সত্যজিৎ দাস(স্টাফ রিপোর্টার):একজন ভারতীয় নেপথ্য গায়িকা এবং সংগীতশিল্পী,বাংলা সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ‘গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়’। মঙ্গলবার(১৫ ফেব্রুয়ারী) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৯০ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর তথ্য টুইটারে শেয়ার করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) নেতা শান্তনু সেন। প্রবীণ বাঙালি গায়ক দিনের শুরুতে একটি বিশাল কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হন এবং তাঁকে পুনরুজ্জীবিত করার ব্যাপক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তিনি মারা যান,হাসপাতাল সূত্র সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় কলকাতার ঢাকুরিয়াতে ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে রেলের কর্মকর্তা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। তাঁর পিতামহ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং পরিবারটি ১৯১১ সাল থেকে ঢাকুরিয়াতে বসবাস করতেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে,যুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি ভারতীয় বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে গণ আন্দোলনে যোগ দেন এবং তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সমর দাস যিনি বাংলাদেশে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তার সাহায্যার্থে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান রেকর্ড করেন। কারাগারে বন্দী নতুন বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির উপলক্ষে তার গাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু তুমি ফিরে এলে’ গানটি মুক্তি পায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, প্রথম একুশে ফেব্রুয়ারির উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকায় পল্টন ময়দানের একটি উন্মুক্ত কনসার্টে অনুষ্ঠান করা তিনি অন্যতম প্রথম বিদেশি শিল্পী।
১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। গান দুটি হল – আমাদের ছুটি ছুটি এবং ওরে সকল সোনা মলিন হল। এছাড়াও ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তারা টেলিফোনে তাঁর সম্মতির জন্য যোগাযোগ করলে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে,সন্ধ্যা মুখার্জির পক্ষে উনার পুত্র সৌমি সেনগুপ্ত বলেছেন যে,প্রবীণ গায়িকা দিল্লি থেকে ফোন করে সিনিয়র আধিকারিকে বলেছিলেন যে,’তিনি প্রজাতন্ত্র দিবসের পুরষ্কার তালিকায় পদ্মশ্রী প্রাপকের নাম রাখতে ইচ্ছুক নন ‘।সেনগুপ্ত পিটিআই-কে আরও বলেছেন,৯০ বছর বয়সে প্রায় আট দশকের গায়কী ক্যারিয়ারের সাথে,পদ্মশ্রীর জন্য নির্বাচিত হওয়া তাঁর মায়ের মর্যাদার একজন গায়কের জন্য অবমাননাকর এবং পদ্মশ্রী একজন জুনিয়র আর্টিস্টের জন্য বেশি প্রাপ্য, ‘গীতাশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় নয়। তাঁর পরিবার এবং তাঁর গানের সমস্ত প্রেমীদের খারাপ লাগছে ‘।
উল্লেখ্য যে, ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি মাসে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গীতশ্রী। রক্তচাপ ওঠা নামা করার পাশাপাশি হার্ট ফেলিওর ছিল। এরপর কোভিডে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তিরত করা হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। কিছুদিনের মধ্যেই কোভিডমুক্ত হন তিনি। কোমরের ভাঙা হাড়ের অস্ত্রোপচার হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। সোমবার(১৪ ফেব্রুয়ারী) রাত থেকে শুরু হয় পেটে ব্যথা,কমতে থাকে রক্তচাপ। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) সকালে তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল আইসিইউতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মঙ্গলবার সন্ধ্যে ৭:৩০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত,সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন ভারতীয় প্লেব্যাক গায়ক এবং সঙ্গীতজ্ঞ,যিনি বাংলা সঙ্গীতে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি ২০১১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান “বঙ্গ বিভূষণ” পেয়েছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে জয় জয়ন্তী এবং নিশি পদ্মের মতো চলচ্চিত্রে তাঁর গানের জন্য শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক গায়কের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও জিতেছিলেন। এছাড়াও তিনি ১৭টি হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে গান গেয়েছেন।