সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন
Notice :
Wellcome to our website...

তাড়াইলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মানববন্ধন

Coder Boss / ২৬৯ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩

আল-মামুন খান, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

তাড়াইল উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের মৌগাঁও গ্রামে মানববন্ধন করছেন ৯ গ্রামের কৃষক ও জেলেরা।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে ফসলি জমি রক্ষা ও প্রস্তাবিত মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ৯টি গ্রামের প্রকৃত কৃষক, শ্রমিক, জেলে সমন্বিত জোটের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে তাড়াইল উপজেলার রাউতি ইউনিয়নের প্রায় হাজারখানেক কৃষক ও জেলে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। কোনোভাবেই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।

মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা বলেন, কার স্বার্থে ও কীভাবে এ বেড়িবাঁধ করা হচ্ছে তাঁরা জানেন না। বেড়িবাঁধ হলে তাদের না খেয়ে মরে যেতে হবে। প্রয়োজনে তারা রক্ত দিতেও প্রস্তুত, তবুও এখানে বেড়িবাঁধ হতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিমুলহাটি ঈদগাহ ব্রিজের উত্তর পার্শ্ব থেকে সুতি নদীর পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে দাউদপুর আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত ৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধের প্রস্তাব জমা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এজেন্সি (জাইকার) তদারকি করবে।

এ দিকে স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাড়াইলের বৃহত্তম শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত ‘নামার হাওর’। শিমুলহাটি গ্রামে সুতি নদী খননের আগে এক ফসল হতো নামার হাওরে। নদীটি খননের পর নামার হাওরের হাজার হাজার একর জমিতে দুই থেকে তিন ফসল হয়। নদীটি খননের কারণে এ হাওরাঞ্চলে স্থায়ী কোনো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না।

৫টি ওয়ার্ডের বিশাল হাওরে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বাস। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, বর্গাচাষি, মৌসুমি জেলে ও প্রকৃত জমির মালিক রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। সম্প্রতি একটি স্বার্থান্বেষী মহল বেড়িবাঁধ ও মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে ৯টি গ্রামের ফসলি জমি নষ্ট করতে চাচ্ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ভূমি অধিগ্রহণ, জাতীয় পানি নীতিমালা ও নদী রক্ষা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সদ্য খননকৃত নদীর তীর ঘেঁষে বাঁধটি হলে, নদী তার পানি প্রবহমানতা হারাবে। যে হাওরে সেচ ও নিষ্কাশনে কোনো ফসলি জমি রক্ষা বাঁধের আদৌ প্রয়োজন নেই, সেখানে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে বৃহত্তর ফসলি হাওর বিনষ্ট করা মানে কৃষক হত্যা, নদী হত্যার নামান্তর।

প্রতিবাদ সমাবেশে কৃষক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিশাল এ হাওরে ৩০ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। এখানে অদ্যাবধি দুটি ফসল হচ্ছে। কারণ জাইকা ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সুতি নদী খনন করেছে। এখন যদি ৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধ হয়, তাহলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। যারা নিজেদের ফায়দার জন্য বেড়িবাঁধ ও মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প করবে তারা ঘরে-ঘরে ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ করাবে।’

রাউতি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন আজম বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জাইকার কাছে যে প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে, তার সভা হয়েছে ২৬টি। অবহিতকরণ সভা, অংশগ্রহণ সভা, অংশীদারত্ব কিংবা বাস্তবায়ন কমিটিতে প্রকৃত জমির মালিকদের অত্যন্ত সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে ওই প্রভাবশালী মহল। কারণ তারা জানে প্রকৃত জমির মালিকদের ডাকলে প্রথমেই বাঁধার মুখে পড়বে তারা।’

কৃষক জাহাঙ্গীর হাসান ভূইয়া বলেন, ‘আমরা ফসলি জমি বিনষ্ট হতে দেব না। প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিভিন্ন অংশগ্রহণ, সুবিধা ভোগী ও বাস্তবায়ন কমিটিতে ভাড়াটে, ভুয়া কৃষকদের নাম সংবলিত করেছে। যারা ভিন্ন গ্রামের ভিন্ন ভিন্ন আজ্ঞাবহ লোক। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৯টি গ্রামের মানুষ সর্বস্বান্ত ও বেকার হয়ে পড়বে। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা হবে স্থায়ী বেকার। হাওরে অবস্থিত দাউদপুর, নওগাঁ, মৌগাও এবং মেছগাঁও এর ৪টি সরকারি আবাসন প্রকল্পের বসবাসরত ৪০০টি পরিবার কোথায় যাবে? যারা হাওরে শ্রমভিত্তিক জীবনযাপন করে। তাদের জন্যও এটা মরণফাঁদ। এ কারণে গত ৩১ জুলাই আমরা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রকল্পটি বাতিলের আবেদন করেছি।’

জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আহমেদ উল্লাহ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাঁধ বাস্তবায়ন হলে এই এলাকার কয়েক হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এলাকায় নতুন করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটি আমাদের না। অন্য কোনো সংস্থা কাজটি করছে।’

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন দিয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে জাইকা থেকে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি ফিজিবিলিটি রিপোর্ট প্রাপ্তির পর প্রকল্পটি জনগণের উপকারে আসবে, বিধায় এটি গ্রহণ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্প বাতিলের দাবিতে তাঁদের আবেদন আমি পেয়েছি। আবেদনের যৌক্তিকতা কী, তা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ

Registration Form

[user_registration_form id=”154″]

পুরাতন সংবাদ দেখুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  

বিভাগের খবর দেখুন