বিশেষ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চা বাগানগুলোতে কিশোরীদের মাঝে বৃদ্ধি পেয়েছে ফুটবল চর্চা। চা বাগান এলাকায় প্রতিষ্ঠিত তাহের সামছুন্নাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখাও করছে তারা। ফুটবলে নারীদের এই এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ইনার হুইল ক্লাব অব হবিগঞ্জ। সোমবার বিকেলে তাহের সামছন্নাহার উচ্চ বিদ্যায়ে ওই ক্লাবের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয়েছে জার্সি এবং ফুটবল। পিংক ফাস্ট শ্লোগান সম্বলিত এই জার্সি গায়েই চা কণ্যারা এবার হবিগঞ্জ,সিলেট তথা ঢাকায় মাঠ মাতাবে তারা।
কিন্তু দুটি পাতার একটি কুঁড়ির মাঝে দুঃখ-গাঁথার মধ্যেই জন্ম কৃতী ফুটবলার সুরভী রায়ের। চা বাগানের সবুজের মাঝে সবুজের মতোই তার কিশোরী জীবন। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল বড় ফুটবলার হওয়ার। কিন্তু আশা জাগিয়েও আবার নিভে যাচ্ছে প্রদীপ। অর্থকষ্ট আর সঠিক নার্সিংয়ের অভাবে প্রস্ফুটিত ফুল ঝরে পড়ে যাচ্ছিলো।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বেগমখান চা বাগানের চা কন্যা সুরভী রায়। পাওয়া না পাওয়ার যাতনার মধ্যেই সুরভী দেখিয়েছে কিভাবে অভাবনীয় কষ্টের মাঝেও নিজের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলতে হয়।
বাগানের সূর্য কুমার রায়ের একমাত্র কন্যা সুরভী রায়। দুর্দান্ত ফুটবলারের পাশাপাশি দুর্দান্ত একজন বাইকার। সে ছোটবেলা থেকেই সকাল বিকাল ফুটবল মাঠে খেলা করত। মেয়ে খেলোয়াড় তখন বেশি না থাকলেও সে ছেলেদের সঙ্গেই ফুটবল খেলত।
সুরভী চা বাগান এলাকাতে ২০১৬ থেকে টানা দুই বছর সে FIVDB ক্লাব আয়োজিত খেলায় অংশগ্রহণ করে এবং সেখানে ম্যান অব দ্য ম্যাচের শিরোপা অর্জন করে। ক্লাস সেভেনে পড়াকালীন স্কুলের ফুটবল খেলার পাশাপাশি সব ধরনের খেলাতে অংশগ্রহণ করে সে। সব খেলা থেকে তার অর্জনও অনেক। পেয়েছে অসংখ্য ট্রফি আর মূল্যবান সার্টিফিকেট।
স্কুলের ৪৬তম গ্রীষ্মকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসার ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ২০১৭ সালে সিলেট বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় সুরভীর বিদ্যালয় তাহের শামছুননাহার উচ্চ বিদ্যালয়। সে বছর আঞ্চলিক পর্যায়েও কুমিল্লায় রানারআপ হয়েছিল তারা।
২০১৯ সালে প্রথম বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট (অনূর্ধ্ব-১৬) টুর্নামেন্টে সুরভী উপজেলা এবং জেলা টিমের অধিনায়ক ছিল এবং সেই টুর্নামেন্টে তার দল উপজেলা চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই সঙ্গে সুরভী ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করে। একই টুর্নামেন্টে সিলেটে বিভাগীয় পর্যায়ে তার দলই সিলেট বিভাগ রানারআপ হয় এবং সে জিতে নেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপে খেলাধুলায় ভাটা পড়লেও সে নিয়মিত বাড়ির উঠোনে কিংবা পাশের মাঠে চর্চা চালিয়ে যায়। করোনা পরবর্তীতে ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসে সুরভী বিকেএসপি ক্লাবে যোগদান করে ৬ মাস প্রশিক্ষণ করে এখন নিজ বাসায় রয়েছে।
সুরভীর বাবা সূর্য রায় মেয়েকে বাইক চালানো থেকে শুরু করে সব রকমের খেলাধুলায় এবং কাজে উৎসাহ দিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যেই সে হবিগঞ্জ ছাড়িয়ে সিলেট বিভাগের একজন দুর্দান্ত ও সেরা ফুটবলার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। কিন্তু পর্যাপ্ত নার্সিং এবং খেলার উপকরণের অভাবে সম্প্রতি সে খেলাধুলায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
তার পিতা সূর্য রায় জানান,” ইচ্ছা ছিল মেয়েকে বড় ফুটবলার হিসেবে তৈরি করব,বিকেএসপিতে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে এখন বাসায় রয়েছে। তাকে আমি ভালো ক্লাবে সুযোগ তৈরি করে দিতে পারছি না।
সুরভীর খেলার আলাদা একটা নৈপূন্য রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( বিকেএসপির শিক্ষার্থী)। চুনারুঘাট উপজেলা হয়ে অনেক বিজয় এনে দিয়েছে সুরভী। সে হবিগঞ্জ জেলা দলের অধিনায়কও পাশাপাশি সিলেট বিভাগীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছে সৌরভি। তার রয়েছে অংশক্ষ ক্রীড়া পুরস্কার। বর্তমানে সে স্বপ্নচূড়া স্পোর্টিং ক্লাব হয়ে নিয়মিত খেলছে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন এমপি ব্যারিস্টার সুমন।
ফুটবলার সুরভী রায় বলেন,” মাঝে মাঝে সে সুরমা চা বাগানে একা একা প্র্যাকটিস করে। কিন্তু এখন স্বপ্নছুড়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলে অন্যরকম এক ভালো লাগা ভিতরে কাজ করে। তার ইচ্ছা সে একদিন দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলবে “।
সিলেট নিউজ/এসডি.