সত্যজিৎ দাস (স্টাফ রিপোর্টার):
জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন খাতগুলোতে এবার মোট ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি গত বছরের তুলনায় মোট ৯ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা বেশি। গতবার শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে আসন্ন অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষাখাতে বরাদ্দের বিষয়টি তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এ বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন,’২০২২-২৩ অর্থ বছরে শিক্ষা খাতের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের বার এই বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থ বছর এই বরাদ্দ ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ছিল বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী ‘।
প্রসঙ্গত,১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার যেসব খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিল,তার মধ্যে অন্যতম ছিল শিক্ষা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ১৯৭২ সালে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়,যার মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের হিস্যা ছিল ২২ শতাংশ (১৭৩ কোটি টাকা)। ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষানীতি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা হয় সে সময়ে।
উল্লেখ্য যে,২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা,মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে ৩৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগকে ৯ হাজার ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে,যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে ৫ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা এবং শতকরা হিসাবে শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। এবারের বাজেটে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ২১ হাজার ২০৪ কোটি টাকা,তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকাসহ শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে ৯৪ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে কমপক্ষে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা এসেছে, যার সঙ্গে শিক্ষার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য খাতের টাকা বা টাকার অংশ। সুতরাং এই সাড়ে আট হাজার কোটি টাকাকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে ‘শিক্ষা ও প্রযুক্তি’ খাত নাম দিয়ে শতকরা ও টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা মোট বাজেটের ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ বাবদ এককালীন ২০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হবে। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী বছরে ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশের কাছাকাছি থাকছে। অবশ্য শিক্ষা ও প্রযুক্তির বাজেটকে একসঙ্গে দেখানো হয়। তাই শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত মেলালেও এই হারটি দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এসব তথ্য বলছে,টাকার অঙ্কে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়লেও বরাদ্দের হারটি এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে আসেনি।