মারুফ তালুকদার বালাগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
হায় বিদায় ! এ কোন বিদায় ! চির বিদায় । হাজার হাজার ভক্ত, মুহিব্বিন আর মুরিদানদের কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন আমাদের সর্বজন শ্রদ্বেয় প্রখ্যাত পীরে কামিল আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটি ছাহেব। ভালোবাসার অশ্রুজলে আনুষ্ঠানিকভাবে এত বড় বিদায় দেয়ার দৃশ্য আর কখনো দেখিনি । এ রকম বিদায়ের আরেকটি দৃশ্য আমাদের চোখে ভাসে । মনে আছে সে দিনের কথা ! আমাদের সবার মনে আছে। আধ্যাত্মিক জামানার শ্রেষ্ঠ বুজুগর্ শামসুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ) এর বিদায়ের দৃশ্য। আজ ও এক অবিস্মরণীয় জানাজা দেখলাম। মানুষ আর মানুষ । যে দিকে দেখি শুধু মানুষ আর মানুষ । বেহিসাব মানুষ । ভক্ত মুরিদান। ভালোবাসার মানুষজন। শেষ বারের মত একবার শুধু দেখতে চায়।
গাড়ি আর গাড়ি । মানুষ ভর্তি গাড়ি । সবার গন্তব্য জকিগঞ্জের বালাউট আর ফুলতলী। জানাযায় অংশ নিতে জকিগঞ্জের দিকে রওয়ানা হওয়া গাড়ির দৃশ্য আমরা দেখেছি। আজ ভোর থেকে বালাউট গ্রামে বাড়তে থাকে প্রেমিক আর ভক্তগনের উপস্থিতি। সময় বাড়ার সাথে সাথে প্রিয় ছাহেবকে আশেকানরা শেষ বারের মত একনজর দেখতে ভীড় জমান বাড়ীতে। জুম্মার নামাজের পর বালাউটি ছাহেবের মরদেহ নিয়ে আসা হয় হ্যালিপেড মাঠে। অসংখ্য মানুষের পদচারণায় বন্ধ ছিলো আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। হ্যালিপ্যাড মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ার পর লোকজন প্রখর রোদ উপক্ষো করে সড়কে দাঁড়িয়ে জানাযার নামাজ আদায় করেন।
জানাযার নামাজের পূর্বে আল্লামা বালাউটি ছাহেবের জীবন ও কর্মের উপর স্মৃতি চারণ এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করে অনুভূতি প্রকাশ করেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদসহ আলিম উলামা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জানাযার নামাজের ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছাহেব জাদা মুফতি মাওলানা উবায়দুর রহমান।
আমাদের একজন অভিভাবক হিসেবে বালাউটি ছাহেবকে কে খুব কাছ থেকে দেখেছি। প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে নামাজ কালাম শেষ করে মানুষের খেদমতে হাজির হতেন। নিস্বার্তভাবে খেদমত করতেন মানুষের। বাহ্যিকভাবে খেদমতের পাশাপাশি তিনি আধ্যাত্মিকভাবে ও খেদমত করেছেন মানুষের। তিনি কারো কাছে বদলা চাইতেন না, বদলা চাইতেন আল্লাহর কাছে। এই দিনে দোয়া করি মহান আল্লাহ, আপনি আমাদের প্রিয় ছাহেব কে অনেক বড় বদলা দান করুন ।
মনে আছে এইতো সেই দিন দেখা ক’রে দুয়া নিতে গিয়েছিলাম সিলেটের উপশহরস্থ বাসায়। পরীক্ষা আর সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের জন্য দোয়া । মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া দিয়েছিলেন তিনি। কে জানে এটাই ছিল শেষ দেখা। আজ চমকে যাওয়ার মতো মানুষ দেখেছি। মহান আল্লাহর কাছে পরকালীন মঙ্গল কামনা করছি।।
লেখক
বদরুল আলম