জানাগেছে, রাজবাড়ি খেলার মাঠ সংলগ্ন জনবসতিপুর্ন একটি আবাসিক এলাকা। এখানে অন্ত্মত শতাধিক পরিবার তাদের ছেলে-সন্ত্মান নিয়ে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন। এখানে একটি সরকারী দাখিল মাদ্রাসা, মসজিদ,বে-সরকারী প্রাইমারী স্কুল এবং সরকারী ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টার রয়েছে। সারা দেশের মত করোনা ভাইরাস জনিত রোগের কারনে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন বিগত এপ্রিল মাসে উপজেলা সদরের সাপ্তাহিক হাট-বাজার সাময়িক ভাবে রাজবাড়ি খেলার মাঠে স্থানান্তরিত করে শুধুমাত্র শাক-সবজি ও মাছ ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য। অন্তত দেড় মাস এখানে সাপ্তাহিক হাট-বাজার পরিচালিত হয়েছিল। পরবর্তীতে হাট-বাজার নিয়মিত সরকারী জায়গায় আবার স্থানান্তরিত করা হয়। হাট-বাজার ইজারাদার আবু বক্কর সিদ্দিক ও তার দলবল নিয়ে মে মাস থেকে অন্ত্মত বিগত তিন মাস যাবৎ এখনও চলমান জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠে নিয়মিত ভাবে সাপ্তাহিক পশুর-হাট হিসাবে ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠ ব্যবহার করে আসছে। মাঠের এক পাশে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে পশুর-হাট পরিচালনা করা হচ্ছে। হাট-বাজারের দিনে রাজবাড়ি আবাসিক এলাকার এই ছোট রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন রকমের যানবাহন চলাচল করার ফলে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে অনেকটা ভাঙ্গন ও গর্ত দেখা দিয়েছে। মাঠের পার্শ্ববর্তী বসবাসরত জনসাধারণও যাতায়াতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাগণ এবং ক্রীড়া সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিগনের মধ্যে নানা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গত ২২ জুলাই বুধবার দুপুর ১২টায় স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলা উদ্দিন হাঠাৎ করে বাসায় অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এ সময় পরিবারের লোকজন জরম্নরী ভিত্তিতে এ্যাম্বলেন্স নিয়ে আসা হলে মাঠের রাস্তা দখল করে পশুর-হাট পরিচালনা ও ব্যবসা প্রতিষ্টান স্থাপন করায় গাড়ী প্রবেশ করতে পারে নাই। বাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় অন্তত দেড় ঘন্টা সময় অপেক্ষার পর এলাকার কয়েকজন যুবক কাদে করে অসুস্থ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলা উদ্দিন কে গাড়ীতে তোলেন। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে পথে রাস্তায় তিনি মারা যান। এই ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্ধাগণ এবং এলাকার সচেতন মহলের মধ্যে নানা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
খেলার মাঠে পশুর-হাট বসা-কে কেন্দ্র করে ইজারাদার এবং স্থানীয় যুব সমাজের মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ২৪ জুলাই শুক্রবার বাদ জুমা জৈন্তাপুর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মহলস্নার বাসির পক্ষে থেকে মাঠ থেকে পশুর-হাট বন্ধ করার বিষয়ে এক বৈঠকের আহবান করা হয়েছে।
উপজেলা সদরের একমাত্র খেলার মাঠ হওয়ায় স্থানীয় যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ এবং প্রতিবেশি পরিবারের ছোট বড় ছেলে-মেয়েরা প্রতিদিন বিকেল বেলায় মাঠে ফুটবল সহ নানা খেলাধুলা করে থাকেন। জৈন্ত্মাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠে নিয়মিত পশুরহাট পরিচালিত হওয়ার বৃষ্টিপাতের মাঝে মাঠে ব্যাপক জ্বলাবদ্ধতা সৃষ্টি ও কাদাযুক্ত হয়ে পড়েছে। গরম্ন চলাচল করায় মাঠের পশ্চিম পাশের রাস্তা অনেকটা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় জৈন্ত্মাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠ থেকে পশুরহাট বন্ধ করতে এলাকার সচেতন মহল দাবী জানান। স্থানীয় বাসিন্দা বিশিষ্ট সমাজসেবী ফরিদ উদ্দিন আহমদ ও হাসিনুল হক হুসনু জানান, স্থানীয় বাসিন্দাগনের চলাচলের কথা বিবেচনা করে জরম্নরী ভিত্তিতে জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠ থেকে অবৈধ পশুর-হাট বন্ধ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার নাহিদা পারভীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত্মে জৈন্তাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠে পশুর-হাট বসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। অপরদিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারুক আহমদ জানান, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী রাজবাড়ি খেলার মাঠে পশুর-হাট বসানো হয়েছে। এদিকে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়,স্থানীয় সরকার বিভাগ (প্রশাসন-১ শাখা)’র গত ১২ এপ্রিল ২০২০ইং তারিখের ৩৯৭নং স্মারকের পরিপত্রে দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় গ্রামীণ-হাট বাজার স্থানান্তর সংক্রান্ত পত্রে শুুধমাত্র কাচাবাজার গুলো খেলার মাঠে অথবা খোলা জায়গা স্থানান্তর করার নির্দেশনা রয়েছে। অন্যদিকে ৮ এপ্রিল সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসক সিলেটের কার্যালয়ের স্মারক নং-২০,১৩ (কোভিড-১৯ সেল) থেকে জারী করা বিজ্ঞপ্তি’র নীচে আন্ডার লাইন করে বলা হয়েছে সাপ্তাহিক হাট,গরুর হাটসহ অন্যান্য হাট-বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য নয় এমন দোকানপাট ও বাজার বন্ধ থাকবে। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদের্শ অমান্যকারীদের বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তাহলে জৈন্ত্মাপুর প্রশাসন ঐতিহাসিক রাজবাড়ি খেলার মাঠ কার স্বার্থে? বিগত ৩ মাস থেকে অবৈধ পশুর-হাট পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছেন এ নিয়ে উপজেলার সচেতন জনগন প্রশ্ন তুলেছেন। জৈন্ত্মাপুর রাজবাড়ি খেলার মাঠ থেকে অবৈধ পশুর-হাট বন্ধ সহ এই বিষয়টি সর্ম্পকে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো: মশিউর রহমান ও সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম কে অবগত করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ জানান, আমি অতীতে রাজবাড়ি খেলার মাঠে পশুর-হাট বসার পক্ষে ছিলাম না। উপজেলা সদরের একমাত্র খেলাধুলা বিনোদনের মাঠ, এখানে অবৈধ পশুর-হাট পরিচালনার পক্ষে আমি একমত নয়।
জৈন্তাপুর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও নিজপাট ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মো: ইয়াহিয়া জানান, গত সমন্বয় সভায় কোরবানী উপলক্ষে একদিন মাঠে পশুরহাট স্থাপন করা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিন মাস থেকে খেলার মাঠে অবৈধ ভাবে পশুর-হাট পরিচালনা করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন বিষয়টি তার জানা নেই।