ইসমাইল হোসেন শিমুলঃ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় সীমান্তের পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে কৃষকের সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।অপরদিকে কোন কোন এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে এবং তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি মানুষের বসতবাড়িসহ কয়েকটি হাট বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে গত ২৬ মার্চ আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে প্রথমে ৫০ হেক্টর এবং পরবর্তীতে ৫০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যায়। আর অ-সময়ে এমন দফায় দফায় বন্যার কবলে পড়ে উপজেলাবাসীর মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার সকাল থেকে গোয়াইনঘাটের ডাউকি, সারি এবং পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুপুরের দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী রুস্তমপুর, পূর্ব জাফলং, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং, গোয়াইনঘাট সদর ও পূর্ব আলীরগাঁও এবং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনয়নের অধিকাংশ এলাকাসহ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে করে তলিয়ে যায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগাযোগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট। একই সঙ্গে প্লাবিত হয়ে পড়ে উপজেলার কয়েকটি হাটবাজার এবং মানুষের বসতবাড়িসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়াও জাফলং-রাধানগর-গোয়াইনঘাট সড়কের জাফলং চা বাগান এলাকাসহ কয়েকটি জায়গা তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্র জাফলংয়ের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকার সাথে গোয়াইনঘাট সদরের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে ডউকি নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদীর তীর সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁধ এবং বিছনাকান্দি বিজিবি ক্যাম্পের পাশের বাঁধটি ঝুকিপূর্ণ অবস্থা আছে, বসতবাড়ি প্লাবিত হওয়া এবং রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন প্রায় সহস্রাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান। যদিও কৃষি কর্মকর্তার দাবী ফসলি জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ ৫ থেকে ৬শ হেক্টর হতে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রায়হান পারভেজ বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দেয়ায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ৬শ’ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। তবে দুয়েক দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফসলের তেমন একটা ক্ষয়-ক্ষতি হবেনা বলে তিনি জানিয়েছেন।
বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সবকটি ইউনিয়নের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছি। বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।