শিরোনাম
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৮ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

“আমি আত্মহত্যার পক্ষে”-নাদিয়া।

Satyajit Das / ৬৫৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

নাদিয়া ইসলাম(লেখক,গবেষক ও কলামিস্ট):সম্ভবতঃ গত সপ্তাহে একজন বয়স্ক বিশ্বাসী বাঙালি ভদ্রলোক ফেইসবুক লাইভে আইসা উনার জীবন কত যন্ত্রণাময়, উনার পোলাপাইন উনারে দেখাশোনা করেন না, উনার ব্যাবসায়িক অংশীদাররা উনার কত টাকা মাইরা উলটা উনার নামেই মামলা দিছেন, উনি কত একলা- সেই আলাপ দিয়া নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল মাথায় ঠেকায়ে গুলি কইরা ঢিস্টিং ঢিস্টিং আত্মহত্যা কইরা আপনাগো হাচি-টিকটিকি শাসিত নিস্তরঙ্গ ফেইসবুক জীবন আন্দোলিত কইরা গেছেন।

সম্ভবতঃ কইলাম এই কারণে যে আমি সেই ভিডিও দেখি নাই, দেখার আগ্রহও নাই, আমি ভদ্রলোকের নাম ধাম কিছুই জানি না, জানারও আগ্রহ নাই। আপনাদের কেউ যদি কমেন্টে সেই নিয়া আলাপ দিতে আসেন বা আমারে কোনোপ্রকার ভিডিও লিংক দেন, তাইলে নগদ ব্লক খাবেন।

সুতরাং আমার সাথে নো হেংকিপেংকি। সামঝা?

তো আত্মহত্যা নিয়া আমি প্রথমে আমার অবস্থান ক্লিয়ার করি। আত্মহত্যারে আমি মূলতঃ ভাগ করি পাঁচ ভাগে।

প্রথম ভাগে আছে নিজের এখতিয়ার বহির্ভূত আবদার মিটাইতে বা অন্যরে ঝামেলায় ফেলার আগ্রহে আত্মহত্যা। অর্থাৎ আমারে বিয়া না করলে বিষ খাবো, বা অমুকটা না কিনা দিলে গলায় দড়ি দিবো, বা এ্যাসাইলাম না দিলে পুরা পরিবার নিয়া আত্মহত্যা করবো মার্কা কথাবার্তা। আমি এইসব আ বা ল চো দা আত্মহত্যারে আত্মহত্যা বলি না; বলি ব্ল্যাকমেইল। এবং এইগুলিরে আমি অপরাধ বইলা মনে করি। আমি মনে করি, এইসব লোকজনরে আত্মহত্যা করতে অনুমতি দেওয়ার আগে বাইন্ধা পিটানি উচিত তিন দিন।

দ্বিতীয় ভাগে আছে অন্যের কথায়, অন্যের বুদ্ধিতে প্ররোচিত হইয়া, মাদকাসক্ত হইয়া, অত্যাচারিত বা ধর্ষিত বা অপমানিত হইয়া, অর্থাৎ পরিস্থিতিতে বাধ্য হইয়া আত্মহত্যা করা। এই ধরণের আত্মহত্যাকারীরা অনেকেই বেকুব, অনেকে পরিস্থিতির শিকার। উনাদের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে, কিন্তু বিশেষ প্রেম নাই। কারণ এইসব ‘বেশিরভাগক্ষেত্রেই’ যেই ‘সমস্যার’ কারণে উনারা আত্মহত্যা করতে যাইতেছেন, তার সমাধান আছে কোনো না কোনো প্রকার। আমাদের লাইভ ভিডিওওয়ালা ভাইসাব এই ক্যাটেগোরিতে পড়েন।

তৃতীয় প্রকার আত্মহত্যা হইতেছে নিজের ইচ্ছায়, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে বা কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়া সমাজ সংসার সভ্যতা ঈশ্বর কাউরেই চু দ লা ম না বইলা আত্মহত্যা করা। যেমন, বাঁইচা থাকতে ভাল্লাগতেছে না বইলা বিষ খাওয়া, বা জীবনে আমার আর তেমন কিছু করার নাই বইলা হাতের রগ কাইটা ফেলা, বা নিজের আদর্শ প্রমাণ করতে বুকে বোমা বাইন্ধা শত্রুসীমায় ঢুইকা পড়া বা অন্যের জীবন বাঁচাইতে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ কইরা শহীদ হইয়া যাওয়ার মতো আত্মহত্যা। এইসব আত্মহত্যারে আমি সমর্থন এবং ক্ষেত্রবিশেষে মহিমান্বিত করি।

চতুর্থ ভাগে আছে রোগাক্রান্ত হইয়া, রোগ সারানো সম্ভব না জাইনা এবং বয়স হইয়া শুইয়া থাইকা টায়ার্ড হইয়া আত্মহত্যা। যারে ইংরেজিতে বলা হয় ইউথনেশিয়া। এই আত্মহত্যার প্রতিও আমার পূর্ণ সমর্থন আছে।

আর লাস্টলি, পঞ্চম ভাগে আছে ভুলে আত্মহত্যা করা। তবে এই বেকুবদের নিয়া আমার বলার কিছু নাই। ভুল কইরা কেউ মইরা গেলে আমি কী কইতে পারি, কন?

আত্মহত্যা নিয়া এই হাবিতং কপচানোর মূল উদ্দেশ্য হইলো বেশিরভাগ মানুষের আত্মহত্যা নিয়া ভুল ধারণা। অনেকেই আত্মহত্যাকারীদের মানসিক রোগগ্রস্থ বইলা মনে করেন। এইটা বেশিরভাগ অর্থে ভুল ধারণা। মানসিক রোগগ্রস্থ আর আত্মহত্যা প্রবণতা একই জিনিস না। মানুষ যে শুধুমাত্র মানসিক রোগগ্রস্থ হইয়া, বিষন্নতায় ভুইগা, টেকা পয়সা জামাই বউ বাচ্চা হারায়া কানতে কানতে আত্মহত্যা করেন, তা না। আমার খুব প্রিয় রাঁধুনী এ্যান্থোনি বোর্ডেইন কোনো প্রকার মানসিক রোগে ভুগেন নাই। তিনি একদিন সকালে ঘুম থিকা উইঠা কোনো কারণ ছাড়া গলায় ফাঁস দিয়া আত্মহত্যা করছেন। বোর্ডেইন একজন সফল মানুষ ছিলেন, তার টাকা পয়সা খ্যাতি প্রেম কিছুরই অভাব ছিলো না। আমার প্রিয় অংকবিদ ও বিজ্ঞানী এ্যালান টুরিং আত্মহত্যা করছেন, প্রিয় লেখক সিলভিয়া প্লাথ আত্মহত্যা করছেন, প্রিয় শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান হফ আত্মহত্যা করছেন, প্রিয় ফ্যাশান ডিজাইনার আলেকজান্ডার ম্যাকুইন আত্মহত্যা করছেন, প্রিয় মিউজিশিয়ান কার্ট কোবেইন আত্মহত্যা করছেন। উনারা ছাড়াও পৃথিবীতে গড়ে বছরে এক মিলিয়ন অবিখ্যাত মানুষ আত্মহত্যায় মারা যান। এবং উনাদের বেশিরভাগই মানসিক রোগগ্রস্থ মানুষ না (সূত্র-১)।

২০০৬ সালে নেচারে পাবলিশ হওয়া ‘জিনেটিক্স অভ সুইসায়েড’ আর্টিকেলে গবেষকরা দেখান, আত্মহত্যার প্রবণতা ট্রিপটোফ্যান হাইড্রোক্সিলেজ-১ ও ২ জিনের পলিমরফিজম, সেরেটোনিন ট্রান্সপোর্টার জিনের ইনডেল পলিমরফিজম ও মনোএমিন অক্সিডেইজ-১ এনজাইমের লো এ্যাকটিভিটি সূত্রে তৈরি হয় এবং মোট আত্মহত্যার ৪৩%-৪৫% ক্ষেত্রে এইসব জিনেটিক্স প্রভাব ফেলে (সূত্র-২, ৩)। মনোজাইগোটিক জমজদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা ডাইজাইগোটিক জমজ এবং অন্যান্য মানুষদের চাইতে বেশি থাকে জিনেটিক কারণে। ব্রেইনের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স, হাইপোথ্যালামাস এবং অক্সিপিটাল কর্টেক্সে লো ট্রিপটোফ্যান লেভেল, লো সেরেটোনিন ট্রান্সপোর্টার সাইট, হাই প্রোল্যাকটিন সেক্রেশান এবং ব্রেইনস্টেমে ডোপামিনার্জিক পাথওয়ে পাল্টায়ে যাওয়ার ফলে মানুষ আত্মহত্যা প্রবণ হইয়া উঠেন।

সুতরাং যারা ঘাড় ধইরা আত্মহত্যা করতে চাওয়া মানুষদের পাগল ঠাউরায়ে মানসিক ডাক্তারগো কাছে পাঠাইতে চান, তাদের এই বেলা জানায়ে রাখি, সাইকোফার্মাকোলজি দিয়া এই প্রবণতারে সারানো সম্ভব না। যেইসব গা ধা ধার্মিকরা ভাবেন ধর্ম বা ঈশ্বর বিশ্বাস বা ‘সুস্থ’ জীবন যাপনের মাধ্যমে আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব, সেইসব গা ধা দে র ও আমি জানাইতে চাই, ঈশ্বর বা আল্লাও আত্মহত্যা ঠেকাইতে পারেন না। আল্লার দৌড় বড়জোর সর্দিজ্বর ঠেকানোতে সীমাবদ্ধ। পারিপার্শ্বিক যেই সকল কারণে অর্থাৎ দারিদ্রতা বা অভাবজনিত কারণে,সংসারে অশান্তিজনিত কারণে বা ধর্ষিত বা অত্যাচারিত বা অপমানিত বা মাদকাসক্ত হইয়া কেউ আত্মহত্যা করতে উদ্ধুদ্ধ হইলে সেই পরিস্থিতি পালটানো সম্ভব অবশ্যই, কিন্তু যাদের ব্রেইনের গঠন আপনার চাইতে ভিন্ন, তাদের পরিস্থিতি পাল্টায়ে আপনি কোনো বা ল ফেলতে পারবেন না নিশ্চিত থাকেন।

আসেন,এ্যালা উদাহরণ দেই। ধরেন আপনি আমারে ধর্ষণ করতে আসলেন। তবে প্রথমেই বইলা নিতে চাই যে, আমারে ধর্ষণ করার মতো আপনার এমন লিঙ্গের জোর হয় নাই যে আপনি আমারে ধর্ষণ করতে আইসা আস্ত লিঙ্গ ও আস্ত বিচি লইয়া নাচতে নাচতে ফুল তুলিতে তুলিতে ফূর্তিতে বাড়ি ফেরত যাবেন। তবুও ধরেন পাঁচজন ঘোড়ার সিঙ্গিওয়ালা মিশা সওদাগর স্টাইলের এ্যাংলো ইন্ডিয়ান পালোয়ান মিলা আমারে বাইন্ধাবুইন্ধা ধর্ষণ কইরা ফেললেন। তো যদি আমারে খুন না কইরা ফেলান, আমি ঐ পরিস্থিতি থিকা বাইর হইয়া সোজা পোলিস স্টেশানে গিয়া আমার ভ্যাজাইনাল সোয়াব সাপ্লাই দিয়া আপনাগোর নামে মামলা করবো দুই মিনিট দেরি না কইরা। কিন্তু সেই একই ঘটনা অন্য একজন মেয়ের সাথে ঘটলে সম্ভাবনা আছে উনি ধর্ষণ শেষে ট্রমাটাইজ থাকবেন। তিনবার স্নান করবেন। এরপর পোলিসের কাছে গেলেও উনি সব ডিটেইল ভুইলা যাবেন। এরমধ্যে দুইবার অজ্ঞান হইয়া যাবেন কানতে কানতে। এইক্ষেত্রে আমি কি বলবো আমি ঐ মেয়ের থিকা শক্তিশালী? না। আমি সেই আলাপ দিবো না, কারণ আমি বেকুব না। আমি জানি আমার ব্রেইনের গঠন আর উনার ব্রেইনের গঠন এক না। সুতরাং যেই পরিস্থিতিতে পইড়া ঐ লাইভ ভিডিওওয়ালা ভদ্রলোক আত্মহত্যা করছেন, সেই একই পরিস্থিতিতে আমি পড়বোই না। পড়লেও আমার আত্মীয় স্বজন আমারে ত্যাগ করছেন এই খুশীতে বাকবাকুম করতে করতে আমি মাচুপিচু চইলা যাবো। গিয়া পাহাড়ের মাথায় বইসা বিড়ি ফুঁকবো ফুঃফুঃ কইরা।

অফ-টপিক:- আমার আত্মীয় স্বজনরা যে ক্যান আমারে এখনও ত্যজ্য করতেছেন না এইটাই আমার মাথায় ঢুকে না। ত্যজ্য করার মতো সকল কর্মকাণ্ড আমি প্রতিদিন করতেছি। তারপরেও লাভ হোয়েঙ্গা নেহি। আপনাগো কাছে বুদ্ধি থাকলে দিয়েন।

এনিওয়ে। সুতরাং আত্মহত্যা প্রবণ মানুষরে আপনি হইলে কী করতেন টাইপের আ বা ল চো দা ডায়লগ দিতে যাবেন না। আপনার মতো যদি উনি চিন্তা করতেন, বা আপনার মতো যদি উনার শরীর মাথা মন ও পরিস্থিতি হইতো তাইলে উনি আর উনি থাকতেন না, উনি আপনি হইয়া যাইতেন।

আত্মহত্যারে আধুনিক বিজ্ঞান সহ আমরা সবাই সমস্যার চোখে দেখি সন্দেহ নাই। কিন্তু আমাদের জানা থাকা উচিত এই চোখ আমাদের নিজেদের চোখ না। এই চোখ পুঁজিবাদের চোখ। পুঁজিবাদের প্রধান উদ্দেশ্য সস্তায় শ্রমিক উৎপাদন। যেই কারণে পুঁজিবাদের সমকামী, হিজড়া, বন্ধ্যা কাউরেই বিশেষ পছন্দ না। পুঁজিবাদের জন্মদাতা আব্বু প্রাতিষ্ঠানিক সবগুলি ধর্মেও তাই বড়ো বড়ো ডায়লগ দিয়া আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। কারণ ধর্ম ও পুঁজিবাদ মানুষরে দেখে সমষ্টি আকারে। মানুষ যে দিনশেষে আলাদা ব্যক্তি, আলাদা জিনেটিক কোড, আলাদা আঙ্গুলের ছাপ, আলাদা চিন্তা লইয়া সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একজন মানুষ, তা ধর্ম ও পুঁজিবাদের মাথাব্যথার বিষয় না। সেই কারণে আমাদের সমাজে আত্মহত্যাকারী পরাজিত ব্যক্তি, পলায়ণপর ব্যক্তি, দুর্বলচিত্ত ব্যক্তি। অথচ দেখেন, আপনার পেটে ভাত নাই গত তিরিশ বছর, আপনার দেশ উড়ায়ে দেওয়া হইছে বোমা মাইরা, আপনি আঠারো ঘণ্টা রিক্সার প্যাডেল ঠেলেন, আপনার শ্বশুরবাড়ি গরম তেল ঢাইলা আপনার শরীর পুড়ায়ে দিছে, তারপরেও ধর্ম ও পুঁজিবাদ আপনারে বাঁইচা থাকার সোলায়মান সুখনিয় মোটিভেশান চো দা য়। আর সে কারণেই আমি এত কষ্টের জীবনের পরেও বাঁইচা থাকারেই বরং দুর্বলচিত্তের কাজ ভাবি। আমি মনে করি, যেই জীবনের নূন্যতম নিয়ন্ত্রণ আপনার নাই, সেই জীবনে বাঁইচা থাকাই বরং পরাজয়ের।

আমি আল্লা টাল্লা বিশ্বাস করি না আপনাদের জানা থাকার কথা। আমি মনে করি না জন্ম মৃত্যু বিয়ে এইসবের কোনো কিছুই আল্লার ইশারায় ঘটে। আমি বিশ্বাস করি, জন্মের উপর আমাদের হাত না থাকলেও জীবনের উপর এবং মৃত্যুর উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে, এবং তা থাকা উচিত। এই জীবন নিয়া খুশী না থাকলে বা শুধুমাত্র ‘আমার চ্যাটের খুশি’ মার্কা ইচ্ছাতেও আমাদের মৃত্যুর দায়িত্ব আমাদের নিজেদের নেওয়া উচিত। হ্যাঁ, আমি জাইনা শুইনাই আত্মহত্যা প্রমোট করতেছি। কারণ, মানুষের বোঝা উচিত, আমরা যেই অপারেটিং সিস্টেমে বাস করি, সেইটা একটা বা লে র অপারেটিং সিস্টেম। এই অপারেটিং সিস্টেম আজকেই ভাইঙ্গা পড়া উচিত। ভাইঙ্গা গুঁড়াগুঁড়া হইয়া যাওয়া উচিত। আর প্রতিটা আত্মহত্যা এই কারণে আর পৃথক কোনো স্বতন্ত্র কোনো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা না,প্রতিটা আত্মহত্যা হইতেছে সোর্স কোড ভাইঙ্গা সিস্টেমরে তামা তামা বানানোর সামষ্টিক ভাইরাস।

প্লাস। ২০২২ এ আইসা আপনাদের বোঝা উচিত পুনর্জন্ম, ইহকাল,পরকাল এইগুলি গালগপ্পো ছাড়া আর বিশেষ কিছু না। এও বোঝা উচিত পরকালে বা পরের জন্মে আপনি কী সোনার চাকতি মোড়ানো মোরোব্বা খাইবেন স্বর্গের বেশ্যাগো কোলে বইসা, তার গল্প দিয়া এই পৃথিবীর যন্ত্রণা,এই পৃথিবীর একাকীত্ব,এই পৃথিবীর অভাব,এই পৃথিবীর কষ্ট, এই পৃথিবীর বালের সিস্টেমের অসাড়তা দূর হইয়া যায় না। তাই যিনি আত্মহত্যা করতে চান, তিনি একশবার আত্মহত্যা করবেন। অন্যরে দোষ দিতে না, বরং নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে আত্মহত্যা করবেন। কষ্ট সহ্য করার চাইতে মৃত্যু আরামদায়ক অপশন হইলে তাই বাইছা নিবেন। বাঁইচা থাইকা বোর হইয়া গেলে পাহাড়ের মাথায় উইঠা লাফ দিবেন। পৃথিবীরে আর দেওয়ার কিছু না থাকলে পকেটে নুড়ি নিয়া পানিতে ডুইবা মরবেন। হ। আপনি মরলে আপনার আত্মীয়রা আপনি কত সম্ভাবনাময় মেধাবী মানুষ ছিলেন এই গান গাইয়া তিন আলিফ লম্বা টান দিয়া দুইদিন কানবেন সত্য, কিন্তু তারপরই উনারা খাস্তা পরোটা দিয়া কালাভুনা আর মালাই চা খাইবেন,মশারির ভিত্রে শুইয়া নিঃশব্দে যৌন সঙ্গম কইরা পাশ ফিরা কোলবালিশ লইয়া ঘুমায়ে যাবেন আগের মতো। আর যেই আত্মীয় বাঁইচা থাকতে আপনারে বুঝেন নাই, আপনার ব্যথা উপলব্ধি করেন নাই, আপনার যন্ত্রণায় সমব্যথী হন নাই, আপনি মরার পরে উনার আহাউহু কান্না মানায় না, সুতরাং আপনারা যদি মরার পর ভূত হইয়া ফেরত আসেন, তাইলে আমার অনুরোধ থাকবে এইসব ন্যাকামি চো দা নো আত্মীয়দের ধইরা কইষা একটা চটকানা মারবেন।

ম্যালকম ব্রাউনের তোলা আমার খুব প্রিয় একটা ছবি আছে। ১৯৬৩ সালে সাইগনের রাস্তায় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু বইসা আছেন মুখ সোজা কইরা। উনার সমগ্র শরীরে আগুন জ্বলতেছে দাউদাউ। এই আগুন উনি নিজেই নিজের শরীরে দিছেন। বৌদ্ধদের উপর হওয়া ভিয়েতনাম সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদে। সেই ছবি আমি যতবার দেখি,ততবার আমার শরীর কাঁইপা উঠে। কী সাহস একজন মানুষের! কী অসম্ভব শক্তি কী ভয়ংকর নিয়ন্ত্রণ একজন মানুষের! নিজের শরীরে নিজে আগুন ধরায়ে দিয়া একটা শব্দ না কইরা, এক ফোঁটা চোখের পানি না ফালায়া,এক বিন্দু না নইড়া, চামড়া পোড়া বিভৎস গন্ধে বিচলিত না হইয়া একজন সাধারণ মানুষ বইসা আছেন রাস্তায়, একটা ভয়ংকর অন্যায়ের প্রতিবাদে! এই আত্মহত্যারে কি আপনি পরাজয় বলবেন? দুর্বলচিত্ত মানুষের কাজ বলবেন? যারা সুইসায়েড মিশনে যান, যুদ্ধে যারা জাইনা শুইনা এনিমি লাইনে ঢুইকা পড়েন, মাইনফিল্ডের উপর দিয়া হাঁইটা যান অন্য যোদ্ধাদের সাবধান করতে, তাদের কি আপনি দুর্বলচিত্তের পরাজিত মানুষ বলবেন? হাহা।

আত্মহত্যা পাওয়ারফুল। সমাজ ও ঈশ্বররে মিডল ফিঙ্গার দেখানোর মতো পাওয়ারফুল। এবং আত্মহত্যা একজন মানুষের গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার। তবে হ্যাঁ, আপনি নিজে আত্মহত্যা না করতে চাইলে, আপনার প্রিয় মানুষদের আত্মহত্যা না করতে দিতে চাইলে আপনারে কাজ করতে হবে। পাশের মানুষের দিকে তাকাইতে হবে, তার প্রতি মমতার হাত বাড়ায়ে দিতে হবে এবং আপনার বা লে র সিস্টেমের দিকে এখুনি আঙুল তুলতে হবে, সমাজ পরিবর্তনের আলাপ দিতে হবে, “আল্লার ইচ্ছায় আমরা গরীব দুঃখী মিসকিন, বেহেশতে আমরা হ্যান পায়েঙ্গা ত্যান পায়েঙ্গা” মার্কা ফালতু আলাপ দেওয়া বন্ধ কইরা কল্পনার রাজ্যে বিচরণ বন্ধ কইরা নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজের হাতে নেওয়া শিখতে হবে। যারা মানসিক রোগাক্রান্ত তাগোরে চিকিৎসা করাইতে হবে, এবং অতি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে সকল ক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রবণতা নিরাময়যোগ্য না।

মরা ফরা আমি ডরাই না। আর মৃত্যু ডরাইতে পারেন আপনারা যারা সারাদিন আকাম কুকাম কইরা বেড়ান, একমাত্র তারা। আমার কাছে মৃত্যু শক্তির রূপান্তর ছাড়া আর কিছুই না। জীবনও আমার তৈরি করা বাস্তবতা ছাড়া আর কিছু না। তবে মইরা গিয়া যদি দেখি দোজক টোজক বইলা কিছু আছে, সেইটাও বেশ আনন্দের জায়গা হওয়ার কথা। আমারে দোযখে পাঠাইলে আমি এ্যালান টুরিং এবং কার্ট কোবেইন এবং সিলভিয়া প্লাথ মিল্যা আগুনের পাশে বইসা তাস খেলবো। আর হ, আপনি ঠিকই ধরছেন,আমার নিজের প্ল্যান আছে আত্মহত্যার। খুব ক্লাসিকাল রোমান্টিক পদ্ধতিতে হাতের রগ কাইটা নিজের রক্তের ভিতর শুইয়া থাইকা আমি দীর্ঘ সময় নিয়া প্রাণশক্তি নিঃশেষ হইতে দেখতে দেখতে মরতে চাই। তবে সেইটা যেইদিন আমার ইচ্ছা হবে, সেইদিন। কারণ আমি এখনই মরতে চাই না। আমি মরলে আপনারা ধার্মিকগুলি অনেকে খুশির চোটে অজ্ঞান হইয়া যাবেন আমি জানি। আর সেই কারণেই আমি এখনই মরবো না। আপনাদের জ্বালানো আমার এখনও বহু বাকি আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন