বিশেষ প্রতিনিধি:
সিলেট তথা দেশ ও দেশের বাইরের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী জলের গানের দলনেতা রাহুল আনন্দের ঢাকার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (৫ আগস্ট) তার বাড়িতে থাকা সহস্রাধিক যন্ত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।
এটি কেবল রাহুল আনন্দের বাড়ি ছিল না,জলের গান ব্যান্ডের অনেক গান লেখা থেকে সুর হয়েছে এ বাড়িতে। এমনকি অফিশিয়াল স্টুডিও হিসেবেও ব্যবহৃত হতো বাড়িটি। দলের সবার দলগত সংগীতচর্চা থেকে শুরু করে সব স্টুডিও ওয়ার্ক-রেকর্ডিং, মিক্সিং, এডিটিং এখানেই করা হতো।
বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সব সময় সক্রিয় দেখা গেছে রাহুল ও তার দলকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়েও নিজের দলের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর রবীন্দ্রসরোবরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এরপরও তছনছ করা হয়েছে তার বাড়ি। দলনেতা ও ভোকাল রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছিলো জলের গান।
কিন্তু এই ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যম সাম্প্রদায়িক হামলা বলে চালিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশের অনেকেও জলের গানের রাহুল আনন্দের এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ভিন্ন মুড়ে ঘুরিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে।
রাহুল আনন্দের খুব কাছের ও ঘনিষ্ঠ মিত্র ওমর ফারুক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়েছেন,” রাহুল আনন্দের বাড়িতে আগুন লেগেছে ঠিক ও রাহুল আনন্দের বাড়ি লুট হয়েছে সম্পূর্ণ। তবে রাহুল আনন্দ ও তার পরিবারের কারো কোনো ক্ষয় ক্ষতি হয়নি। রাহুল আনন্দের বাড়ি ধানমন্ডির ৩২ এর রোডেই ছিল এবং
বঙ্গবন্ধু যাদুঘরের দেড়-দুইশো গজ দূরে ছিল ; সন্তুর রেষ্টুরেন্ট সংলগ্ন একটি ৩লা বাড়ির পেছনে ছিল। আগুন লাগা বাড়ি লুটপাট হয়েছে গত ৫আগষ্ট বেলা ৩টার পর।
তিনি আরও লিখেন,’আমি এই কথা গুলো বলছি কারণ আমি ঘটনার প্রায় এক ঘন্টা পর সেখানে যাই। ফলে আমি আগুনের সুত্র কি,তান্ডব কারা চালিয়েছে তাদেরকে স্বচক্ষে দেখিনি। তারপর থেকে দাদা দিদির মুখেও এ ব্যাপারে কিছু জানার সুযোগ হয়নি। ফলে যারাই এসব খবর পাচ্ছে নিজেদের মত করে,সময় ও দেশের পরিস্থিতি অনুসারে যোগ বিয়োগ মিলিয়েছে ; এটা দমন করবো কি করে । কারণ সবাই চায় তার ফেসবুক রিচ !!! এই রিচ ভয়াবহতায় আমরা কে কখন কোথায় চলে যাই সেকথা আর নাই বলি!’
এবার আসুন আরেকটি বিষয় ক্লিয়ার করি,রাহুল আনন্দ জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও বাস্তবে উনার পুরো পরিবার হিন্দুও নয়,আবার মুসলিমও নয় অর্থাৎ উনি কারো অনুসারি নয়; রাজনৈতিক ব্যক্তি নয়,উনি একজন মানুষ এবং বাংলাদেশী। উনার বাড়িতে পুজা হয়না পূঁজার একটা ঘটি-ঘন্টাও নেই ।
উনাকে যারা হিন্দু ভেবে একবার এদিক-একবার ওদিক কথা বলছেন,তারা জানেন না,উনি একজন দেশপ্রেমিক । দেশের স্বার্থে যা করা দরকার,তাই উনি করবেন । তার জন্য সময় দিতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, দুদিন আগেও আমাদের দেশে কেউ নিরাপদ ছিল না। রাহুল আনন্দ কিছু বলার জন্য যে পরিস্থিতি সেইটা এখন উনার নেই । সবকিছুর তদন্ত হলে তখন আমরা আরো পরিস্কার হব’।
আর আমি মনেকরি ফেসবুক একটি বেফাস জায়গা , এখানে যেকেউ যেকোন কথাকে তার সুবিধা অনুসারে নিয়ে বানিয়ে বাড়িয়ে বলতে পারে। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ; মিথ্যা অনেক গুছিয়ে বানিয়ে প্রুফ করতে হয় । যারা জনরোষ বাড়াচ্ছে ওদের কারোর উদ্দেশ্যই শান্তি নয়। আমরা শান্তি চাই। আপনারা জানেন, উনার বউ বাচ্চা নিয়ে উনি ঘর বাড়ি ফেলে পালিয়ে বেঁচেছেন; একটা পরিবারে সারাজীবনের সংগ্রহে একটা স্মৃতিও নেই । আপনি আমি ঘরে ফিরে এসে হয়তো এক গ্লাস পানি খাই আর কিছু না থাক্। এই লোকটির পানি খাবার গ্লাস তো দূরের কথা ঘরে যে ফিরবে তা’ই তার নেই !
যে ঘরে ফিরতে পারছে না সে আপনাদের আলাপ মুখো হবে ! হতে দিতে চান যদি – তাহলে ধৈর্য্য ধরুন। সময় চলে যায়নি । সময় নিয়ে সত্য ও সততা যাচাই করুন।
ফেসবুকে যে যা লিখছে তা তাদের নিজ দায়িত্বেই লিখছে । রাহুলদার সাথে কেউ যোগাযোগ করে কিছু হয়েছে বলে আমি মনে করি না। এটাও প্রুফ হবে আশাকরি। সবার কাছে বিশেষ অনুরোধ ভুল বুঝবেন না,ভুল বুঝাবেন না। সবকিছুতে দোষ ধরা মানসিক একটা রোগ,নিজেদের যত্ন নিন।
যত যাই হোক নিজেদের বোধ শক্তিতে আত্মবিশ্বাসী হোন;দাঙ্গা হাঙ্গামা নয় দেশের শান্তির ও মঙ্গলে মনোযোগী হোন। একটা প্রাণও আর অনিরাপদ বোধ না করুক।
সিলেট নিউজ/এসডি.