কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি :
তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের দেওথান গ্রামের পীরের আস্তানায় মাইশা (৭) বছর বয়সের এক কন্যা শিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
জানাগেছে, উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের দেওথান গ্রামের পীর লুৎফুর রহমান এর বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। খবর নিয়ে জানাযায়, ওই এলাকায় বহুদিন পূর্বে পীর বারী শাহ্ আগমন করেন। এরপর থেকে এই গ্রামের নামকরণ করা হয় দেওথান মহানগরী। গত ২১ বছর পূর্বে তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতে খুন হয়ে মারা যাবার পর খেলাফত প্রাপ্ত হয়ে তারই ভক্ত লুৎফুর রহমান গদিসীন হয়ে নিজেকে পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তারপর থেকে তিনি আস্তানায়ে বারী শাহ্’র বাড়ির পাশে আলাদা আস্তানা ঘেরে প্রতি বছর ওরছ মাহফিল করে আসছেন এবং মুরিদান, ভক্তদের আগমন দিন দিন বাড়তে থাকে।
তারই সূত্র ধরে বহু মানুষের আগমন ঘটে পীর লুৎফুর রহমান এর আস্তানায়।
গত ৩/৪ দিন পূর্বে তাড়াইল উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের মৌগাঁও গ্রামের মানিক মিয়া তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আস্তানায় আগমন করে। গতকাল ২৩/১০/২০২০ ইং শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার সময় আস্তানার একটি কক্ষে এক নারী ভক্তের চোখে জানালার পাশে মাইশা’র ঝুলন্ত লাশ ভেসে ওঠে। মাইশার গলায় তখন উড়না প্যাচানো ছিল বলে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়। এসময় আস্তানার ভেতরে হৈচৈ, চিল্লাচিল্লি শুরু হলে ভক্তরা জড়ো হয় এবং মাইশাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে তাড়াইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। তারপর হাসপাতাল ইমার্জেন্সি বিভাগ মাইশাকে মৃত ঘোষনা করে।
সড়েজমিনে গেলে পীর লুৎফুর রহমানকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। লুৎফুর রহমান এর স্ত্রী মনি আক্তার জানায়, ঘটনার সময় ওই কক্ষে দুইটি শিশু ছাড়া আর কেউ ছিল না।
লুৎফুর রহমান এর শ্বশুর কদ্দুছ খান জানায়, একজন নারী ভক্ত মাইশাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার করলে সবাই ছুটে যায় এবং মাইশাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিষয়টি এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী অনেকেই কিছু বলতে না চাইলেও কেউ কেউ মাইশার মৃত্যুকে রহস্যজনক বলছে। নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক তারা বলেন, লুৎফুর রহমান তার আস্তানার চারদিকে উচু প্রাচীর করে রেখেছে। সেখানে সহজে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এর পূর্বে এক নারী ভক্ত পীর লুৎফুর রহমান এর বিরদ্ধে নিয়মিত ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই মামলা দূর পর্যন্ত এগোতে পারে নি।
তারা আরও জানায়, রহস্যজনক ওই আস্তানার ভেতরে প্রবেশ করলে যে কেউ ভয়ে গাবরে যাবে। ভেতরে কী হয় তা বাহির থেকে কিছু বুঝার উপায় নাই। পুরো আস্তানা তাদের নিজস্ব সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। দিন-রাত মহিলাদের আনাগোনা থাকে। বাস্তবেও গিয়ে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
তাড়াইল থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি মো. মুজিবুর রহমান বলেন, মাইশার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ প্রেরণ করা হয়েছে। মাইশা’র বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
মামলার পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বলেন ইউডি মামলা নেয়া হয়েছে। বাকীটা রিপোর্টে জানা যাবে।
মাইশা’র পিতা মানিক মিয়া’র মোবাইল নম্বরে কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।
বার্তাপ্রেরক-
আল-মামুন খান
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।
২৪/১০/২০২০ খ্রি.
০১৭১৩-৫০৮০৯৮