একজন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে এবং একজন উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলের চেহারার বাহ্যিক অবয়বের মধ্যেই একটা আলাদা ব্যপার থাকে।
ধরো, একটা উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলের পরিস্কার জামা কাপড় যদি একটা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলের গায়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তবুও তার শরীর থেকে মধ্যবিত্তের ঘ্রাণটা একেবারে যায়না। উচ্চবিত্তদের একটা আলাদা রকমের গ্ল্যামার থাকে। এরা মধ্যবিত্তের শরীরের জামা খুলে নিজের গায়ে জড়ালেও তাদের উচ্চবিত্তই লাগে।শহরের বড় বড় ফ্ল্যাটে এসি রুমে থাকা গর্ভবতী মহিলার সন্তান কালো হয়ে জন্মালেও দিন দিন গুলুমুলু টাইপ হতে শুরু করে। মধ্যবিত্তের সন্তানদের চেহারায় একটা গরীব গরীব ভাব থাকে। ফর্শা হয়ে জন্মালেও দিন দিন কালো হতে থাকবে। প্রকৃতি নিজে থেকেই এই দুই শ্রেণীকে আলাদাভাবে গঠন করে দেয়।
বছর তিনেক আগে আমার একজন উচ্চবিত্ত ছেলের সাথে কয়েকবার দেখা হওয়ার পর খেয়াল করলাম, যখনই তার সাথে দেখা হয়, তখনই তার পায়ের জুতা জোড়া চকচকে দেখায়। দেখলে মনে হয়, এই মাত্রই বোধহয় শপিং মল থেকে কিনে নিয়ে আসছে।
অনেকদিন পর আমি এক জোড়া নতুন জুতা পায়ে দিয়ে তার সাথে দেখা করতে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম, তার জুতা আজকেও নতুনের মতো চকচক করতেছে৷ আমি আমার নিজের নতুন জুতার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম, জুতার সামনের অংশে ধূলা জমে গেছে। সে যাতে দেখে না ফেলে এই চিন্তা করতে করতে সুযোগ বুঝে জুতার সামনের অংশ প্যান্টের পেছনে নিয়ে ঘষতে ঘষতে মুছে ফেললাম। তারপরও তাকিয়ে দেখলাম, আমার জুতার চেয়ে তার জুতার গ্ল্যামার এখনো উজ্জ্বল।
উচ্চবিত্তদের সবকিছুই একটু উচ্চবিত্ত হয়। মধ্যবিত্ত যতই উচ্চবিত্ত হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, তার বাহ্যিকতার পরিবর্তন পুরোপুরি সম্ভব না।উচ্চবিত্তদের কান্না এবং মধ্যবিত্তদের কান্নার মাঝেও পার্থক্য থাকে।
উচ্চবিত্তদের কান্নায় চোখ থেকে জল কম বের হয়। ভাঁজ করা টিস্যু চোখের সামনে ধরলেই দু’এক ফোটা জল নেই হয়ে যায়।
মধ্যবিত্তদের কান্নাও মধ্যবিত্তদের মতো। যখন বের হয়, তখন জলপ্রপাতের মতন বের হতেই থাকে। টিস্যু দিয়ে মধ্যবিত্তের কান্নার জল কমানো যায়না। এদের শার্টের হাতার পেছনের অংশ দিয়ে কিংবা ওরনা দিয়ে চোখ মুছলেও জল কমেনা। একবার বের হতে শুরু করলে, বের হতেই থাকে।উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের পাকস্থলির সাইজও আলাদা রকমের।
একটা টোস্ট কিংবা এক পিস ব্রেডের সাথে জেলি মেখে খেলেই উচ্চবিত্তের ব্রেকফাস্ট হয়ে যায়। মধ্যবিত্ত থালা ভর্তি ভাত খেয়ে সকালে বের হলেও ঘন্টা দুই পর ক্ষুধায় পেটে মোচর দেয়।মধ্যবিত্তদের এটা করতে নেই ওটা করতে নেই, এই নীতিতে আমার বিশ্বাস নাই। মধ্যবিত্ত হয়ে তুমি যা ই করো না কেন, তুমি মধ্যবিত্তই থাকবে।
মূলত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের গঠনের ধরনই আলাদা হয়।
শুধু মাত্র টাকা পয়সা ছাড়া মধ্যবিত্তদের বাকি সব কিছুই উচ্চবিত্তদের তুলনায় বেশি।
মধ্যবিত্তদের চোখ থেকে জল বের হয় বেশি, দুঃখ কষ্ট বেশি, ক্ষুধা বেশি, হতাশা বেশি, আফসোসও বেশি।