মু. রিমন ইসলাম
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি::
করোনাকালীন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রায়ই শিরোনাম হতে দেখা গেছে চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের নানান অসুবিধা এমনকি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মত ঘটনা।আবার এই দু:সময়ে নিজের জীবন বাজী রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক।তেমনি একজন মেডিসিন ও হৃদরোগে অভিজ্ঞ ডাক্তার মোঃ নাজেম আল কোরেশী রাফাত।
শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে করোনা কালীন সময়ে অনেক চিকিৎসকরা রোগী দেখা বন্ধ করে দিলেও মানবিক এই চিকিৎসক সেবার ব্রত নিয়ে ছুটে চলছেন সব সময়।দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা।
মানবিক চিকিৎসক রাফাত শ্রীমঙ্গল শহরের খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয় একজন ডাক্তার।শহরস্থ হেলথ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং শহরের রুপসপুরস্থ নিজ বাসা কোরেশী ভিলা থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
করোনাকালে একদিনের জন্যও বন্ধ রাখেননি তার চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।রোগীদের জন্য সব সময় খোলা রেখেছেন তার চেম্বার।স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগী দেখে চলেছেন নিয়মিত।
জানা যায় তার পেশা জীবনে তিনি গরীব ও অসহায় রুগীদের ফ্রি চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন।নিজ চেম্বারে একটা বড় কাগজে লিখে রেখেছেন চিকিৎসা ফিস দিতে কষ্ট হলে ফিস দেওয়া লাগবে না।
১৯৯০ সালে শ্রীমঙ্গলের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন ডাঃ মোঃ নাজেম আল কোরশী রাফাত।বাবা মোঃ সিরাজুল ইসলাম কোরেশী যিনি জ্ঞানের আলো ছড়ানো ও মানুষ গড়ার ধ্যানে পার করে দিয়েছেন জীবণের দীর্ঘ ৩৮ বছর।৭১ বছর বয়সে শিক্ষকতা পেশার অবসান ঘটিয়ে বর্তমানে অবসরে আছেন তিনি।
২০১৫ সালে জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসা সেবায় ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ডাক্টার রাফাত নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।
বর্তমানে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিভিন্ন সংগঠনের।জাতীয় মানব কল্যাণ ফাউন্ডেশন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের মৌলভীবাজার জেলা শাখার স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখা সহ-সভাপতি’র সম্মানজনক পদে দীর্ঘদিন থেকে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।SAVE ( Sreemangal Association of Voluntary efforts) নামের আরেকটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহ-সভাপতির দ্বায়িত্বও পালন করছেন।
বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পারিবারিক ভাবে গড়ে তুলেছেন “কোরেশী ফাউন্ডেশন” নামে একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন আর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ রাফাত নিজেই।
সেবা প্রদানের স্বপ্নে লালিত “কোরেশী ফাউন্ডেশন” এর বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম কার্যক্রম হচ্ছে ৩ বছর ধরে চলমান প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ” ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক” আর এই ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক ২০১৮ সাল থেকে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার খেটে খাওয়া অসহায়, দুস্থ, দিনমজুর মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
ডাঃ রাফাতের কাছে মায়ের চিকিৎসা সেবা নিতে এসে মোশারফ হোসেন জানান,আমার মায়ের ডায়াবেটিকস।আমরা দীর্ঘ দিন থেকে একজন ডাক্তার দেখাচ্ছিলাম।করোনার কারণে ডাক্তার হটাৎ করেই রোগী দেখা বন্ধ করে দিলে মায়ের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পরে গিয়েছিলাম।পরে শুভাকাঙ্ক্ষী একজনের মাধ্যমে ডাঃ রাফাত সাহেবের কথা জানতে পেরে মায়ের ট্রিটমেন্ট করাতে আসি।ডাঃ রাফাত অত্যন্ত ভর্দ ও আন্তরিক মানুষ।তার কথাতেই রোগমুক্তির সাহস খুঁজে পাওয়া যায়।
ডাঃ মোঃ নাজেম আল কোরেশী রাফাত বলেন,
চিকিৎসা পেশাটা হচ্ছে একটা মহান পেশা,এই পেশায় নিজেকে যুক্ত করার পর থেকে রোগীর সেবা ব্যাতিত অন্য কিছু কখনোই ভাবিনি।আমি সব সময় মনে করি আগে রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলা জরুরী।আর রুগী সুস্থ হয়ে উঠলেই আমার মন উৎফুল্ল হয়ে উঠে।আমি এতে তৃপ্তি পাই।সেবার মত পেশায় যুক্ত হয়েছি বলেই সেবা দেওয়ার ইচ্ছেতে নিয়মিত রোগী দেখে যাচ্ছি।
করোনা কালীন সময়ে নিজের নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক ডাক্তার তাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছে।আপনি কেন খোলা রেখেছেন?এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,যুদ্ধের ময়দান থেকে কখনো কোন সৈনিক নিজের নিরাপত্তার ভয়ে পালিয়ে আসেনি।আমি মনে করি জাতির এই দু:সময়ে আমাদের মানুষের পাশে থাকা উচিৎ।তবে অবশ্যই ডাক্তারদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে রোগী দেখার পরামর্শ তিনি দিলেন।কারণ কোনো ডাক্তারের দেহে যদি করোনা বা করোনার উপসর্গ থাকে তাহলে রোগীদেরও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
হেলথ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রেজাউল করিম সানি জানান,করোনা প্রাদূর্ভাবের শুরুর দিকে আমরা পরিচালকগণ সহ আমাদের প্রতিষ্ঠিানের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডা: মোঃ নাজেম আল কোরশী রাফাত ভাইয়ের কাছ থেকে সাহস ও উৎসাহ পেয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি।করোনাকালীন সময়ে ডাঃ নাজেম আল কোরশী রাফাত ভাইর সাথে কাজ করে আমরা সবাই নিজেদের গর্বিত মনে করছি।
স্থানীয় প্রাক্তন চিকিৎসকরা বলছেন ডা. মোঃ নাজেম আর কোরেশী রাফাত ডাক্টার হিসেবে নিজের বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে করোনা কালে মানুষকে সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।এটা নি:সন্দেহে প্রশংসার ও গর্বের।আমরা মনে করি এই প্রজন্মের চিকিৎসকরা এটা দেখে অনুপ্রাণিত হবে।তিনি সত্যিই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।