শিরোনাম
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করছেন হবিগঞ্জের ‘শাওন’ কুমিল্লায় ছোট ভাইয়ের হাতে বড় ভাই খুন সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জের ছাতক থানার দোলার বাজার জটি গ্রামের তুমুল সংঘর্ষ ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পঞ্চদশ সমাজ কল্যাণ সংস্হার আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ১৭ রামাদ্বান ঐতিহাসিক বদর দিবস মহান স্বাধীনতা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন তাড়াইলে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন ঘাটাইলে গণহত্যা দিবস পালিত বরিশালে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের বসতবাড়ি দখল ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন স্বাধীনতা দিবসে বীর শহিদদের প্রতি পুনাকের শ্রদ্ধাঞ্জলি
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

গর্ভধারণের বয়স ও কিছু সমস্যা।

Satyajit Das / ৭১৬ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

সিলেট হেল্থ ডেস্ক:বর্তমান যুগের ব্যস্ততা,ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা আর অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে অনেকেই মা হবার সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দেরি করে ফেলেন। ফলে ৩৫ বছরের বেশি গর্ভবতী মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বেশি বয়সে মা হওয়ার কিছু বাড়তি জটিলতার ঝুঁকি থাকে। তাই বেশি বয়সে মা হওয়ার পূর্বে আপনাকে এ ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। একই সাথে পরিবার ও সেবাদানকারীদেরও এ মায়েদেরকে দিতে হবে বাড়তি পরিচর্যা ও মনযোগ। ৩০ পেরিয়ে গেলে প্রজনন ক্ষমতা ৫০ শতাংশ কমে যায় এবং বয়স ৩৫ অতিক্রম করলে এই হার কমে যায় আরও ৩০ শতাংশ। তবে একটি সন্তান জন্ম নেওয়ার পর এই ঝুঁকি কমে যায়। তিরিশের পর সন্তানের জন্ম দিলে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলেও প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। তাই সচেতন থাকা উচিত। গর্ভধারণের একটি নির্দিষ্ট বয়স আছে।বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা মনে করেন,২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই মেয়েদের প্রথমবার মা হওয়া উচিত। আগে বা পরে হলেই বিপদের ভয়। নির্দিষ্ট বয়সের আগে মা হলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন নারীরা।

মা হওয়ার জন্য ২০ থেকে ২৪ বছর হচ্ছে উপযুক্ত সময়। তবে মা হওয়ার জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত তেমন ঝুঁকি থাকে না। তবে ৩০ বছরের পর ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এ ছাড়া ৩৫ বছরের পর মারাত্মক ঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে। অনেকে মাসিক বন্ধ হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কিন্তু গর্ভধারণ করবেন বা মা হবেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। কতগুলো মেডিকেল চেকআপ করে নিতে পারলে ভালো। গর্ভধারণের আগে একজন নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে:
একজন মেয়ে জন্মের সময়ই কিছুসংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায়,যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এ সময় গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। বয়সের কারণে ওজন বৃদ্ধি ও শারীরিক স্থূলতাও গর্ভধারণে বাধার সৃষ্টি করে। বেশি বয়সে সন্তান গর্ভে ধারণ করলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ,হরমোনগত সমস্যা কিংবা মিসক্যারেজের আশঙ্কাসহ বিভিন্ন কারণে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কম থাকে। সাধারণত ৩৪ বছর বয়সের পরে মা হলে সেটিকে বেশি বয়সের মাতৃত্ব বলা হয়। ৩৪ বছরের পর প্রথম সন্তান ধারণ করলে প্রথম তিন মাসে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ছয় মাসের পর রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার সন্তান প্রসবের সময়ও জটিলতা থাকে। দেখা যায়, ৩৪ বছর বয়সের পর পেশির সংকোচন-প্রসারণ কমে যায়, নমনীয়তা কম হয়।

পেশি শক্ত হয়ে যায়। সাধারণভাবে নরমাল ডেলিভারি কম হয়। সিজারিয়ান করতে হয়। এ সময় জরায়ুতে টিউমার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ হতে পারে। সাধারণত গর্ভধারণের ছয় মাস পর থেকে উচ্চরক্তচাপ দেখা দেয়। অনেক সময় খিঁচুনিও হয়। বেশি বয়সের মায়ের অনেক সময় সন্তান বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কা করেন। এ জন্য সাধারণ কিছু পরীক্ষা যেমন অ্যালফা ফেটো প্রোটিন-এএফপি, এইচসিজি হরমোন কী পরিমাণ আছে,তা পরীক্ষা করা যেতে পারে। এসব হরমোন গর্ভে থাকা বাচ্চা থেকে তৈরি হয়। এগুলো যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তখন আমরা ধারণা করি, বাচ্চার সমস্যা থাকতে পারে। তবে আরও নির্দিষ্টভাবে বোঝার জন্য অ্যামনিয়োসিনথেসিস ও কোরিওনিক ভিলি পরীক্ষা করা যেতে পারে। সমস্যা বুঝলে আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়। এ ছাড়া বেশি বয়স হলে বাচ্চা একটু উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে বা আড়াআড়ি হয়ে থাকে। এমন সমস্যা হলে সাধারণভাবে বাচ্চা হতে সমস্যা হয়।

মাতৃত্ব একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান প্রত্যেক মা -বাবারই স্বপ্ন। কিন্তু আমাদের সমাজে মা হতে গেলে একজন মেয়েকে অনেক সময় অনেক প্রতিকূল ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে যদি মা এর বয়স যদি ৩০ বা এর বেশি হয়ে থাকে। যদিও একবিংশ শতাব্দীর এই দিনে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতিরও অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন বেশি বয়সেও স্বামী-স্ত্রীরা মা-বাবা হতে পারে। বেশি বয়সে মা হওয়ার কিছু সমস্যা:-

১. গর্ভধারণে দীর্ঘসূত্রিতাঃ-
একজন মেয়ে জন্মের সময় কিছু সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় যা সময়ের সাথে সাথে নিঃশেষ হতে থাকে। ৩০ বছরের পর থেকেই ডিম্বানুর সংখ্যা এবং গুণগত মান কমতে থাকে। এতে করে এ সময়ে গর্ভধারণ করার চেষ্টার পরও দিনের পর দিন ব্যর্থ হতে পারে। তাই ৩০ বছরের পর কেউ যদি মা হবার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করার পরও ব্যর্থ হন, তবে দেরি না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ডিম্বানু উৎপাদক ঔষধ খেতে পারেন।
২) জেষ্টেশনাল ডায়াবেটিসঃ-
গর্ভকালীন সময়ে কোন কোন মা ডায়াবেটিস এ ভুগে থাকেন, একে বলে। অধিক বয়সে গর্ভধারণ করলে এর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। কনসিভ করার আগে থেকেই কিছু মা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে কনসিভ করার আগ থেকেই তাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বাচ্চার বিকলাঙ্গতা,ওজন বৃদ্ধি ও অধিক মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
৩) উচ্চ রক্তচাপঃ-
গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মায়েদের গর্ভকালীন সময় উচ্চ রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভকালীন সময় নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেক আপ এর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা এড়ানো যায়। যারা আগে থেকেই উচ্চ রক্ত চাপের জন্য ঔষধ খাচ্ছেন তাদের উচিত গর্ভধারণের আগেই ডাক্তারের পরামর্শে বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর ঔষধ পরিবর্তন করা।
৪) অধিক গর্ভপাতের সম্ভাবনাঃ-
এ সময়ে অধিক গর্ভপাতের কারণের মধ্যে রয়েছে মায়ের বিভিন্ন অসুখ যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ,থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ ইত্যাদি। এছাড়া বাচ্চার জিনগত ত্রুটি বয়স বৃদ্ধির সাথে বাড়ে যা গর্ভপাতের কারণ ঘটায়।
৫) সিজারের সম্ভাবনা বৃদ্ধিঃ-
গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেবার কারণে বয়স্ক মায়েদের সিজারের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৬) ভ্রূণের জিনগত ত্রুটিঃ-
বয়স বৃদ্ধির সাথে ভ্রুনের জিনগত ত্রুটি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মায়ের বয়স বৃদ্ধির সাথে ডাউন সিনড্রোম (ক্রোমোজোমাল ত্রুটিপুর্ন বাচ্চা) নিয়ে বাচ্চা জন্মানোর হারও বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে দেখা গেছে ২৫ বছর বয়সি মায়েদের ডাউন সিনড্রোম বাচ্চা হবার ঝুঁকি থাকে প্রতি ২৫০০ জনের মধ্যে একজনের, যা ৪০ বছর বয়সি মায়েদের ক্ষেত্রে গিয়ে দাঁড়ায় প্রতি ১০০ জনে একজন। এমনিয়টিক ফ্লুইড (গর্ভস্ত বাচ্চার চারিদিকের পানি) নিয়ে পরীক্ষা করে কনসিভের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ভ্রুনের জিনগত ত্রুটি সনাক্ত করা সম্ভব।
৭) অন্যান্য জটিলতাঃ-
এছাড়াও মাল্টিপল প্রেগনেন্সি (একাধিক বাচ্চা গর্ভধারণ) সময়ের আগেই বাচ্চা হওয়া,গর্ভস্ত বাচ্চার মৃত্যু,কম ওজনের বাচ্চা জন্মদান ইত্যাদি জটিলতা বয়েসের সাথে সাথে বাড়ে। তবে এ সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিয়মিত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্বাবধানে থাকলে একজন সুস্থ মা পারবেন একটি সুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে।

হতাশার মধ্যেও আশার কথা হলো ৩৫ বছরের পরেও মেয়েরা এখনও সুস্থভাবেই সন্তান জন্মদান করছে। আমেরিকার কেয়ার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centre for Disease Control and Prevention)–এর এক তথ্য মতে, সকল অঞ্চলের ৩৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মায়েদের প্রথম সন্তান ধারণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পূর্বে ডাক্তাররা ৩৫ বছর বা এর বেশী বয়সের প্রেগনেন্সিকে জেরিয়াট্রিক প্রেগনেন্সি (Geriatric Pregnancy) বলে আখ্যায়িত করলেও এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের যথেষ্ট উন্নতির কারণে তারা ৩৫ বা এর বেশি বয়সের প্রেগনেন্সিকে অ্যাডভান্সড ম্যাটারনাল এজ (Advanced Maternal Age) বলে।
৩৫ বছরে বা তার পরে যদি আপনি কনসিভ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই দেরি না করে গাইনোকলোজিস্টের সাথে কথা বলতে হবে। গবেষণায় দেখা যায় মহিলাদের ধারণা প্রেগনেন্সিতে প্রসব যন্ত্রনা এবং সন্তান জন্মদানের কোন সমস্যা শুধুমাত্র  তাদের বয়সের কারণেই হয়ে থাকে। আর এই অহেতুক ভয়ের জন্য তারা অনেক সময় মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় প্রেগনেন্সির শেষের দিকে এবং তা থেকেই মাঝে মাঝে অনেক জটিলতার সূত্রপাত হয়। চলুন তবে দেখে নেই ৩৫ বছরে মা হতে চাইলে ফ্যাক্টর ও করণীয়সমূহ- 
১) স্বামীর বয়স:- শুধুমাত্র স্ত্রীর বয়সই যে সন্তান ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়,স্বামীর বয়সও এই ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি ফ্যাক্টর।
২) টেস্ট ও স্ক্রিনিং:- গর্ভধারণের পূর্ববর্তী টেস্ট ও স্ক্রিনিংগুলো করিয়ে নিতে হবে।
৩) হরমোন সার্পোট বা ভিটামিন:- অনেক ক্ষেত্রে হরমোন সার্পোট বা ভিটামিন বি,সি লাগতে পারে।
৪) জন্মগত ত্রুটি:- বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি দেখার জন্য (১২-১৩) সপ্তাহে ডাউন স্ক্রিনিং এবং (২০-২২) সপ্তাহে অ্যানোমালি স্ক্রিনিং খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৫) কিছু নিয়মিত পরীক্ষা:- ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
৬) ব্যায়াম:- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
৭) ধূমপান বা মদ্যপান এড়িয়ে চলা:- এ সময়ে ধূমপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮) স্ট্রেস না নেয়া:- বেশি মানসিক চাপও শরীরের জন্য খারাপ। অতিরিক্ত স্ট্রেস নেয়া যাবে না। পরিবারের সহায়তা এ জন্য খুব জরুরি। এছাড়া অবশ্যই ভালো গাইনোকোলজিস্ট এর সাথে পরামর্শ করে নিবেন। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।

ডাঃ মাধুরি দাস।

জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল,সিলেট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

বিভাগের খবর দেখুন