✍️ মহুয়া চক্রবর্তী।
সত্যজিৎ দাস,বাহুবল,প্রতিনিধি:
পথেই এদের জন্ম, রোদ বৃষ্টি ঝড়ে রাস্তার মোড়ে আবর্জনার মধ্যে খাবার খুঁজে বেড়ায় কিছু অভাগা মানুষ। ছন্নছাড়া ওদের জীবন। পথের ঐ রাস্তার মোড় টাই ওদের ঠিকানা। যেতে আসতে সবার কাছে পয়সা চাই তো । কোলে একটা ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকতো। নির্মম পরিহাসের জীবন ওদের।
সেদিন ছিল খোকার জন্মদিন, মায়ের তাই সাধ হয়েছে খোকাকে একটু পরমান্ন খাওয়ানোর। কিন্তু বিধাতা তো সেই দিন কোনদিনও দেয়নি। বহুদিন হয়ে গেছে অন্নের সাধ ভুলে গেছে । আর সেখানে পরমান্ন সে তো শুধুই নিছক স্বপ্ন। কিন্তু মায়ের মন ইচ্ছে তো হয় তার সন্তানের মুখে কিছু তুলে দিতে।
আজ সে গিয়েছিল পাশের পাড়ার মিত্তির বাড়ির দুয়ারে দুটো ভাতের আশায়। যদি খোকার মুখে আজ দিতে পারে সেই ভেবে।
গিয়ে বলল – ও বউ জানো আজ আমার খোকার জন্মদিন। সেই ঝড় জলের রাতে ও এসেছিল আমার কাছে, আজ বড় সাধ হয়েছে খোকাকে একটু ভাত দেবো মুখে। দাও না গো দুটো ভাত, তোমরা তো তোমার বাড়ির পোষা কুকুরকে কতকি দাও রোজ।
আজ আমার খোকার শুকনো ভাত টাই যে হবে মহাভোজ।
কিন্তু দিল না জানো, দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল, মায়ের মন খোকার জন্য দ্বারে দ্বারে অন্য খুঁজে চলেছে সারাক্ষণ।
ওরে তোদের তো অনেক আছে
আরো অনেক হবে।
একমুঠো দিবি শুধু আর কিছু চাইনে।
দ্বারে দ্বারে আজ বেড়াই ঘুরে
মুখ তুলে কেউ চাইলে নেই।
লক্ষ্মী তোদের সদয় হোন
ধনের ওপর বাড়ুক ধন।
আমি এক মুঠো অন্ন চাই গো
তাও কেন পাইনে।।
অবশেষে এক গৃহস্থবাড়িতে পেল এক মুঠো অন্ন।
মায়ের মুখে সে এক উজ্জ্বল হাসি, দুহাত তুলে তাকে বলল – তুমি যে মা অন্নপূর্ণা । সদা তোমার সংসার হোক পূর্ণ।
খোকাকে এসে মা বলল – খোকা আজ তোর জন্মদিন। খোকা তার মাকে শুধায়, জন্মদিন কি মা ? সেটা আবার কি ? ওরে আজকের দিনে তুই এই অভাগা মায়ের কাছে এসেছিলি আমার কোল আলো করে। কিন্তু তোকে দিতে পারিনি কিছুই। দু’মুঠো ভাত তোর মুখে দিতে পারিনি বহুদিন। তার স্বাদ কেমন মনেও পড়ে না।
কিন্তু দুচোখ ভরে আছে শুধুই স্বপ্ন।
আমার খোকা ও একদিন বড় হবে। অনেক পড়াশোনা শিখবে ওই মোটা মোটা বই পড়বে ।দুবেলা দুমুঠো পেট ভরে ভাত খাবে। অনেক বড় মানুষ হবে। আমাদের মত রাস্তায় পড়ে আছে কত অসহায় শিশু তাদেরকে একদিন পড়াশোনা শেখাবে। মানুষের মত মানুষ হবে সে।
মা তো শুধু মা ই হয়। মায়ের কোন জাত নেই।
পৃথিবীতে একমাত্র নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বাসে শুধুই মা। যার কোন বিকল্প হয় না।