দীপঙ্কর সমাদ্দার:
একটি চিত্র প্রদর্শনী ও শিল্পশিবির কতখানি দুটি দেশের মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে তুলতে পারল তার অন্যতম নজির রাখল সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও সংস্কৃতি পরিষদ তাদের তৃতীয় আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনীতে। এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের যশোর শহরে প্রাচ্য সংঘে। চার দিনের এই চিত্র প্রদর্শনী ও চিত্রকর্মশানের উদ্বোধন হলো অগণিত শিল্পপ্রেমী মানুষদের উপস্থিতিতে। উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশে সদ্যপ্রয়াত চিত্রশিল্পী সোহেল প্রাননের মা সালেহা বেগম।
পরিষদের পক্ষে সম্মানিত করা হয় সালেহা বেগমকে। সালেহা বেগম অশ্রু চোখে খুব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জানালেন আজ থেকে জানলাম আমার ছেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও আমার জন্য রেখে গেছে অগণিত চিত্রশিল্পী সন্তান আমি আগামী দিনগুলো এইসব সন্তানদের মধ্যে দেখতে পাবো আমার সোহেলকে ।ওনার বক্তব্যে উপস্থিত প্রত্যেকটি মানুষের চোখ অশ্রুতে ভরে গেছিল। পরিষদের পক্ষে ডক্টর শান্তনু সেনগুপ্ত জানালেন এই ধরনের একটি চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন হবে এমন একজন সদ্যপ্রয়াত শিল্পীর মায়ের হাত ধরে এটার জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রাচ্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা বেনজিন খানকে । উপস্থিত মানুষ বেনজিন খানের এই অভিনব উদ্বোধনী পরিকল্পনা কে প্রশংসা করলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রাচ্য সংঘের প্রতিষ্ঠাতা, প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক বেনজিন খান।
স্বাগত ভাষণ দেন সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃতি পরিষদের সহ-সম্পাদক ডক্টর শান্তনু সেনগুপ্ত ,উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শিল্পী এ এফ এম শিপু মনিরুজ্জামান,প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী সুশান্ত সরকার,যশোর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম,প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন,সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমানসহ দু’দেশের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ। উদ্বোধনের দিন অনুষ্ঠিত হলো আবৃত্তি,গান ও নৃত্যে সমাদৃতা সরকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল দর্শকবৃন্দের মন জয় করে নিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনসমাগম চোখে পড়ার মতো,অনুষ্ঠানের শেষে সংস্থার পক্ষ থেকে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান সাহেবের উপরে একটি তথ্য মূলক সিনেমা দেখানো হয়।যশোর এবং যশোর কেন্দ্রিক আশপাশ শহর থেকে প্রচুর শিল্প প্রেমী মানুষদের আগমন ঘটেছিল প্রদর্শনের প্রথম দিন থেকেই। ১১ই ফেব্রুয়ারি শিল্প শিবিরে উপস্থিত হলেন স্থানীয় চিত্রশিল্পীরা তারা অভিভূত হয়ে জানালেন ভারতবর্ষের চিত্রশিল্পীদের ছবির চিন্তাধারা এবং বাংলাদেশের শিল্পীদের চিন্তাধারা সত্যি প্রশংসার দাবি রাখে।যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাস বাংলাদেশের একটা ভাষার আবেগের মাস একথা মাথায় রেখে ভারতের চারজন চিত্রশিল্পী ভাষাকে ছবির বিষয়বস্তু করে অসাধারণ ছবি এঁকেছেন।
ভারতীয় প্রতিটি চিত্রশিল্পী বাংলাদেশে প্রদর্শনী করতে এসে বাংলাদেশের আপামর মানুষদের সুন্দর আন্তরিকতার অভিজ্ঞতা জানালেন,বললেন সমগ্র পৃথিবীতে সমস্ত বাঙালিরা যেন একটা মালাতেই গাথা ফুল,কেউ কেউ জানালেন বাংলাদেশকে তারা বিদেশ বলে ভাবতেই পারছেন না কারণ বাঙালির সংস্কৃতি মিশে আছে বাংলাদেশের বুকে। চার দিন প্রদর্শনীর শেষ দিনে শিল্পশিবিরে ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক শিল্পীকে মানপত্র ও মেমেন্টো দিয়ে সম্মানিত করলেন পরিষদের পক্ষে শান্তনু সেনগুপ্ত ও বেনজিন খান,সাথে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী স্বপন দেবনাথ ও প্রাচ্য সংঘের সম্মানীয় ব্যক্তিত্বরা।
সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃতি পরিষদের সম্পাদক কাজল সেনগুপ্ত ও সহ-সম্পাদক ডক্টর শান্তনু সেনগুপ্তর সংস্কৃতি মেলবন্ধনের মানসিকতা র জন্যে সমগ্র চিত্র প্রদর্শনী জুড়ে ভারত বর্ষ ও বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে যে শিল্প ও সাংস্কৃতিক মানসিকতার বিনিময় ঘটলো ইতিহাস সেটা মনে রাখবে। ।শিল্প-শিবিরের বেশ কিছু ছবি বাংলাদেশের গুণী মানুষেরা সংগ্রহ করে রাখলেন। আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পী বিশ্বনাথ দাস এর ছবিটি বিশেষ প্রশংসার দাবি রাখে, বিশ্বনাথ বাবু জানালেন তার আঁকা ছবির মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীজুড়ে শিল্পী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি মেলবন্ধন গড়ে তুলতে চান। বিশ্বনাথ বাবু খুব একটা দামী কথা বললেন ছবি হলো একটা এমন ভাষা যা পৃথিবীর সমস্ত মানুষ বুঝতে পারে অনুভূতির মাধ্যমে।
প্রদর্শনীতে উল্লেখযোগ্য ছবি র শিল্পীরা হলেন স্বপন দেবনাথ,অনুসূয়া চক্রবর্তী,সুশান্ত সরকার,ঈশান প্রতীক,শংকর তরফদার,দীপঙ্কর বিশ্বাস, জয়দীপ ভট্টাচার্য, বেণীমাধব সরকার, ইন্দ্রজিৎ নারায়ন, সমীর কর্মকার,বিশ্বনাথ দাস, বিনয় দোলুই,কাঞ্চন মিস্ত্রি,সুদেষ্ণা বোস,দেবাশীষ পাল, তৃষ্ণা সরকার,বিবেকানন্দ মন্ডল,জিৎ অধিকারী, আফতার আলী, রামানুজ বিশ্বাস। ভাস্কর্য শিল্পী প্রবীর পালের রবীন্দ্রনাথের উপরে কাজটি নজর কেড়েছে।
সিলেট নিউজ/সাহিত্য-সংস্কৃতি/দীপঙ্কর সমাদ্দার