অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বুধবার( ০৪ নভেম্বর ২০২১) দীপাবলি উপলক্ষে ১২ লাখ মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। শুধুমাত্র সর্য নদীর তীরেই ৯ লাখ মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। এছাড়া ৩ লাখ মাটির প্রদীপ অযোধ্যার বিভিন্ন স্থানে জ্বালানো হয়। সবচেয়ে বেশী প্রদীপ একসঙ্গে জ্বালানোর জন্য গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে জায়গা করে নিল অযোধ্যার এই দীপোৎসব।
দীপাবলির সঙ্গে জুড়ে রয়েছে রামায়ণ-কথা। কাহিনি অনুসারে, লঙ্কারাজ রাবণ-বধ করে,১৪ বছর বনবাস শেষ করে, দীপাবলির দিনই ঘরে ফেরেন সস্ত্রীক রামচন্দ্র। দশরথ-নন্দনের ঘরে ফেরার আনন্দে নয়নাভিরাম সাজে সেজে ওঠে রাম-রাজ্য অযোধ্যা। কথিত আছে, রাম-লক্ষ্মণ ফেরার আনন্দে প্রদীপের মালায় সেজে ওঠে সরয়ূর তীর। সেই থেকে অধুনা উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যাতেও দীপাবলি পালনের সূচনা।
এবারও অতুলনীয় দীপসজ্জায় সেজে উঠেছে সূর্য তীরের নগরী। গত বারের মতো এবারও অযোধ্যায় রাজকীয় দীপোৎসবের আয়োজন করে যোগী সরকার। সর্বাধিক প্রদীপ জ্বালিয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলল অযোধ্যা। এর মধ্যে সর্যঘাটে ৯ লক্ষ ও অযোধ্যার মন্দিরগুলিতে জ্বালানো হল বাকি ৩ লক্ষ প্রদীপ।মোট ১২ লক্ষ প্রদীপ।
১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৫টি কলেজের পড়ুয়া, ৪৫টি স্বনিযুক্তি গোষ্ঠী থেকে ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দীপোৎসবে অংশ দেন। দীপোৎসব উপলক্ষে লেজার শোয়েরও আয়োজন করা হয়। সর্য তীরে আলো-শব্দের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় রামায়ণের কাহিনি। হাজির ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ।
শ্রীলঙ্কা ও রাজধানী দিল্লি থেকে শিল্পীরা এতে পারফর্ম করেন। দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
গত বছর, ৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৩৭২ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে রেকর্ড করেছিল যোগীরাজ্য। অযোধ্যার রাম কি পৌড়ি ঘাট সেজে ওঠে আলোয়-আলোয়।
কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী কিষান রেড্ডি বলেন, অযোধ্যায় ১২ লক্ষ দিয়া প্রজ্বলিত করা শুধুমাত্র একটি রেকর্ড নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের কাছে ভগবান রামের মর্যাদার বার্তা। ২০৩০ সালের মধ্যে অযোধ্যা হবে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় পর্যটন শহর।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রেড্ডি ছাড়াও অযোধ্যায় উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য, বিজেপি রাজ্য সভাপতি স্বতন্ত্র দেব সিং এবং আরও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো,ভিয়েতনাম এবং কেনিয়ার রাষ্ট্রদূতরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এদিন অযোধ্যায় রামলীলার আয়োজন করা হয়। সেই রামলীলা মঞ্চস্থ করেন একাধিক শিল্পী। এদিকে, শুধু সরযূ নদীর তীরই আলোকিত হয়ে ওঠেনি, এদিন গোটা অযোধ্যার সমস্ত রাস্তা, সমস্ত ঘাটে আলো দেখা যায়। কার্যত সমস্ত বাড়ি থেকে রাস্তা , রাজপথে আলোর রোশনাই নিজের মতো করে চাঁদোয়া তৈরি করে নেয়। এদিকে এমন এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ছিলেন হাজির। এদিন অযোধ্যার বুকে শোভা যাত্রা বের করা হয়। এই শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান। শোভাযাত্রায় এদিন কাম , সীতা, লক্ষ্মণ সেজে ভক্তরা যাত্রায় অংশ নেন। অযোধ্যায় এই নিয়ে পঞ্চমবার দীপোৎসব অনুষ্ঠান আয়োজিত হল। এই অনুষ্ঠানের জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অযোধ্যার প্রতিটি মোড়ে মোতায়েন রয়েছে।
অযোধ্যার প্রতিটি মোড়ে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেডও বসানো হয়েছে। এছাড়াও বহু নাশকতার আশঙ্কা থেকে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বন্দোবস্ত করা হয়েছে এই নগরী ঘিরে। এছাড়াও নয়া ঘাট থেকে রাম কি পাইরি পর্যন্ত রাস্তা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুই পাশে ব্যারিকেড লাগানো হয়েছে এবং কাউকে নতুন ঘাট থেকে রাম কি পাইরি পর্যন্ত যেতে দেওয়া হচ্ছে না। সরযূর উপর পুরানো সেতুতে যাতায়াতও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এইভাবে এদিন আটোসাঁটো নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে সাজানো হয় অযোধ্যাকে।