উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা (টিএইচও) ডাঃ মির্জা রিয়াদ হাসানকে অবগত করেছি কয়েকবার।

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাঃ মির্জা রিয়াদ হাসান বলেন বহু জালায় আছি তাকে নিয়ে, প্রতি সপ্তাহে তার ব্যাপারে আমার কাছে বিচার আসছে। বিষয়টি আমি সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন মহদোদয়কে জানিয়েছি।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, সে রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এমন কয়েকটি ঘটনা আমি সালিসের মাধ্যমে শেষ করে দিয়েছি। তাকে দ্রুত বদলি করে এখানে একজন ভাল চিকিৎসক দেয়া উচিত।

শ্রীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) মিঠুন সরকার অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন আহমেদ হোসাইন বলেন, তার বিষয়ে অনেকদিন ধরেই অনেক কিছইু শুনছি। আমি হজ্বে চলে গেছিলাম, গত দুইদিন আগে এসেছি। তার বিষয়টি আমি দেখবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

বিভাগের খবর দেখুন