বিচারহীনতার দেশে নুরের উত্থান
বিপ্লব কুমার পোদ্দার
সত্যজিৎ দাস,বাহুবল(সংবাদ প্রতিনিধি)
বিচারহীনতা আর রাষ্ট্রহীনতা দেশের জন্য এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরী করেছে।আশাকরি, প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিশ্বাস করেন,অনেক কিছুই এখন আর তার হাতের মুঠোয় নেই। যেমন ধরা যাক,কোন বিশেষ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ফোনালাপ ফাঁস কিংবা প্রদীপের মতো মানুষকে খুন এবং চাঁদা আদায়,অথবা সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে চাঁদার জন্য একশ এগারটি আঘাতের মাধ্যমে রায়হান হত্যা কিংবা ধর্ষণ যেনো আজ এক নিয়ম করে নিয়েছে। শোষকেরা যা খুশী তাই করতে পারে। সেখানে আইন বা রাষ্ট্র শুধুই তুচ্ছ। তবে এ কথা ঠিক,সরকার অত্যান্ত সুকৌশলে যে কোন পরিস্থিতিকে তারা তাদের অনুকুলে নিয়ে নিতে পারে। যেমনি ধর্ষণের বিরুদ্ধে সর্বচ্চো শাস্তি ফাঁসির সিদ্ধান্ত মন্ত্রীসভায় তড়িঘড়ি করে পাশ করা। হয়তো খুব অচিরেই দু্’একজনের ফাঁসির রায় হবে কিংবা ফাঁসি কার্যকর হলেও অবাক হবার মত কিছু থাকবে না। যদিও,আমি ব্যাক্তিগতভাবে মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে ।
ধর্ষণ সহ যেকোন অন্যায় বা অপরাধ দমনের জন্য সর্বপ্রথম দরকার হাত বাঁধা কিংবা দলীয় আনুগত্যহীন বিচার ব্যবস্থা। আর যদি ক্যাসিনোর রাজা মহারাজাদের গ্রেফতারের পরে জামাই আদরে রাখা হয়,তাহলে সে বিচার ব্যবস্থা অবশ্যই ব্যার্থ হয়ে যায়।
এখন দেখি দেশের পুলিশ বাহিনী ধর্ষন বিরোধী সমাবেশও করে।তবে কি সরকার ব্যার্থ,কারণ পুলিশের কাজ আইন শৃংখলা রক্ষা করা।আর জনমত গঠনের ক্ষেত্রে সরকার পদক্ষেপ নেবে। তবে একথাও ঠিক করোনার কঠিন সময়ে পুলিশের কাজ কিন্তু,প্রশংসিত হয়েছে। তাই তাদের প্রতি আমার আহ্বান ভালো কাজ করুন,ভালো ফল পাবেন। আর সরকারের প্রতি আমার আহ্বান,গাজিপুরের ইঞ্জিনিয়ার সেলিম,সাংবাদিক সাগর রুনি,এরকম অগণিত হত্যার বিচার যদি করতে পারেন,তবেই দেখবেন নতুন কোন আইন নয়,বিদ্যমান আইন ই যথেষ্ট রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য।
বিভিন্ন সভা সেমিনার কিংবা টিভি টকশো তে যখন মানুষ আশাহত,তখন কিন্তু ছোট্ট একটি নাম মানুষের বুকে আশার সঞ্চার করেছে” নুর “। প্রকৃত বিরোধীদল যখন সরকারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক প্রত্যোকটি নির্বাচনে অংশগ্রহন করে নির্বাচনের আগের দিন এবং নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরের দিন পুর্বে তৈরীকৃত লিখিত বক্তব্যে শুধুমাত্র সেদিনের তারিখ বসিয়ে দায়সারা কাগুজে আন্দোলনের মাধ্যমে গনতন্ত্রের প্রতি তাদের চলতি দায়িত্বটুকু সম্পন্ন করেন। কিন্তু,ভিপি নুরুল হক নুর কোটা সংস্কার আন্দোলন,নিরাপদ সড়ক আন্দোলন,ছাত্রদের ন্যায্য দাবী দাওয়ার সাম্প্রতিক প্রতিটি আন্দোলনে মুখ্য ভুমিকা পালন করা ছেলেটি বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব অল্প সময়ের রাজনৈতিক উপস্থিতিতে ঢাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়ে আজ দেশের মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন বা কন্ঠস্মর হিসেবে প্রতিষ্টিত করেছেন নিজেকে। যদিও তাকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই বিভিন্ন মহলের। যেমন ধরা যাক,কেউ বলেন সে সরকারের তৈরী,কেউ বলেন তিনি জামাতের প্রোডাক্ট অথবা কেউ কেউ বলেন বিদেশী দুতাবাসের চাকুরী প্রাপ্ত লোক তিনি। আমি তার সম্পর্কে খুব বেশি জানি না। তবে এটা আমি দেখেছি,সরকারী এবং বিভিন্ন মহলের দ্বারা ১৮ বার হামলার শিকার হয়েছেন এবং এখনও তিনি বেঁচে আছেন এটাকে তিনি মনে করেন,এটা তার দ্বিতীয় জন্ম বা বোনাসপ্রাপ্ত কোন জীবন। তিনি মৃত্যু ভয়হীন সহজ সরল খেটে খাওয়া পরিবারের বেড়ে উঠা এক যুবক, যার গনমানুষের ব্যাথা বেদনা অভাব অভিযোগ বুঝে নিতে কোন কষ্ট হয় না। তাই তিনি বাংলাদেশের কঠিন সময়ের এক বিপ্লবী তরুণ, মানুষের অধিকার আদায়ের শেষ ভরসার স্থল। দেশে ৯০ এর পরবর্তি সরকারগুলো কৌশলে তরুন প্রজন্মকে রাজনীতি বিমুখ করেছে,করতে চেয়েছে। সেটা তারা করেছে তাদের ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখবার স্বার্থে। সেই পরিস্থিতিতে নুরের উত্থান নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। দ্বি-দলীয় বিদ্যমান রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির বাইরে নুর নতুন প্রজন্মের রাজনীতির কথা বলছেন। তিনি তথাকথিত এলিট ক্লাসের প্রতিনিধিত্ব করছেন না বলেই সাধারন মানুষ তাকে আস্থায় নিয়েছে। নুরের সামনের পথটুকু হল,সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে মানুষের সেই আস্থা বিশ্বাসের জায়গাটুকু ধরে রাখবার পথ।
সদ্য সাবেক, ডাকসুর ২৫ তম ভিপি নুরুল হক নুরের জন্য শুভকামনা। পচাঁ গলা নষ্ট দলবাজির রাজনীতিতে নুর তার নামটিকে অর্থবহ করে তুলুন আলো এবং আশা প্রতিশব্দ হিসেবে,দেশের রাজনীতি।