শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

কক্সবাজারে এইডসে আক্রান্ত ৬১২ রোহিঙ্গা।

সত্যজিৎ দাস / ২৭১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার:
কক্সবাজারে ভয়াবহভাবে বিস্তার ঘটছে মরণব্যাধি এইডসের। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এই রোগের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রয়েছেন ঝুঁকিতে। পেশাদার-অপেশাদার যৌনকর্মী ও মাদকাসক্তদের অবাধ যৌনাচারের কারণে বর্তমানে জেলায় এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৭১০ জন। সঠিক তথ্যানুসন্ধান করলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন,কক্সবাজার এইডসের জন্য এখন বিপজ্জনক এলাকা। রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন জেলার স্থানীয় বাংলাদেশিরাও। গত একবছরে ক্যাম্পের ১১৫ জন রোহিঙ্গা ও ১০ জন বাংলাদেশি নাগরিকের শরীরে প্রাণঘাতী এই রোগ শনাক্ত হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২-এর জুলাই পর্যন্ত ১১৫ জন রোহিঙ্গা ও কক্সবাজারের ১০ জন বাংলাদেশি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত এইডস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১০ জনে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ৬১২ জন। মোট আক্রান্তের মধ্যে ১১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৬১ জন রোহিঙ্গা।

এইচআইভি এইডস নিয়ে কাজ করা এনজিও ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৮৫ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি বছর ৯৭ জন এইডসে আক্রান্ত হন। তবে এই বছর ১২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ও এইচআইভি ভাইরাসের ফোকাল পারসন ডা. আশিকুর রহমান বলেন, ‘২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন,তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন,‘গত ৬ জুলাই পর্যন্ত ৭১০ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের একজনের শরীরেও এইচআইভির জীবাণু পাওয়া গেছে। এ রোগে আক্রান্ত ৬১ রোহিঙ্গাসহ ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে মারা যাওয়া ছাড়া এইডস আক্রান্ত জীবিতরা কে, কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার কোনও হিসাব সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।’

আমাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। ভিন্ন রোগ নিয়ে তারা আসছেন। কিন্তু পরীক্ষায় ধরা পড়ছে এইচআইভি এইডস। এই রোগ প্রতিরোধে জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে,বলে জানান ডা. আশিকুর রহমান।

প্রসঙ্গত,কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল,মোটেল ও গেস্ট হাউসে পাঁচ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করছেন। শহরের লালদিঘী পাড় কেন্দ্রিক কিছু আবাসিক হোটেলে যৌনকর্মী ও খদ্দেরদের অবাধ যাতায়াত। এতে কক্সবাজারে এই রোগ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

রোহিঙ্গা ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশি টাকা আয়ের উদ্দেশে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমন ঘটে। এটিও ভাইরাসটি বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ। ভাসমান যৌনকর্মী ছাড়াও প্রবাসী অনেকেই এইডস আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরছেন। যাদের অনেকেই বিদেশে অবস্থানের সময় সেখানকার যৌনকর্মীদের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের কারণেও ছড়াচ্ছে ভাইরাসটি।

কক্সবাজারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভাইরাসটি বিস্তারের নেপথ্যে রয়েছে অসচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক নানা কুসংস্কার। এসব মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্য সব রক্ষণশীল সমাজের মতোই কারও দেহে এইচআইভি পাওয়া গেলে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে ’।

তিনি আরও বলেন,‘তাদের ভয়,ওই ব্যক্তির দেহ থেকে এইচআইভি ছড়াতে পারে। আবার যাদের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে তারা চিকিৎসা নিতে গড়িমসি করে।’

এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে,বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১,৫৮৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ রোগী চিকিৎসার আওতায় আছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন