সিলেট অনলাইন ডেস্ক:রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা করেছেন। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে পুতিন বলেন,ইউক্রেন থেকে আসা হুমকির জবাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তিনি আরও বলেন যে,রাশিয়ার ইউক্রেন দখল করার কোনো লক্ষ্য নেই। পুতিন অন্যান্য দেশগুলিকেও সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে রাশিয়ার পদক্ষেপে হস্তক্ষেপ করার যে কোনও প্রচেষ্টার এমন পরিণতি হবে যা তারা আগে কখনও দেখেনি।
মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন,কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করবে। এই বিবৃতি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হল। রাশিয়া ইউক্রেনে “অসামরিকীকরণ” করার জন্য অভিযান চালানোর ঘোষণা করার পরেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর শহর মারিউপোলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে।বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) ভোরে এয়ারক্রুদের কাছে পোস্ট করা একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সমস্ত ইউক্রেনের আকাশসীমা বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
” ইউক্রেনের বর্তমান অবস্থা একেবারেই অনিশ্চিত। আপনারা শান্তি বজায় রাখুন,যে যেখানে আছেন,নিরাপদ আশ্রয়ে থাকুন। বাড়ির বাইরে বার হবেন না। হোটেল ইত্যাদি কোনও আশ্রয়ে থাকলে,সেখানেই থাকুন ‘;-ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশিকায় এরকমটাই বলা হয়েছে।এতে আরও বলা হয়েছে,’ যাঁরা কিভে যাচ্ছেন,পশ্চিম প্রান্ত থেকেও যাঁরা কিভে যাচ্ছেন,তাঁরা নিজেদের আগের অবস্থানে ফিরে যান, সেখানেই থাকুন, বাইরে বার হবেন না। নিজেরা এর আগে যে শহরে ছিলেন,সেই শহর ছাড়বেন না। সকলকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে,আপনারা ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্ত বরাবর কোনও স্থান বেছে নিন,সেখানে নিজেদের নিরাপদে রাখুন। এর পরবর্তীতে কী নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে,সেটা পরবর্তীকালে জানানো হবে।
রাশিয়া ইউক্রেনে ঢুকে পড়ার পর কার্যত যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে দেশে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন,রাশিয়া চাইছে ইউক্রেনের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ঘটাতে। পাশাপাশি, ইউক্রেনে নাৎসিদের প্রভাব দেখা দিয়েছে। সেই নাৎসিকরণ রুখতেই এই অভিযান। পাশাপাশি, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গিয়েছে,ইউক্রেনের রাজপথে রাশিয়ার স্থলসেনা অভিযান চালাতে শুরু করেছে, দেখা মিলেছে ট্যাঙ্কের। গোটা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিন। চিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেন সঙ্কটের মধ্যে সমস্ত পক্ষই যেন শান্তি বজায় রাখে,যেন যুদ্ধবিরতি বজায় রাখে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বন্দে ভারত প্রকল্পের আওতায় একাধিক বিমানে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা শুরু হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার(২৪ ফেব্রুয়ারী) ভারতের একটি বিমান মাঝপথ থেকেই ফিরে আসে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রসংঘে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি। UNSC-তে ভাষণ দিতে গিয়ে, জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেছেন: “দু- দিন আগে নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক করেছিল এবং পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছিল। আমরা উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম এবং পরিস্থিতি সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা মোকাবেলায় জোরালো ও মনোযোগী কূটনীতির উপর জোর দিয়েছিলাম। যাই হোক, আমরা দুঃখের সঙ্গে এই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। বিভিন্ন পক্ষগুলির দ্বারা গৃহীত সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলিতে সময় দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে কর্ণপাত করা হয়নি। তার ফলে পরিস্থিতি একটি বড় সংকটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” এর আগে গত সোমবারই ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন থেকেই যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছিল। এরপরই সেখানে আটকে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্র । কিন্তু যুদ্ধ এবার ভয়ংকর রুপ নিয়েছে । ফলে সেখানে আটকে থাকা ২০ হাজার ভারতীয়র নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। রাষ্ট্রসংঘে সেই উদ্বেগের কথা জানাতে দেখা গিয়েছে তিরুমূর্তিকে।
এদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হবার পর সেখানে আটকে পড়েছেন অনেক ভারতীয় শিক্ষার্থী। তখন দেশে ফেরানো হচ্ছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে,কিন্তু কিয়েভ-সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ হামলা শুরু হয়ে যাওয়ার পরই আকাশপথ বন্ধ করে দিয়েছে ইউক্রেন। যার ধাক্কায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান সেদেশে নামার অনুমতি না পেয়ে ফিরে গিয়েছে নয়াদিল্লিতে।