সত্যজিৎ দাস (স্টাফ রিপোর্টার):
” হায়রে মানুষ,রঙ্গীন ফানুস
দম ফুরাইলেই ঠুস!
তবুতো ভাই কারোরই নাই..
একটুখানি হুশ “
একটানা দশ মাস ধরে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন তিনি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করেও ক্যান্সার নির্মূল হয়নি প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পীর। চিকিৎসক হাল ছেড়ে দেওয়ায় ক্যান্সার নিয়েই ৯ মাস পর ২০২০ সালের ১১ জুন রাজশাহী নগরীর মহিষবাথানে চিকিৎসক বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে ২০২০ সালের ০৬ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় ৬৪ বছর বয়সে হার মানেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ‘এন্ড্রু কিশোর’। আজ তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী। ৩০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে চলচ্চিত্রের অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর;মানুষকে ভাসিয়েছিলেন আবেগের স্রোতে। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পুরেছেন নিজের ঝুলিতে।
কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর রাজশাহী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহীর একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। মায়ের কাছে পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয়েছিল। তাঁর শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে রাজশাহী। তাঁর মাতা ছিলেন সংগীত অনুরাগী ও তাঁর প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে তাঁর সন্তানের নাম রাখেন ‘কিশোর’। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই তিনি সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন। এন্ড্রু কিশোর আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সঙ্গীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কিশোর নজরুল,রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক,লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণিতে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। কিশোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগেও পড়াশোনা করেছেন।
কিশোর ছয় বছর বয়স থেকে সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল, রবীন্দ্র,লোকসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান শাখায় তালিকাভুক্ত হন। চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান ‘মেইল ট্রেন’ (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের “অচিনপুরের রাজকুমারী নেই”। মানুষের সুখ-দুঃখ,হাসি-আনন্দ,প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে পেয়েছে অনন্য মাত্রা। তার শত শত কালজয়ী গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। এরমধ্যে আমার সারা দেহ খেও গো মাটি,হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস, এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না মনসহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান আজও তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তার ভক্তদের হৃদয়ে। সত্তর দশকের শেষ দিকে প্লেব্যাকের জগতে পা রাখেন এ কিশোর। বাংলা ছায়াছবির গানসহ হিন্দি সিনেমায় গান গেয়ে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন এই নন্দিত সংগীত শিল্পী।
এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রের গানে প্রথম সম্মাননা লাভ করেন বড় ভাল লোক ছিল (১৯৮২) চলচ্চিত্রের জন্য। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের গীত ও আলম খানের সুরে “হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস” গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এই গানের জন্য তিনি প্রথমবারের মত শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
জানা গেছে,এন্ড্রু কিশোরের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মস্থান রাজশাহীতে বুধবার(০৬ জুলাই) স্মরণসভার আয়োজন করেছে রাজশাহী প্রেসক্লাব ও জননেতা আতাউর রহমান স্মৃতি পরিষদ। এদিন বিকেল ৪টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট রাজশাহী প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে।