জাহাঙ্গীর নগর এলাকার টিলাগুলো প্রায় ১৫০ ফুট উঁচু। টিলা কেটে কেটে ঘর বানিয়ে দিব্যি বাস করছে পরিবারগুলো। নিচের অংশ সামনে থেকে দেখলে মনে হবে টিলার পেট কেটে ফেলা হয়েছে। রয়েছে শুধু পেছনের অংশ। কোনোটি আবার ন্যাড়া মাথায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সবুজ টিলার বুকে বেরিয়ে আসা লাল মাটি যেন কাঁদছে! যেন রক্তাক্ত টিলাগুলো।
টিলায় ঘেরা সিলেটের সবুজ রূপ ম্লান হচ্ছে এভাবে।
সিলেট নগরীর পাঠানটুলার জাহাঙ্গীর নগর এলাকায় বেশ কয়েকটি টিলা রয়েছে। নগরের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম দিক চা–বাগানবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় ছোট-বড় অসংখ্য টিলা রয়েছে। সেখানেই বেশি চোখে পড়ে এই বাড়িগুলো। এলাকাবাসী জানান, রাতের আঁধারে পাম্প দিয়ে পানি তুলে চলে টিলা কাটার উৎসব চলে। এর ঠিক উল্টো দিকে অবস্থান আলী বাহার চা বাগান। একই কৌশলে কাটা হচ্ছে এই টিলাগুলো।
টিলা দখল করে টিনের ঘর গড়ে উঠেছে।
একসময় সিলেট শহরকে সবুজ দেখাত। দিনে দিনে তা কমে আসছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় টিলা কেটে হচ্ছে আবাসন। ব্যক্তিমালিকানাধীন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এসব টিলার অস্তিত্ব থাকা দায়। অবৈধভাবে কাটা টিলার নিচে ঝুঁকি নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। টিলাধসের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে কাটা টিলার নিচেই বসবাস করছে মানুষ। একদিকে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে টিলার নিচে লোকজনও ঝুঁকিতে। জরিমানা হওয়াতেও থেমে নেই টিলা কাটা।
জাহাঙ্গীর নগর পংকি টিলার ওপরে টিনের ঘর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর নগর দীর্ঘদিন ধরে কেটে ফেলা হয়েছে টিলা গুলো। প্রতিটি টিলার সামন-পিছন দুদিক ক্ষতবিক্ষত অবস্থা। কোথাও টিলাটির নিচে আবার কোথাও টিলার উপরে ও মধ্যে ভাগে তৈরি করা হয়েছে ঘরবাড়ি। এলাকাবাসী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টিলাটি কেটে কেটে ছোট করা হচ্ছে। প্রায় ৭/৮ বছর ধরে কাটা হচ্ছে টিলাগুলো।
সমতল থেকে প্রায় ১২০ ফুট উঁচু টিলাগুলো কেটে সমান করায় সামনের অংশ কিছুটা ঢালের মতো রয়েছে। এর ঠিক নিচে তৈরি করা হয়েছে দুটি ঘর। এই টিলায় একাধিকবার পরিবেশ অধিদপ্তর, এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ অভিযান চালালেও টিলা কাটা বন্ধ হয়নি।
টিলার চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি। টিলা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা।টিলার চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি।
স্থানীয়রা বলেন, পৃথিবীর পরিবেশ আজ হুমকির মুখে। আর এ সময়ে সিলেটে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব। তারা বলেন,সিলেটের পাহাড়-টিলা নিশ্চিহ্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত টিলা কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের বের করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। পরিবেশ অধিদপ্তরকে টিলা কারা কাটছে, তা দায়িত্ব নিয়ে খোঁজ নিতে হবে।
সিলেট বিভাগের পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক জানান, সিলেটে টিলা কাটার জন্য বিভিন্ন সময় আমরা অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছি। একই কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটালে আরও বেশি জরিমানা করা হবে। তিনি বলেন, টিলাকাটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ আছে।